নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
১১৯ রানের মামুলি লক্ষ্য। সেটার পেছনে ছুটতে থাকা ঢাকা ডমিনেটর্সের স্কোর ১৫ ওভার শেষে দাঁড়াল ৪ উইকেটে ৮৫ রান। অর্থাৎ হাতে ৬ উইকেট নিয়ে ৩০ বলে তাদের দরকার ছিল ৩৪ রান। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতার নজির স্থাপন করে তারা তুলতে পারল মোটে ১৮ রান। হারিয়ে ফেলল ৫ উইকেট। ফলে স্বল্প পুঁজি নিয়েও বোলারদের কল্যাণে জয়ের আনন্দে মাতল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। দৃষ্টিকটু হার দিয়ে এবারের বিপিএল শেষ করল ঢাকা।
গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে চট্টগ্রামের কাছে তারা পরাস্ত হলো ১৫ রানে। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেটে ১১৮ রান তুলতে সমর্থ হয় চট্টগ্রাম। জবাবে পুরো ওভার খেলে ঢাকা করতে পারে ৯ উইকেটে ১০৩ রান। ঢাকার পক্ষে ২২ রানে ৪ উইকেট নেন আরাফাত সানি। তবে তার এমন পারফরম্যান্স যথেষ্ট হয়নি জয়ের জন্য। এই বাঁহাতি স্পিনারের সতীর্থ ব্যাটাররা পারেননি নিজেদের মেলে ধরতে। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে চট্টগ্রামের জয়ের নায়ক জিয়াউর রহমান। ব্যাট হাতে ২০ বলে ৩৪ রানের অপরাজিত আগ্রাসী ইনিংস খেলে দলের সংগ্রহ ভদ্রস্থ করেন তিনি। তার ব্যাট থেকে আসে ৩ চার ও ২ ছক্কা। পরে বল হাতে ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রানে ২ উইকেট শিকার করেন জিয়া।
সানির ঘূর্ণি বোলিংয়ে সপ্তম ওভারে ২৮ রানে ৫ উইকেট খুইয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় চট্টগ্রাম। ইরফান শুক্কুর, মেহেদী মারুফ, উন্মুক্ত চাঁদ, আফিফ হোসেন ও দলনেতা শুভাগত হোম ফিরে যান এক অঙ্কের স্কোরে। এরপর ৪১ রানের জুটি গড়েন চাপ সামলে নেওয়ার চেষ্টা করেন উসমান খান ও কার্টিস ক্যাম্ফার। তারা বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ফের টপাটপ উইকেট খোয়ায় চট্টগ্রাম। ১১ রানের মধ্যে সাজঘরে ফেরেন ক্যাম্ফার, উসমান ও দারউইশ রসুলি। শেষদিকে জিয়ার ঝড়ে তিন অঙ্ক পেরিয়ে সামনে এগোয় দলটি। তিনি বাদে দুই অঙ্কে পৌঁছান কেবল উসমান (২৯ বলে ৩০) ও ক্যাম্ফার (১৬ বলে ১১)।
জবাব দিতে নেমে ঢাকার শুরুটাও হয়নি ভালো। আব্দুল্লাহ আল মামুন ফেরেন দ্রুত। আরেক ওপেনার সৌম্য সরকারের মারমুখী ইনিংস হয়নি লম্বা। ১৬ বলে ২১ রান করেন তিনি। তাকে বোল্ড করে দেন ক্যাম্ফার। আরিফুল হকও পারেননি টিকতে। ৩৯ রানে ৩ উইকেট হারানো ঢাকার নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো চলতে থাকে। তবে হাল ধরার চেষ্টা ছিল অধিনায়ক নাসির হোসেনের। অ্যালেক্স ব্লেইকের আউটের পর তিনি সঙ্গী হিসেবে পান জিহাদুজ্জামানকে। তাতে জয়ের কক্ষপথে চলে আসে দলটি। কিন্তু ৩৩ বলে ২৪ করে নাসির সাজঘরে ফেরার পর হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে ছিটকে যায় ঢাকা। নিজের পরের ওভারে আমির হামজাকেও ঝুলিতে ঢোকান ক্যাম্ফার। শরিফুল ইসলাম ও জিহাদুজ্জামানকে তিন বলের মধ্যে শিকার করেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। শেষ ওভারে সানির স্টাম্প উপড়ে নেন জিয়া।
চট্টগ্রামের পক্ষে সবচেয়ে সফল বোলার ক্যাম্ফার। ৪ ওভারে ১৫ রানে ৩ উইকেট নেন এই আইরিশ পেস বোলিং রাউন্ডার। ২ উইকেট দখল করতে বাঁহাতি পেসার মৃত্যুঞ্জয়ের খরচা ২৯ রান। তবে ব্যাটে-বলে দলকে রোমাঞ্চকর জয় এনে দিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার নিজের ঝুলিতে পুড়েছেন অভিজ্ঞ জিয়া।
তবে এদিন সন্ধ্যার ম্যাচটিতে মুদ্ধতা ছড়িয়েছেন মুকিদুল ইসলাম। যেখানে পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পর বল হাতে পেলেন মুগ্ধ ডাক নামের এই পেসার। ওই ওভার থেকেই শুরু হলো তার উইকেট শিকার। একই ধারা চলতে থাকল পরের ওভারগুলোতেও। মুগ্ধতা ছড়ানো নৈপুণ্যে এবারের বিপিএলে প্রথম বোলার হিসেবে তুলে নিলেন ৫ উইকেট। ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে হাইভোল্টেজ ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে ৩.১ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৫ উইকেট নিতে তিনি খরচ করেন ২৩ রান। তার তোপে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বরিশাল গুটিয়ে যায় ১২১ রানে। তখনও বাকি ছিল ইনিংসের ৫ বল। এবারের বিপিএলে আগের সেরা বোলিং ফিগার ছিল নাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের। খুলনা টাইগার্সের এই অফ স্পিনার গত ২৪ জানুয়ারি ৬ রানে শিকার করেছিলেন ৪ উইকেট। মিরপুরেই অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল ঢাকা ডমিনেটর্স।
সাকিব আল হাসানকে বোল্ড করে শুরু হয় মুকিদুলের উইকেট উৎসব। সেøায়ার বল বরিশাল অধিনায়কের ব্যাটের কানায় লেগে উপড়ে দেয় স্টাম্প। এরপর তার শিকার হন দারুণ খেলতে থাকা মাহমুদউল্লাহ। অভিজ্ঞ এই ব্যাটারও সাকিবের মতো বল স্টাম্পে টেনে আউট হন। ১৮তম ওভারে পরপর দুই বলে উইকেট নিয়ে বরিশালকে কাঁপিয়ে দেন মুকিদুল। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগালেও তা পূর্ণতা পায়নি। দলের আশার আলো হয়ে জ্বলতে থাকা করিম জানাত তানভির ইসলামের অসাধারণ ক্যাচে ফেরার পর মোহাম্মদ ওয়াসিমও একই কায়দায় মাঠ ছাড়েন। ইনিংসের শেষ বলে ৫ উইকেট পূর্ণ হয় মুকিদুলের। চতুরঙ্গ ডি সিলভা গ্লাভসবন্দি হন উইকেটের পেছনে থাকা মোহাম্মদ রিজওয়ানের। অফ স্টাম্পের বাইরের ফুল লেংথ ডেলিভারিতে পরাস্ত হন তিনি। চলমান আসরে এটাই কোনো বোলারের ৫ উইকেট দখলের প্রথম ঘটনা। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে ২২ বছর বয়সী মুকিদুলের ক্যারিয়ারসেরা বোলিংও। তার আগের সেরা ছিল ৩০ রানে ৩ উইকেট। বিপিএলে বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে সেরা বোলিং ফিগার এখন তার দখলে। আগের সেরা ছিল শফিউল ইসলামের ঝুলিতে। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ২০১৭ সালে খুলনা টাইটান্সের হয়ে রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে ২৬ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা বিপিএলের নবম আসর চলছে। এখন পর্যন্ত ৫ বা এর চেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার ঘটনা দেখা গেছে ১৭ বার। মুকিদুল ও শফিউল ছাড়া বাংলাদেশ আরও চার পেসার এই স্বাদ নিয়েছেন। তারা হলেন মুস্তাফিজুর রহমান, আবুল হাসান রাজু, তাসকিন আহমেদ ও আল আমিন হোসেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।