Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

২০ জানুয়ারির অপেক্ষায় নেতানিয়াহু

| প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপন বন্ধের প্রস্তাবে নিরাপত্তা পরিষদে ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান না নেয়ায় দেশটির তোপের মুখে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এ ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো না দেওয়াকে লজ্জাজনক সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করে এর নিন্দা জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ওবামা প্রশাসনের কঠোর সমালোচনাও করেছেন তিনি। তবে ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন কট্টর ইসরাইলপন্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে তখন যে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার থাকবে ট্রাম্পের হাতেই। কিন্তু এ মুহূর্তে আশঙ্কা করা হচ্ছে ইসরাইলকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮ বিলিয়ন ডলারের একটি সামরিক সহায়তার প্যাকেজ নিয়ে। চতুর্থ মেয়াদে এ চুক্তি নবায়নে ডানপন্থী ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যন্ত্রণাদায়ক পরাজয়ের মুখোমুখি হচ্ছেন নেতানিয়াহু। এমন চিন্তা এরইমধ্যে অনেক ইসরায়েলির মনে গেথে গেছে। তারা মনে করছেন, তাদের দেশ এবং ফিলিস্তিনের প্রতি তাদের নীতি দুনিয়াজুড়ে ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় নিজের সমর্থকদের জড়ো করতে চাইছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। তাদের কাছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বসতি স্থাপনবিরোধী প্রস্তাবকে পুরো জেরুজালেমের ওপর ইসরাইলের দাবিকৃত সার্বভৌমত্বকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থাপন করতে চান তিনি। ওয়েস্টার্ন ওয়ালে হানুক্কা হলিডের সফর সমালোচনার মুখে পড়েছে। এই ওয়েস্টার্ন ওয়াল ইহুদিদের পবিত্র স্থাপনাগুলোর একটি। এর অবস্থান পূর্বাঞ্চলীয় সেক্টরে জেরুজালেমের প্রাচীন শহরে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর পশ্চিম তীরের সঙ্গে এটিরও দখল নেয় ইসরাইল। ইসরায়েলিদের সর্বসম্মতভাবে এ ব্যাপারে একমত যে, পুরো জেরুজালেমই ইসরাইল রাষ্ট্রের রাজধানী। এমনকি এ ব্যাপারে তারাও একমত; পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনে নেতানিয়াহুর সমর্থনের ব্যাপারে যাদের মধ্যে সন্দেহ-সংশয় রয়েছে। পূর্ব জেরুজালেমকে নিজেদের রাজধানী দাবি করেন ফিলিস্তিনিরা। ইতোপূর্বে ওয়াশিংটন এটা স্বীকার করে নিয়েছে যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, ভবিষ্যৎ শান্তি আলোচনার মাধ্যমেই জেরুজালেম শহরের স্ট্যাটাস নির্ধারিত হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য কয়েক দশক ধরে চলে আসা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের বিপরীত প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি ইসরাইলের মার্কিন দূতাবাস তেল আবিবের বদলে জেরুজালেমে স্থানান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন।
জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী, অধিকাংশ দেশই ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকে বেআইনি বলে মনে করে। এমনকি ওয়াশিংটনও এটাকে অবৈধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে ইসরায়েলি শহরগুলোর উল্লেখ রয়েছে। নিরাপত্তা উদ্বেগের পাশাপাশি পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমের মতো শহরগুলোর ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। গত রোববার একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানান, বসতি স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবের পক্ষে যেসব দেশ ভোট দিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত সেসব দেশ সফর অথবা ওই সব দেশের সঙ্গে কোনও দাফতরিক বৈঠক থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন নেতানিয়াহু।
গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল এমএসএনবিসির সঙ্গে কথা বলেন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত রন ডার্মার। এ সময় তিনি শুক্রবার জাতিসংঘের ভোটাভুটিতে নেপথ্যের কলকাঠি নাড়ানোর জন্য ওবামা প্রশাসনকে অভিযুক্ত করেন। এমন দাবি অবশ্য প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বড়দিনের ছুটিতে এই কূটনৈতিক নাটক উন্মোচিত হয়ে পড়ে। জটিলতার আবর্তে মোড় নেয় বারাক ওবামা-বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্পর্ক। যেখানে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের বিরোধিতা করেন। গত শুক্রবার জাতিসংঘের ভোটাভুটির আগের দিন বৃহস্পতিবার সফল লবিং চালান ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তার লবিংয়ের জেরেই জাতিসংঘে প্রথম এ প্রস্তাব তোলা মিসর তার প্রস্তাব থেকে নিরস্ত হয়। জাতিসংঘ থেকে প্রস্তাব তুলে নেয় কায়রো। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দিয়ে মিসরকে চাপ দিয়ে এই সাফল্য ঘরে তোলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দিয়ে মিসরকে পরাস্ত করতে পারলেও শেষটা ভালো ছিল না নেতানিয়াহুর। ইসরায়েলি নেতাকে পরাস্ত করে একদিন পরই পুনরায় জাতিসংঘে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হয়। এবারে প্রস্তাবকারী দেশের তালিকায় মিসরের বদলে আসে নিউজিল্যান্ড, ভেনেজুয়েলা, সেনেগাল এবং মালয়েশিয়ার নাম। নতুন করে চার দেশ ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন বন্ধের প্রস্তাব তোলার পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ১৪-০ ভোটে এটি পাস হয়। ভোটদানে বিরত থাকে ইসরাইলের সবচেয়ে ঘনি মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। সচরাচর ইসরাইলবিরোধী যে কোনও প্রস্তাবেই ভেটো দিয়ে থাকে ওয়াশিংটন। তবে এদিন আর সে পথে হাঁটেনি ওবামা প্রশাসন। বিবিসি, রয়টার্স ও এএফপি।



 

Show all comments
  • ফজলুল হক ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:৩৮ পিএম says : 0
    দেখা যাক ট্রাম্প কী করে ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ