Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

আন্তর্জাতিক মানের ফুটবলার এখন ফুড ডেলিভারি গার্ল

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

পৌলমী অধিকারীর সকালটা শুরু হয় অন্যদের চেয়ে একটু আগেই। ভোরে ঘুম থেকে উঠে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। এরপর মানুষের অর্ডার করা খাবার পিঠের বড় ব্যাগে নিয়ে সাইকেল চালিয়ে পৌঁছে দেন গ্রাহকের ঘরে। এ করেই তাঁর দিন চলে। কাজ করছেন ভারতের খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জোমাটোতে। পৌলমী আগে সকাল সকাল ফুটবল নিয়ে ছুটতেন মাঠে। ফুটবল তাঁর নেশা। অনূর্ধ্ব-১৬ নারী দলের হয়ে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। আর এখন ভাগ্যের ফেরে সকালে বলের নেশা ছেড়ে সাইকেল নিয়ে ছুটতে হচ্ছে মানুষের বাড়ি বাড়ি। অভাব তাঁকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে ভাঙাচোরা পথে। ২৪ বছর বয়সী পৌলমী বলেন, তাঁর চাকরি এখন জোমাটোর অ্যাপে অর্ডার হওয়ার খাবার গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর নেশা হলো ফুটবল। পৌলমী একসময় ভারতের অনূর্ধ্ব-১৬ নারী দলের হয়ে ফুটবল খেলতেন। অনেক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেও দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। কিন্তু এই খেলা পরিবারের আর্থিক টানাপোড়েন কমাতে পারেনি। তাই বাধ্য হয়ে তাঁকে এ কাজ খুঁজে নিতে হয়েছে। ২০১৩ সালে পৌলমী খেলতে শ্রীলঙ্কায় যান। সেখানে তিনি সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের মহিলা জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপের যোগ্যতা অর্জনের ম্যাচে অংশ নেন। ২০১৬ সালে হোমলেস ওয়ার্ল্ড কাপে (আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট) খেলতে গ্লাসগো যান। কলকাতার হুগলী নদীর দক্ষিণে শিবরামপুরে নি¤œবিত্ত পরিবারে জন্ম পৌলমীর। স্থানীয় মানুষ তাঁকে বুল্টি নামে ডাকেন। দুই মাস বয়সেই তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। এরপর মাসির (মায়ের বোন) সংসারে থেকে বড় হয়েছেন। তাঁর বাবা একজন খ-কালীন ট্যাক্সিচালক। সাত বছর বয়সে পাড়ার মাঠে স্থানীয় ছেলেদের ফুটবল খেলা দেখে মাঠে যাওয়ার আগ্রহ জাগে পৌলমীর। ছেলেদের মতো পোশাক পরে বলে সহজেই মাঠে খেলায় নেমে যেতে পারেন তিনি। খেলার সাথিরাও বিশ্বাস করেছিল, পৌলমী ছেলে। পৌলমী বলেন, ‘কিন্তু যখন তারা জানতে পারল আমি মেয়ে, তখন তাদের অভিভাবকেরা মাঠ কর্তৃপক্ষ ও আমার খালার কাছে অভিযোগ জানানো শুরু করেন। তাঁরা বলেছিলেন, শর্টস পরা একটি মেয়ে কীভাবে ছেলের সঙ্গে ফুটবল খেলে?’ এ ঘটনায় পৌলমী খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি সত্যি অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। মাঠে খেলব, এটা খুব করে চাইতাম। এ কারণে বাড়ি ফিরে প্রতিদিন কাঁদতাম।’ পৌলমীর মাসি বলেন, তিনি পৌলমীর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে নানা কাজ করেছেন। তাঁর অনুশীলনের ব্যবস্থা করেছেন। এতে পৌলমী ভালো করেছেন। দ্রুত তিনি স্থানীয় ফুটবল কোচ অনিতা সরকারের নজরে এসেছেন। পরে অনিতা সরকারের তত্ত্বাবধানে পৌলমী কলকাতা ফুটবল লিগে মেয়েদের দলে খেলেছেন। আর মাত্র ১২ বছর বয়সেই ভারতের অনূর্ধ্ব-১৬ দলের খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাচিত হন। ‘ভারতের জার্সি পরা ও অল্প বয়সে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা আমার ক্যারিয়ারের জন্য সেরা মুহূর্ত ছিল। প্রথমবারের মতো যখন দেশের জার্সি পরেছিলাম তখন অনেক আনন্দিত হয়েছিলাম,’ স্মৃতি খুঁজে এভাবে বলছিলেন পৌলমী। ২০১৩ সালে পৌলমী খেলতে শ্রীলঙ্কায় যান। সেখানে তিনি সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের মহিলা জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপের যোগ্যতা অর্জনের ম্যাচে অংশ নেন। ২০১৬ সালে হোমলেস ওয়ার্ল্ড কাপে (আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট) খেলতে গ্লাসগো যান। সেখানে তাঁকে প্রতি ম্যাচে খেলার জন্য প্রায় ১০০ ডলার করে দেওয়া হতো। কিন্তু সেখানে কিছু অসুবিধাও ছিল। পৌলমী বলেন, ‘আমাদের পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কারণে কখনোই ফুটবল খেলার সরঞ্জাম সঠিকভাবে নিতে পারিনি। এমনকি দিনে তিনবেলাও ঠিকমতো জোটে না।’ ২০১৮ সালে একটা বড় ধাক্কা পান পৌলমী। পায়ে বড় ধরনের চোট পাওয়ার কারণে কয়েকটি অস্ত্রোপচার করতে হয়। তাঁকে অনেক দিন বিশ্রামে থাকতে হয়। এরপর মাঠে ফেরার মতো পুরো সুস্থ হয়ে উঠলেও পরিবারের চরম অনটন মাঠে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আমরা যদি ভারতের কথা বলি এবং পুরুষ ও নারী ফুটবলের তুলনা করি, তাহলে দেখা যাবে, অনেক মানুষ নারীদের ফুটবল দেখেন না এবং এটা নিয়ে ভাবেন না। ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। আমি পুরুষদের ক্রিকেট ম্যাচ দেখার জন্য মানুষকে চাকরি থেকে ছুটি নিতে দেখেছি, কিন্তু তাঁরা নারীদের ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ