Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৭ জুন ২০২৪, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কোন দিকে যাবে বিশ্ব অর্থনীতি

| প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতির মোড় ঘুরে গেছে বলে বলা যেতে পারে। এ বছর ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের সরে আসার সিদ্ধান্ত, অর্থাৎ ব্রেক্সিটের বিপর্যয় এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সেই সঙ্গে তেলের দাম নিয়ে রপ্তানিকারক দেশগুলো গত ১৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো একটি সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছাতে পেরেছে এ বছরই। এর সাথে আগামী সময়ের জন্য প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক খাতে চিন্তার বিষয় হিসাবে যুক্ত হচ্ছে সাইবার হ্যাকিং। এ অবস্থায় আগামী দিনগুলোতে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা কোন দিকে মোড় নেবে তা নিয়ে ভাবনায় রয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
সাইবার হ্যাকিং : ২০১৬ সালে প্রায় পুরোটা সময়ে বিশ্বে আলোচনার বিষয় হয়ে ছিল সাইবার হ্যাকিংয়ের ঘটনা। ফেব্রুয়ারিতে নিউইয়র্কের রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে সাইবার হ্যাকাররা। এই পরিমাণ অর্থ ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের চারটি হিসাব দিয়ে চলে যায় দেশটির ক্যাসিনোতে (জুয়া খেলার স্থান), যা সাইবার হ্যাকিংয়ের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত ঘটনা হিসেবে ধরা হচ্ছে। এ ছাড়া হ্যাকিংয়ে ঘটনা ঘটে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও।
তেলের বাজার : অন্যদিকে, দুই বছর ধরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমছে। দাম কমার কারণে বিপাকে পড়েছে রপ্তানিকারক দেশগুলো। তাই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর লক্ষ্যে উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় ওপেক-বহির্ভূত ১১টি দেশ। গত ডিসেম্বরে ভিয়েনায় তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের প্রধান কার্যালয়ে এক বৈঠক থেকে এ সিদ্ধান্ত আসে। বৈঠকে প্রতিদিন ৫ লাখ ৫৮ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন কমাতে সম্মত হয়েছে রাশিয়া। এর আগে নভেম্বর মাসে দাম বাড়ানোর লক্ষ্যে তেল উত্তোলন কমাতে চূড়ান্তভাবে সম্মত হয় ওপেক। গত ১৫ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম তেল উত্তোলন কমানোর বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে একটি বৈশ্বিক চুক্তি হলো।
ব্রেক্সিট বিপর্যয় : গত ২৩ জুন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের সরে আসার বিষয়ে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদের পক্ষেই রায় দেন ব্রিটিশরা। যুক্তরাজ্যের বিদায়ের সিদ্ধান্ত ৬০ বছরের পুরোনো প্রভাবশালী আঞ্চলিক জোট ইইউকে একটি বড় ধরনের ধাক্কা দেয়। গণভোটের ফলাফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায় বিশ্ব অর্থনীতিতে। বিশ্বজুড়ে অর্থবাজার ও বাণিজ্যক্ষেত্রে ধস নামে। ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিংয়ের দাম নেমে আসে ১৯৮৫ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। গণভোটের পর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন ডেভিড ক্যামেরন। যুক্তরাজ্যের ৭৬তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন থেরেসা মে।
ট্রাম্পের উত্থান  : যুক্তরৃাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছেন ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারণায় বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি এবং তার নীতি ঘোষণা করে বিশ্বজুড়েই বিতর্কের জন্ম দেন তিনি। নির্বাচিত হওয়ার পর পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করা হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। ট্রাম্পের এসব ঘোষণায় বাংলাদেশসহ বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প যেসব বিবৃতি দিয়েছেন, বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত নীতি ও কর্মকা-ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আগামী ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
ভারতের কালো টাকা : এদিকে, গত ৮ জুন কালোটাকা ঠেকাতে ৫০০ ও ১০০০ হাজার রুপির নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় ভারতে নরেন্দ্র মোদির সরকার। মোদির এক ঘোষণায় অচল হয়ে যায় ১৫ দশমিক ৪ লাখ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ৫০০ ও ১০০০ হাজার রুপির নোট। নোট বাতিলের আচমকা এ সিদ্ধান্তে দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। তবে কালোটাকাও পাওয়া যায়। রুপি বাতিলের পর দেশটিতে দেড় মাসে তিন হাজার কোটি রুপির কালোটাকা (ব্ল্যাক মানি) শনাক্ত করা হয়। ভারতের আয়কর বিভাগ সারা দেশে অভিযান চালিয়ে এ অপ্রদর্শিত অর্থের হদিস পায়। একটি সূত্র জানায়, ভারতের পাঞ্জাবের অমৃতসরে একটি ব্যাংকের শাখায় কাচের দরজায় একটি নোটিশ সাঁটানো হয়েছে, যাতে লেখা রয়েছে ‘নগদ অর্থ শেষ’। তবু এর সামনে অপেক্ষা করছেন অনেক গ্রাহক। এএফপি, রয়টার্স, ওয়েবসাইট।

বিশ্ব অর্থনীতিকে আশ^স্ত
করছে চীনের প্রবৃদ্ধি
ইনকিলাব ডেস্ক :  চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুর্বল ও সঙ্কটপূর্ণ বিশ^ অর্থনীতির প্রতিফলন। এ বছর দেশটির অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৫ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশে পৌঁছবে। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া সোমবার জানায়, বৈশি^ক অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও এ প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে। তবে বৈশি^ক মন্দাকে চীন তার প্রবৃদ্ধি দিয়ে সাহায়তা করতে পারে। এবছর ইউয়ানের ব্যাপক মূল্যহ্রাস হয়েছে এবং বিশ^ বাজারে চীনা অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়েছে। গত নভেম্বরে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় ইউয়ান দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে ২০১৭ সালে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জন চীনের জন্য সহজ হবে। এর আগে খবরে বলা হয়েছিল, চীন তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৫ শতাংশ নির্ধারণ করতে পারে, যা এখনো বড় বড় অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর চেয়ে বেশি। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হলেও ৮ শতাংশ বা তার কাছাকাছি থেকে একটা দীর্ঘসময় ধরে প্রবৃদ্ধি বার্ষিক ১১ থেকে ১৩ বা তারও বেশি শতাংশ অব্যাহত রয়েছে। চীন হচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ রপ্তানিকারক দেশ। বিগত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা চলাকালে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ চীন ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের অনেক দেশকে বিশাল অর্থনীতির ধস থেকে উদ্ধার করেছে। রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ