বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
প্রকৃতপক্ষে সমস্ত মুমিন ভাই-ভাই। সুতরাং তোমরা (ভ্রাতৃত্বের দাবি রক্ষা কর এবং বিবাদের মুহূর্তে) তোমাদের দু’ ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত করা হয়। (আর এ ঈমানী ভ্রাতৃত্ব রক্ষার অনিবার্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি হচ্ছে) হে মুমিনগণ! পুরুষরা যেন অপর পুরুষদের উপহাস না করে। হতে পারে তারা (অর্থাৎ যাদের উপহাস করা হচ্ছে) তাদের (উপহাসকারীদের) চেয়ে উত্তম। এবং নারীরাও যেন অপর নারীদের উপহাস না করে। হতে পারে তারা (অর্থাৎ যে নারীদের উপহাস করা হচ্ছে) তাদের (উপহাসকারীদের) চেয়ে উত্তম।
তোমরা একে-অন্যকে দোষারোপ করো না এবং একে-অন্যকে মন্দ উপাধিতে ডেকো না। ঈমানের পর গোনাহের নাম যুক্ত হওয়া বড় খারাপ কথা। (অর্থাৎ যে এমনটি করে সে ফাসেক এবং গোনাহগার বিবেচিত হয়। ঈমান আনার পর কোনো মুসলিমের জন্য ফাসেক নামে অভিহিত হওয়াটা খুবই খারাপ কথা। এর ফল দাঁড়াবে এই যে, তুমি তো অন্যকে মন্দ নাম দিচ্ছিলে অথচ নিজেই একটা মন্দ নামে অভিহিত হয়ে গেলে! নাউযুবিল্লাহ) যারা এসব থেকে বিরত না হবে তারাই জালেম।
হে মুমিনগণ! অনেক রকম অনুমান থেকে বেঁচে থাক। কোনো কোনো অনুমান গোনাহ। (অর্থাৎ পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং দলিল-প্রমাণ ব্যতীত কারও সম্পর্কে কুধারণা পোষণ করা কবিরা গোনাহ।) আর তোমরা কারও গোপন ত্রæটির অনুসন্ধানে পড়ো না (অর্থাৎ অন্যের ছিদ্রানে¦ষণ করা ও তার গোপন দোষ খুঁজে বেড়ানোও একটা গোনাহের কাজ।)
এবং তোমরা একে-অন্যের গিবত করো না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? এটাকে তো তোমরা ঘৃণা করে থাক। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। (এবং ভ্রাতৃত্বের দাবি রক্ষার্থে এহেন আচরণ থেকে নিবৃত্ত থাক। আর পূর্বের অন্যায় ও অপকর্মের জন্য অনুতপ্ত হও।) নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। (সূরা হুজুরাত : ১০-১২)।
এ আয়াতগুলোতে আল্লাহতায়ালা সকল মুমিনকে ভ্রাতৃত্বের এক গাঁথুনিতে আবদ্ধ করে এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু দাবি জানিয়ে দিয়েছেন। ঈমানী ভ্রাতৃত্ব তখনই সার্থক ও ফলপ্রসূ হবে যখন এই নীতি ও আদর্শের উপর সৌহার্দ স¤প্রীতি ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে।
সমাজে যখন ঈমানের সূত্রে সম্পর্ক স্থাপিত হবে তখন এক ভাই অপর ভাইয়ের সুবিধা-অসুবিধা দেখবে। বিপদে-আপদে ভাইকে সঙ্গ দেবে। তার প্রতি সাহায্য সহমর্মিতার হাত প্রসারিত করবে। তাকে জুলুম-অত্যাচার থেকে রক্ষা করবে। দুঃখ-দুর্দশায় তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে। সর্বোপরি তার জানমালের হেফাজত করবে এবং তার সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করবে।
একে-অপরকে হিংসা করবে না। কলহে লিপ্ত হবে না। রক্তপাত করবে না। কষ্ট দেবে না। মুসলিম ভাইকে শত্রæর হাতে ছেড়ে দেবে না। লাঞ্ছিত অপদস্থ করবে না। তার প্রতি আক্রোশ রাখবে না। তার সাথে মিথ্যা ও প্রতারণাপূর্ণ আচরণ করবে না।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কোনো সংকট মোচন করে দেবে, আল্লাহতায়ালা তার আখেরাতের সংকট মোচন করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্তের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহতায়ালা তার দুনিয়া ও আখেরাতে স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ গোপন করবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ গোপন করে রাখবেন। (এভাবে) আল্লাহ বান্দার সাহায্য করতে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে। (সহীহ মুসলিম : ২৬৯৯)।
নবীজি আরো বলেন : তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষে লিপ্ত হয়ো না। একজনের বেচা কেনায় গিয়ে বিনা কারণে দাম বাড়িয়ে দিয়ো না। একজন অপরজনের প্রতি আক্রোশ রেখো না। সম্পর্ক ছিন্ন কর না। একজনের বিক্রিতে আরেকজন আগ বাড়িয়ে বিক্রি করতে যেয়ো না। আল্লাহর বান্দারা তোমরা সবাই ভাই ভাই হয়ে যাও।
মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তাকে জুলুম করতে পারে না। তাকে অসহায় ছেড়ে দিতে পারে না। তাকে অপদস্থ ও তাচ্ছিল্য করতে পারে না। তাকওয়া তো এখানে। নবীজি নিজ বক্ষের দিকে ইঙ্গিত করে তিনবার বলেন, তাকওয়া এখানে। তাকওয়া এখানে। তাকওয়া এখানে।
এরপর নবীজি বলেন, একজন ব্যক্তির অন্যায় ও অনিষ্ট হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় ও অপদস্থ করে। প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে অপর মুসলমানের রক্ত, সম্পদ ও সম্ভ্রম (বিনষ্ট করা) হারাম! (সহীহ মুসলিম : ২৫৬৪)।
কোরআন-সুন্নাহ্য় রয়েছে এরকম আরো অসংখ্য হক ও অধিকারের কথা। সীরাতে রাসূল এবং সাহাবা জীবনেও রয়েছে এর বহু দৃষ্টান্ত। মুমিনের কর্তব্য হচ্ছেÑ সে এ শিক্ষাগুলো নিজের মধ্যে ধারণ করায় নিবেদিত হবে এবং নিজ সমাজ ও পরিবেশে প্রীতি ও সদ্ভাব রক্ষায় আত্মনিয়োগ করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।