পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে আমাদের চিন্তার বিচ্যুতি হল, দেশে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা চালুর কথা বললে সবাই মাদরাসা শিক্ষা সংস্কারের জন্য ছুটে আসেন। ইসলামী শিক্ষার দৈন্যদশা বা ইসলামের যে কোনো সমস্যার জন্য মাদরাসা শিক্ষা বা আলেম সমাজকেই দায়ী করেন। সবাই এ কথা ভুলে যান যে, ইসলাম কোনো পৌরহিত্যের ধর্ম নয়। আলেম বা ইমামরা ধর্ম পালন করলে সবাই পরিত্রাণ পেয়ে যাবেন এমন কথা কোথাও নেই। ইসলামের সকল হুকুম ও বিধিনিষেধ সমানভাবে সব মুসলমানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কাজেই ইসলামের বা মুসলমান সমাজের যাবতীয় সমস্যার জন্য কোনো মুসলমান তার দায় এড়াতে পারেন না।
মাদরাসা নিয়ে যারা আছেন তাদেরকেও একই চিন্তা পেয়ে বসেছে। তারা মাদরাসার চার দেয়ালের বাইরে কিছু চিন্তা করতে পারেন না। অনেকে মনে করেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ সমরবিদ সব মাদরাসায় বানাতে হবে। এ ধরনের আবেগি কথার সাথে সুস্থমস্তিষ্কের কোনো লোক একমত হতে পারেন না।
ইসলামী শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য প্রথম চিন্তা করতে হবে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার মর্যাদায় পরিচালিত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেল শিক্ষা নিয়ে। এখান থেকেই ইসলামের সোনালি যুগের উত্তরসুরি ইসলামী চরিত্রৗ, বৈশিষ্ট্য ও যোগ্যতাসম্পন্ন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ, সমরবিদ তৈরির পরিকল্পনা নিতে হবে। আমাদের শতকরা ৯০ জন ছাত্র যেখানে লেখাপড়া করে সেই শিক্ষাঙ্গন বাদ দিয়ে মাদরাসা বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়ে তা অর্জন করা সম্ভব নয়।
মাদরাসা শিক্ষার সিলেবাস সমস্যা : ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একটি বৈঠকে মাদরাসা শিক্ষার সিলেবাস নিয়ে আলোচনা হয়। মাদরাসা শিক্ষার সবচে দুর্বল দিকটি চিহ্নিত হয় আরবিতে। মাদরাসায় কুরআন, হাদীস, ফিকাহ ও আরবি সাহিত্যের বড় বড় কিতাব পড়ানো হয়; কিন্তু ছাত্ররা আরবিতে লিখতে বা কথা বলতে পারে না। কাজেই এ শিক্ষার আমূল পরিবর্তন চাই। উক্ত বৈঠকে আমি দুটি কথা বলেছিলাম প্রতিবাদের সুরে। ১. মাদরাসা শিক্ষার মূল সিলেবাস দরসে নিজামী। উপমহাদেশে প্রচলিত কওমী ও আলিয়া নেসাবের মাদরাসাগুলোর অভিন্ন সিলেবাস দরসে নিজামী। দরসে নিজামীর মৌলিক কিতাবগুলো কাশশাফ, বায়যাভী, সিহাহ সিত্তা, হেদায়া, শরহ বেকায়া, কাফিয়া, নাহুমীর, মিশকাত উভয় ধারার মাদরাসায় পড়ানো হয়। উস্তাদদের মধ্যেও কোনো তফাৎ ছিল না। দেওবন্দী হিসেবে পরিচিত মওলানা উবায়দুল হক সাহেব ছিলেন ঢাকা আলিয়া মাদরাসার সর্বশেষ হেড মওলানা। মুহাদ্দিস মওলানা মিয়া মুহাম্মদ কাসেমীর মতো আরো অনেকে ছিলেন দেওবন্দের ফারেগ। অন্যদিকে লালবাগের মরহুম মওলানা আমিনুল ইসলাম, মওলানা মুহিউদ্দীন খান, বাংলাদেশে তাবলীগের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা আব্দুল আজিজ প্রমুখ ছিলেন আলিয়া মাদরাসার ছাত্র। মাঝখানে বাংলা ইংরেজি ও জেনারেল সাব্জেক্টের চাপে আলিয়া নেসাবে দরসে নিজামী সঙ্কুচিত হয়ে গেছে, এই যা পার্থক্য।
২. দ্বিতীয়ত দরসে নিজামী প্রণীত হয়েছিল কুরআন, হাদীস ও ফিকাহর জ্ঞান দানের উদ্দেশে। ১২ বছরের ব্যবধানে একজন ছাত্রকে আলেম বানানোর এ সিলেবাস কালজয়ী এবং এর চেয়ে উন্নত সিলেবাস আর হতে পারে না। তখনকার সময়ে আরব বিশ্বের সাথে উপমহাদেশের ব্যবসা বাণিজ্য বা চাকরি বাকরির যোগাযোগ ছিল না। এ কারণে আরবি কথাবার্তা বা আধুনিক আরবি শিক্ষার সিলেবাস দরসে নিজামীতে ছিল না। এখন আসল ঠিক রেখে আধুনিক আরবিকেও অন্তর্ভুক্ত করলে মাদরাসার ছাত্ররা রেমিটেন্স সংগ্রাহক হিসেবেও জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে এবং এখনো অনেকে রাখছে। উপস্থিত সবাই আমার কথায় সমর্থন জানায়।
মাদরাসায় একেবারে শুরুর দিকে আমাদেরকে উর্দু পড়ানো হয়েছে। এমনকি উর্দু শিক্ষা ব্যবস্থা ও পরীক্ষার মাধ্যম ছিল। সাথে ফারসিও পড়ানো হয়েছে। উর্দু ফারসি উপরের ক্লাসে পড়ানোর সুযোগ ছিল না। কারণ, পাবলিক পরীক্ষায় উর্দু ও ফারসি ছিল না। আমাদের উস্তাদগণ এই দুটি সমৃদ্ধ ইসলামী ভাষা থেকে আমাদের মাহরুম করতে চাননি বলে এ ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। তাছাড়া আরবি ব্যাকরণের যে কিতাব ফারসি ভাষায় রচিত হয়েছে তার বিকল্প আরব বিশ্বে এখনো নাই বলে আমি জানি। তাই মনের তাগিদে নিচের স্তরে তারা ভাষা দুটি পড়াতেন। কিন্তু বাস্তবে এতো নিচু স্তরে এতবেশি ভাষার চাপ দেয়াটা অবৈজ্ঞানিক। এ কাজটি স্কুলেও হচ্ছে। শৈশব থেকে ইংরেজদের ভাষা শেখানোর প্রয়োজন কতখানি ভেবে দেখুন। লক্ষাধিক টাকা ভর্তি ফি এবং হাজার হাজার টাকা বেতন দিয়ে ইংলিশ মিডিয়ামের প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশুদের মুখে ইংরেজি বোল ফোটানোর কসরত হচ্ছে। কর্মজীবনে তারা কতখানি সফল হচ্ছে হিসেব নিয়ে দেখি না। আমার মতে এসব ভাষা শেখা ও শেখানোর গুরুত্ব অবশ্যই আছে। তবে তা নিজের ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর পরিপক্ষতা অর্জনের পরে। মাধ্যমিকের পরে বিশেষ কোর্স বা সাবসিডিয়ারি হিসেবে এগুলোর শিক্ষাদান এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পৃথক পৃথক ডিপার্টমেন্টে বিদেশি ভাষাবিদ তৈরির যুক্তি কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।