পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গত তিন মাসে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে ৮৮ ভাগই কম : ফেব্রুয়ারি-মার্চেও অনাবৃষ্টি-খরার আভাস : ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে : মাঘ মাসেই চৈত্রের খরতাপ : ভরা বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টি ছিল অপ্রতুল : নদ-নদী খাল-বিল শুকিয়ে গেছে
নভেস্বর-ডিসেম্বর-জানুয়ারি, এই তিন মাসে হালকা স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। কিন্তু ধারাবাহিক তিন মাস যাবৎ দেশে সেই ‘স্বাভাবিক’ বৃষ্টিপাতটুকু হয়নি। আবহাওয়া বিভাগের বিশেষজ্ঞ কমিটির পর্যালোচনার তথ্য অনুযায়ী, বিগত নভেম্বর মাসে দেশে মৌসুমের এ সময়ের ‘স্বাভাবিক’ বৃষ্টির তুলনায় গড়ে ৯৮ শতাংশই কম, ডিসেম্বরে ৬৬.৬ শতাংশ কম এবং গেল জানুয়ারি মাসে একশ’ ভাগই কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। অর্থাৎ টানা তিন মাসে গড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৮৮ দশমিক ২ ভাগই কম। বলা যায়, বাস্তবে বৃষ্টিই ঝরেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশি^ক জলবায়ু পরিবর্তন ও উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাবে এহেন বিরূপ হয়ে উঠেছে আবহাওয়া-প্রকৃতি।
তাছাড়া গেল ভরা বর্ষা মৌসুমে বিগত জুলাই মাসে দেশে স্বাভাবিকের তুলনায় গড়ে ৫৭.৬ শতাংশ এবং আগস্ট মাসে ৩৬.৪ শতাংশ ঘাটতি ছিল বৃষ্টিপাতে। গত বর্ষাকালে অঞ্চলভেদে বৃষ্টিপাতেও ছিল ব্যাপক অসঙ্গতি। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার আবহাওয়া বিভাগের বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়, চলতি ফেব্রæয়ারি অর্থাৎ মাঘ-ফাল্গুন মাসেও দেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হতে পারে। একই ধরনের অনাবৃষ্টির আভাস রয়েছে মার্চ (ফাল্গুন-চৈত্র) মাসেও।
এ যাবৎ টানা অনাবৃষ্টির ফলে ভ‚গর্ভস্থ পানির পর্যাপ্ত রিচার্জ হয়নি। আর, ভ‚-উপরিভাগের নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওড়, জলাশয়সহ পানির উৎসগুলো অনেকটাই শুকিয়ে গেছে। ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে খুব দ্রæত। আবার, জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় এখন মাঘ মাস অতিক্রম না করতেই চৈত্রের মতো খরতাপ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। এ অবস্থায় এবার দেশজুড়ে আগেভাগেই খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যা দেশে চৈত্র-বৈশাখে দৃশ্যমান হয়ে থাকে।
কৃষি ও কৃষি-আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনাবৃষ্টি বা আগাম খরা দশার বিরূপ প্রভাবে ফল-ফসল, ক্ষেত-খামার, মাছ চাষসহ গোটা কৃষি-খামার সেক্টর সঙ্কটের মুখে পড়েছে। পানির অভাবে বোরো বীজতলা আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। ফলের বাগান শুকিয়ে ও রুগ্ন হয়ে যাচ্ছে। চাষাবাদে ভ‚-উপরিভাগের ‘স্বাভাবিক’ পানিটুকু মিলছে না অনেক এলাকায়। এতে করে ভ‚গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের উপর নির্ভরতা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে পানি সেচে কৃষকের খরচও বেড়েই চলেছে। সেই সাথে চাষাবাদে সামগ্রিকভাবে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। দিশাহারা কৃষক।
‘স্বাভাবিক’ বৃষ্টিপাতে ঘাটতির ফলে দেশে আগাম খরা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. মনজুরুল হুদা গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, দেশে নভেম্বর-ডিসেম্বর-জানুয়ারি এই তিন মাসে ধারাবাহিকভাবেই বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে খুবই কম হয়েছে। এই অনাবৃষ্টির কারণে কৃষির সবক্ষেত্রেই পড়েছে বিরূপ ও বৈরী প্রভাব। ধান, গম, পাটসহ সবরকম ফল-ফসলে সম্পূরক সেচ দিতে হচ্ছে। এরজন্য কৃষককে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে। ব্যয় বেড়ে গেছে কৃষকের। জমিতে সেচ না দিলে ফল ও ফসল দুর্বল, রোগাক্রান্ত হচ্ছে। গাছ মারা যাচ্ছে। যেমন- রাজশাহী অঞ্চলে প্রতিঘণ্টায় ‘বোরিং’ পদ্ধতিতে সেচের খরচ পড়ছে ২শ’ টাকারও বেশি। একেকটি আম বাগানে পানি সেচ দিয়েই গাছ ও মাটি সতেজ রাখতে হচ্ছে। পানির অভাব পূরণের জন্য মাছের পুকুর-জলাশয়ে সারাক্ষণ পানি দিতে হচ্ছে। অত্যধিক হারে পানি উত্তোলন, অন্যদিকে অনাবৃষ্টি-খরা দশার কারণে ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর মারাত্মকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. আবুল হোসাইন তালুকদার বলেন, শীত বা শুষ্ক মৌসুমের গত তিন মাসে (নভেম্বর-জানুয়ারি) অনাবৃষ্টির ফলে কিছু কিছু ফল-ফসল ফলনের ক্ষেত্রে ক্ষতি হচ্ছে। আবার, কিছু ক্ষেত্রে এর উপকারও রয়েছে। যেমন- ডাল জাতীয় ফসলের জন্য উপকার হচ্ছে। ফোটা ফুলের ওপর বৃষ্টিপাত হলে ফলনে ক্ষতি হতো। এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বেশি বৃষ্টিতে আলু পঁঁচে যায়। ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, গাজরসহ শাক-সবজির ফলন ভালো হয়েছে। তিনি জানান, বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এখনও হতাশার কারণ নেই। কেননা সামনের দিনগুলোতে হালকা বৃষ্টি হলেও বোরো ও রবিশস্যসহ কৃষির জন্য উপকার হবে। খনার বচনে বলা হয়েছে- “যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্যি রাজার পুণ্য দেশ”। যার অর্থÑ মাঘ মাসের শেষের দিকে বৃষ্টিপাত হওয়া দেশের ফল-ফসলের জন্য উপকারি। তিনি বলেন, অনাবৃষ্টি ও মাটির নিচের পানি অবিরাম উত্তোলনের ফলে ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিনিয়তই নিচে নেমে যাচ্ছে। ভ‚পৃষ্ঠের পানি সংরক্ষণ করে তা কাজে লাগানো প্রয়োজন।
অনাবৃষ্টি-শিলাবৃষ্টি-বজ্রঝড়ের আভাস : চলতি ফেব্রæয়ারি অর্থাৎ মাঘ-ফাল্গুন মাসে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ মাসের প্রধমার্ধে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এক থেকে ২টি মৃদু (সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৬ থেকে ৮ ডিগ্রি) ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকতে পারে। এ মাসের প্রথমার্ধে দেশের নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা থাকতে পারে। এ মাসে দেশের কোথাও কোথাও এক থেকে ২দিন শিলাবৃষ্টিসহ বজ্রঝড় সংঘটিত হতে পারে।
গতকাল বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অধিদফতরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় ফেব্রুয়ারি মাসের উক্ত দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দেয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।