Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতে তিস্তা সেতালভারের করা আবেদন খারিজ

নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করায় হেনস্থা মামলা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

২০০২ সালে ভারতের গুজরাটের দাঙ্গা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে আঙুল তোলার অভিযোগে এখনও মামলা ঝুলে আছে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী তিস্তা সেতালভারের বিরুদ্ধে। গত বছর জুনে গ্রেফতারের পর সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্টে জামিন পান তিস্তা। তবে এখনও তাঁকে নিয়মিত কোর্টে হাজিরা দিতে হচ্ছে। ভারতের তিস্তা সেতালভার এবং তার সংগঠন ‘সিটিজেনস ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস’ সচেতনভাবে এবং গোপনে সমাজকে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক লাইনে বিভক্ত করার জন্য বিভাজনমূলক রাজনীতিকে সমর্থন করে, এ বয়ান দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার সোমবার দেশটির ধর্মান্তরবিরোধী আইনের বিরুদ্ধে তার সংগঠনের আবেদনের তীব্র বিরোধিতা করে আদালতকে এটি খারিজ করার আহŸান জানিয়েছে।

তিস্তার আবেদনের বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় সরকার গুজরাট দাঙ্গার শিকারদের কল্যাণে সংগৃহীত তহবিলের অপব্যবহার করার জন্য তার বিরুদ্ধে চলমান ফৌজদারি মামলাটি আদালতের নজরে আনে এবং অভিযোগ করে যে, তিনি জনস্বার্থ ব্যতীত অন্য বস্তু ও উদ্দেশ্যে রাজনৈতিকভাবে জনসমর্থনকে কাজে লাগাতে চান। সরকার পক্ষের উকিলের হলফনামায় বলা হয়েছে, ‘আবেদনকারী দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বেদনাকে কাজে লাগিয়ে বিশাল তহবিল সংগ্রহের জন্য দোষী, যার জন্য সেতালভাদ এবং আবেদনকারীর অন্যান্য পদাধিকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যক্রম চলছে। আমি শ্রদ্ধার সাথে দাখিল করছি যে, জনস্বার্থের আড়ালে, আবেদনকারী ইচ্ছাকৃতভাবে, এবং সচেতনভাবে ও গোপনে, সমাজকে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে বিভক্ত করার প্রয়াসে বিভক্তিম‚লক রাজনীতি করেন। আবেদনকারী সংস্থার অনুরূপ কার্যক্রম/প্রচেষ্টা অন্যান্য রাজ্যেও পাওয়া গেছে। বর্তমানে আসাম রাজ্যে এই কার্যকলাপ চলছে।’

উল্লেখ্য, এবছর ভারতের গণতন্ত্রের হাল নিয়ে এক গুচ্ছ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন তিস্তা। ‘ইন সার্চ অব জাস্টিস ইন নিউ ইন্ডিয়া’-শীর্ষক বক্তৃতায় তিনি প্রধানত ২০১৪ সালের পর গণতন্ত্রের দুরবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন। তার প্রশ্ন, ‘ভাবতে হবে, সংসদীয় ব্যবস্থাকেই কি সংবিধান হত্যায় কাজেলাগানো হচ্ছে?’ প্রতিবাদের কণ্ঠরোধ করতেই প্রধানমন্ত্রঅ নরেন্দ্র মোদির সরকার ইউএপিএ-র মতো কাল আইন পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করে তিস্তা বলেন, ‘সিপিএম, সিপিআই-এর মতো দলগুলি সংসদে এর বিরোধিতা করেছিল। আমার প্রশ্ন, কেন এমন আইনের দরকার হচ্ছে? তেলাঙ্গানা, তামিলনাডু, পশ্চিমবঙ্গ, কেরালার মতো বিরোধীদলগুলো শাসিত রাজ্যগুলি কি এই আইনের প্রয়োগ করছে না?’ নাগরিকত্ব আইনের খাঁড়া প্রসঙ্গেও তিস্তা বলেন, ‘এই প্রথম দেশের মৌলিক অধিকার ক্ষুণœ করা হল। এর প্রতিবাদ করায় ২০১৯-এ উত্তরপ্রদেশেই লাখো লোকের নামে হাজারো এফআইআর হয়েছিল। ২৩ জন পুলিশের হাতে নিহত হয়েছে।’

তিস্তা বলেছিলেন, ‘ন্যায় বিচারকে ধ্বস্ত করে পর পর অসাংবিধানিক কাজ চলছে। দিল্লি, ইলাহাবাদে বুলডোজার তন্ত্র দেখা গিয়েছে। আবার ধর্মস্থান আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেশ জুড়ে মসজিদ, মাদ্রাসার জমি দখলের চেষ্টা চলছে।’ আজকের ভারতের বদলের ছবিটা নিয়ে তিস্তা বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানও এখন যেন ব্যক্তি মালিকানাধীন। রেলের টিকিট, তৎকালের দাম দেখলেই বোঝা যায়।’ সংবাদমাধ্যম প্রসঙ্গে তিস্তা বলেন, ‘কয়েকটি বৈদ্যুতিন চ্যানেল-সহ মিডিয়ার একাংশ এখন খাপ পঞ্চায়েত। তবে অনেক প্রতিবাদী সাংবাদিক জেলে। কিছু সংবাদমাধ্যম এবং স্বাধীন সাংবাদিক কঠিন পরিস্থিতিতে পাল্টা বয়ান তুলে ধরেছেন। আজকের ভারতে এটাও সহজ নয়।’ সূত্র : টাইম্স অফ ইন্ডিয়া, আনন্দবাজার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ