Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্রিটেনে স্বাস্থ্যকর্মীদের বৃহত্তম ধর্মঘট

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

বেতন বৃদ্ধির দাবিতে এ যাবতকালের বৃহত্তম ধর্মঘটে নেমেছেন ব্রিটেনের স্বাস্থ্যকর্মীরা। হাজারো নার্স ও অ্যাম্বুলেন্সকর্মী যোগ দিয়েছেন এই ধর্মঘটে। তারা পৃথকভাবে গত বছরের শেষ দিক থেকেই ধর্মঘট শুরু করেছিলেন। কিন্তু সোমবার থেকে তারা একযোগে আন্দোলনে নেমেছেন। ফিজিওথেরাপিস্টরাও ধর্মঘটে যোগ দিতে পারেন। ব্রিটেনে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এ রকম আন্দোলন এই প্রথম। ব্রিটেনের শীর্ষ চিকিৎসক স্টিফেন পোয়িস মনে করেন, এই ধর্মঘটের ফলে স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে বিঘিœত হবে। চার দশকের মধ্যে ব্রিটেনে যখন সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে, তখন বেতন বৃদ্ধির দাবি তুলেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। সরকার বলছে, দাবি মেনে নেওয়ার সামর্থ্য এখন তাদের নেই। এ ছাড়া বেতন বাড়ানো হলে দ্রব্যমূল্য আরো বাড়বে, ঋণের সুদের হার এবং জামানতের অংকও (মর্টগেজ পেমেন্ট) বাড়বে। ব্রিটেনে গত গ্রীষ্মকাল থেকেই স্বাস্থকর্মীদের আন্দোলন চলছে। প্রায় পাঁচ লাখ কর্মী এতে অংশ নিচ্ছেন, যাদের বেশির ভাগই সরকারি চাকরিজীবী। স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্টিভ বার্কলে তাদের প্রতি জরুরি স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রেড ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে গঠনমূলক ও ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে বলেও এক বিবৃতিতে দাবি করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তবে স্বাস্থ্যকর্মীদের ইউনিয়নের নেতা শ্যারন গ্রাহাম জানান, তারা চান ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও আলোচনায় যোগ দিন। তাদের দাবি না মেনে সরকার মানুষের জীবন বিপন্ন করে তুলছে বলেও মনে করেন তিনি। গত সপ্তাহে এক টিভি অনুষ্ঠানে সুনাক বলেছেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন বাড়াতে পারলে তিনি খুবই খুশি হতেন। তবে তাদের কাছে আপাতত আর কোনো পথ খোলা নেই। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও অ্যাম্বুল্যান্স কেনায় অনেক অর্থ চলে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, কভিড মহামারির সময় থেকে ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ওপর চাপ তৈরি হয় এবং এখনও তা চলছে। অস্ত্রোপচার বা জরুরি সেবা পাওয়ার জন্য হাজারো মানুষকে অপেক্ষার তালিকায় থাকতে হচ্ছে। এদিকে ব্রিটেনের রয়্যাল কলেজ অব নার্সিং (আরসিএন) জানায়, কম বেতনের কারণে গত এক দশকে হাজারো নার্স চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। গত বছরই এই সংখ্যা ছিল ২৫ হাজারের ওপরে। স্বাস্থ্যকর্মী কমে যাওয়ার বিষয়টিও স্বাস্থ্যসেবায় ক্ষতিকর প্রভাব রেখেছে। আরসিএন মূল্যস্ফীতির কথা বিবেচনা করে স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন পাঁচ শতাংশ বাড়ানোর দাবি জানায়। তবে সরকার ও আন্দোলকারী স্বাস্থ্যকর্মীরা এ বিষয়ে একমত হতে পারেননি। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে অ্যাম্বুল্যান্সকর্মীরা ধর্মঘটে নামলেও তারা জানিয়েছেন, জরুরি সেবা চালু থাকবে। বিশ্বজুড়ে জ্বালানি পণ্যের যে উচ্চমূল্যের জেরে দেশে দেশে শুরু হয়েছে মূল্যস্ফীতি। তবে যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতির হার অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশ গুরুতর। গত অক্টোবরে ব্রিটেনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ১ শতাংশে, যা দেশটির গত ৪১ বছরের মূল্যস্ফীতির রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি খানিকটা কমে পৌঁছেছে ১০ দশমিক ৭ শতাংশে। ব্যাপক এই মূল্যস্ফীতির প্রভাবে খাদ্য, আবাসন, জ্বালানির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দিন দিন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ফলে সম্প্রতি দেশটির বিভিন্ন পেশাজীবী গোষ্ঠী বেতনভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন সম্প্রতি। ব্রিটেনের নার্সরা অবশ্য করোনা মহামারির সময় থেকেই সরকারের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন। অসন্তোষের মূল কারণ— মহামারির প্রায় দু’ বছর জুড়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা বাড়াতে ব্রিটেনের সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। স্বাস্থ্যকর্মীদের একাধিক ট্রেড ইউনিয়ন ২০২০ ও ২০২১ সালে আরও ডাক্তার-নার্স নিয়োগ দিতে এনএইচএস বরাবর কয়েকবার দেন-দরবার করেছে, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। সম্প্রতি এনএইচএস নার্সদের বেতনবৃদ্ধির সুপারিশ জানিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে। সেই সুপারিশ আমলে নিয়ে চলতি মাসের শুরুতে নার্সদের বাৎসরিক বেতন ১,৪০০ পাউন্ড, অর্থাৎ ১ লাখ ৮০ হাজার ৩২০ টাকা বৃদ্ধিও করেছে। শতকরা হিসেবে এই বৃদ্ধির হার ৩ শতাংশ। কিন্তু যুক্তরাজ্যের বর্তমান মূল্যস্ফীতির বাজারের সঙ্গে বেতনবৃদ্ধির এই হার একেবারেই সংগতিপূর্ণ নয় উল্লেখ করে আরসিএন নেতারা জানিয়েছেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বেতন চাইছেন তারা। তাদের দাবি— বেতনবৃদ্ধির হার অন্তত ১০ শতাংশে উন্নীত করা হোক। এএফপি, ডিডব্লিউ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ