Inqilab Logo

রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড নিয়ে লুকিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষাকতাও করত মজিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৩:২১ পিএম

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত এবং দীর্ঘদিন ধরে পলাতক আসামী আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মাওলানাকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। বুধবার দিনগত রাতে মাদারীপুর সদর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ এর সময় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধীর অভিযোগে কয়েকটি মামলা হয় ২০১৪ সালে। এরপর থেকেই গা ঢাকা দেয় মজিদ। পরিচয় লুকিয়ে মাদারিপুর যেয়ে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষাকতাও করে সে।

বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।


র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তার আব্দুল মজিদ ১৯৭০ সালে জামায়াতে ইসলামীর পূর্বধলা থানার সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মজিদ রাজাকারদের প্রধান বাহিনী আল-বদর পূর্বধলা রামপুর থানা কমিটির প্রধান হন। একাত্তরের ২১ আগস্ট দুপুরে রামপুরে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের বাড়িতে খালেকসহ সাতজন মুক্তিযোদ্ধাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যার পর খালেকের মরদেহ পাশের কংস নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের মরদেহ বস্তাবন্দি অবস্থায় কোকখালী নদীতে ফেলা হয়। ওইদিন আল-বদর বাহিনী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন মজিদ পূর্ব মৌদাম গ্রামে একটি মুক্তি কয়েদখানা গড়ে তোলেন। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন ও নৃশংসভাবে হত্যা করতেন তিনি।

র‌্যাব-৩ অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন জানান, হত্যাকাণ্ডের দিন পালিয়ে বেঁচে যাওয়া আব্দুল কাদের ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আব্দুল মজিদসহ চারজনকে আসামি করে মামলা করেন। হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৯ সালে আরও তিনজনসহ মোট সাত আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন ট্রাইব্যুনাল।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, বিচার চলাকালে এ মামলার দুজন আসামি আহম্মদ আলী ও আব্দুর রহমান মারা যান এবং রায় হওয়ার পর পলাতক অবস্থায় মারা যান আরও দুই আসামি রদ্দিন মিয়া ও আব্দুস সালাম বেগ। অন্য দুই আসামি আব্দুল খালেক তালুকদার ও কবির খাঁ বর্তমানে পলাতক।

অন্যদিকে মামলার বিচারকাজ চলাকালে কোনো হাজিরা না দিয়ে ২০১৫ সালে আব্দুল মজিদ তার নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় এসে ফকিরাপুল এলাকায় কিছুদিন আত্মগোপনে থাকেন। এরপর এক আত্মীয়ের সহযোগিতায় মাদারীপুরে গিয়ে আত্মগোপন করেন এবং সেখানকার একটি কামিল মাদরাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে পলাতক জীবন শুরু করেন।


র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানায়, ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান মামলার শুনানিতে হাজিরা না দেয়ায় আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এর পরই তিনি প্রথমে ঢাকায়, পরে মাদারীপুরে চলে যান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি নিয়মিত বাসা পরিবর্তন করতেন। এসময় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে অন্যের রেজিস্ট্রেশন করা সিমকার্ড দিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন।

 

পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকায় নিয়মিত মজিদকে বাড়ি থেকে টাকা পাঠানো হতো বলেও জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

আত্মগোপনে থাকাকালে মজিদ সাধারণত জনসমাগম, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায় এমন স্থান এড়িয়ে চলতেন বলেও জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ