বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সভ্যতা ও ভৌগোলিক অবস্থানের বিচারে ইসলাম এসেছে একটি পশ্চাৎপদ সমাজে। নবীজি (সা.) সেই আরবদেরই পরিণত করেছেন পৃথিবীর উন্নত জাতিতে। মানব ইতিহাসে তিনিই প্রথম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা পেশ করেছেন, যা আত্মিক ও বস্তুগত উভয় দিক থেকে মানুষের সংকটমুক্তির দায়িত্ব নিয়েছে। ইসলাম পৃথিবীর সেই একক ও বৃহত্তম ধর্ম, যা নিঃস্ব ও দরিদ্র জীবনের মাঝে মর্যাদা ও তাৎপর্য দান করেছে। ইসলাম বিভিন্ন গোত্রের মানুষকে পরস্পরে ভাইয়ের মতো থাকার এবং বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার শিক্ষা দিয়েছে। ইসলাম মানব পৃথিবীতে একটি উন্নত সভ্যতা দান করেছে, যার ফলশ্রুতিতে ইসলামী সমাজের রূপ সামনে এসেছে। সে সমাজে মুসলমানদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের অনুসারীরাও সৃজনশীলতা ও পরিতৃপ্তির সঙ্গে জীবন অতিবাহিত করেছেন। ইসলাম তার অবস্থার প্রাচুর্য দিয়ে বিত্তবান বানিয়েছে পুরো পৃথিবীকে।
ইসলামী সমাজব্যবস্থার পরিধি অনেক বিস্তৃত। যে সমাজে ইসলামের সভ্যতা ও শরীয়তের প্রয়োগ হয় এবং কুরআন ও সুন্নতের অনুসরণ করা হয় সেটিই ইসলামী সমাজরূপে গণ্য। ওই সমাজের বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে: ক) মানবজাতির ঐক্য খ) কল্যাণের বিকাশ ও মন্দের দ্বার রুদ্ধকরণ, গ) মানবচিন্তার ঐক্য, ঘ) মানবতার সম্মান, ঙ) সমতা, চ) রাসূলের আনুগত্য।
আজ পৃথিবীতে যে ধর্ম ও কর্মসূচির প্রয়োজন সে’টি হচ্ছে আলোকজ্জ্বল দ্বীন-ইসলাম। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নবুওয়্যত ও তাঁর সীরাত গোটা মানবজাতির জন্য একটি সমন্বিত সম্পদ। এখানে সবারই ভাগ রয়েছে। আল্লাহ তা’আলার সব বস্তুগত নেয়ামত যেমন সব মানুষের জন্য অবারিত, ঠিক তেমনই এই রূহানী নেয়ামতও সকল মাখলুকের জন্য উন্মুক্ত।
নবীয়ে আখেরুযযামান সম্পর্কে কুরআনে কারীমে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি আপনাকে গোটা সৃষ্টি জগতের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি’। আরেক জায়গায় আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন, ‘আপনি বলে দিন পবিত্র সেই সত্তা যিনি হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্যকারী কুরআন নিজ বান্দার ওপর অবতীর্ণ করেছেন, যেন তিনি সব মানুষকে শেষ পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করতে পারেন’।
আমরা সবাই রাসূলে আকরামের উম্মত। তিনি আমাদের কাছে বার্তা পৌঁছিয়েছেন বন্ধুত্ব, সহিষ্ণুতা, মানুষের সম্মাননা, নিরাপদ সহাবস্থান, পক্ষপাতমুক্ততা এবং শান্তি ও নিরাপত্তার। নিরাপত্তা, সৌজন্য ও শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আমাদের দায়িত্ব হলো, এই সীরাতে তাইয়্যিবার প্রসার ঘটানো। নিজেরাও উসওয়ায়ে হাসানা বা উত্তম আদর্শ গ্রহণ করি এবং অন্যদেরও এর প্রতি উৎসাহিত করি। নবীজির সীরাত ও তাঁর শিক্ষা আমাদেরকে এমন একটি সমাজ গড়তে অনুপ্রাণিত করে, যে সমাজের প্রতিটি সদস্য হয়ে উঠে সৎ মানুষ। এমন সৎ মানুষ, যার গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে সূরায়ে আসরে।
ইসলামের তত্ত্বগত দর্শন সম্পর্কে সমাজের প্রতিটি সদস্যের অন্তরে থাকতে হবে দৃঢ় বিশ্বাস। মানুষকে পুরা করতে হবে আল্লাহ তা’আলার বন্দেগীর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। খেলাফতব্যবস্থা দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রতিটি মুহূর্তে অনুভূতি জাগ্রত থাকতে হবে আল্লাহর আনুগত্য, সুন্নাতের অনুসরণ, তাকওয়া অবলম্বন এবং আখেরাতের জবাবদিহি সম্পর্কে। হেদায়েতের উলূম তথা দ্বীনি ইলমের চর্চা থাকতে হবে।
পাশাপাশি চলতে হবে বৈষয়িক, আর্থিক ও বিজ্ঞান বিষয়ক জ্ঞানের চর্চা। দিতে হবে মানুষের শৈল্পিক ও পেশাভিত্তিক মেধা বিকাশের সুযোগ। যেন সে হালাল জীবিকা অর্জন করতে পারে। মানুষের অন্তরে, চরিত্রে ও জীবনে শুদ্ধি আনতে হবে। মানুষ যেন সত্যের আহ্বানকারী ও কল্যাণ কাজের সঞ্চালক হয় সে উদ্যোগ নিতে হবে। চেষ্টা করতে হবে তাদেরকে পরিশ্রম ও কষ্ট-সহিষ্ণুতায় অভ্যস্ত করতে, ধৈর্য্য ও বরদাশত-যোগ্যতা অর্জন করতে এবং আত্মমর্যাদা ও আত্মপ্রত্যয়ে বলিয়ান করতে। সর্বোপরি মানুষের মাঝে সময় ও নিয়মানুবর্তিতার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এই সব ভিত্তির ওপরই একটি আদর্শ সমাজের কাঠামো গড়ে তুলেছিলেন। এ সমাজই পৃথিবীর সব সমাজের ওপর সর্বাত্মক প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়েছিল। তাই বর্তমান যুগেও একটি আদর্শ সমাজের রূপায়ন সম্ভব হবে যখন আমরা মানবতার ত্রাণকর্তা হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর শিক্ষা ও সীরাতকে জীবনোপায় বা কর্মপন্থা হিসেবে গ্রহণ করে নেব। যখন তাঁকে অনুসরণ করব। এতেই রয়েছে মানবতার মুক্তি। এটিই কল্যাণ ও সাফল্যের অব্যর্থ মন্ত্র।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।