মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বুধবার পরবর্তী আর্থিক বছরের জন্য বাজেট পেশ করেছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কিন্তু এই বাজেট পেশের আগে ভারতের অর্থমন্ত্রণালয়ে অনেক কর্মকর্তাকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে লক ইন বা তালা বন্দী অবস্থায় আটক থাকতে হয় দপ্তরেই। আর সেই 'বন্দীদশায়' যাওয়ার আগে তাদের মন্ত্রী নিজে হাতে হালুয়া খাওয়ান। বাজেটের তথ্য যাতে বাইরে প্রকাশ না পেয়ে যায়, তাই যে সব কর্মীরা বাজেটের চূড়ান্ত রূপ দেন আর যারা তা ছাপার কাজ করেন, তাদেরই 'বন্দীদশায়' পাঠানোর আগে মিষ্টিমুখ করানো হয় হালুয়া খাইয়ে।
বহু দশক ধরেই এই রীতি চলে আসছে ভারতে। ইতিহাস বলছে, ১৯৫০ সালে পার্লামেন্টে পেশ করার আগেই একবার বাজেটের তথ্য বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিল। সেই সময়ে রাষ্ট্রপতি ভবনের ছাপাখানায় বাজেট ছাপা হত। কিন্তু ওই ঘটনার পরে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দিল্লির মিন্টো রোডে সরকারী ছাপাখানায় বাজেট ছাপা হত, আর ৮০ সালে অর্থমন্ত্রকের দপ্তর নর্থ ব্লকের বেসমেন্টে নিজস্ব ছাপাখানা তৈরি করা হয়। সম্প্রতি বাজেটের বিশালাকার বই আর ছাপা হয় না, বেশিরভাগটাই হয়ে গেছে ডিজিটাল, তবুও রীতি মেনে ছাপার কাজে যুক্ত সব কর্মকর্তা আর কর্মীদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয় নর্থ ব্লকেই। আর এই বন্দীদশায় যাওয়ার আগে অর্থমন্ত্রী নিজে হাতে ওই কর্মী- অফিসারদের হালুয়া খাইয়ে দেন। এটাকে বলা হয় 'হালুয়া উৎসব'। ভারতীয় সংস্কৃতিতে যেহেতু যে কোনও ভাল কাজে মিষ্টি খাওয়ানো হয়, সেই রীতি মেনেই হালুয়া খাওয়ানো হয়। তবে গত বছর হালুয়া উৎসব পালন করা হয় নি কোভিডের কারণে, কর্মীদের দেওয়া হয়েছিল মিষ্টির বাক্স।
এবছর এই উৎসব পালিত হয়েছে ২৬ জানুয়ারি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের টুইটারে যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে অর্থ মন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সঙ্গেই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়ার কর্মকর্তাদেরও দেখা যাচ্ছে। এদের সামনে রাখা আছে হালুয়া ভর্তি একটা বিশাল কড়াই। নিজ হাতে মন্ত্রীকে হালুয়া তুলে দিতেও দেখা গেছে। আর তারপরেই শুরু হয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মীদের 'বন্দীদশা'। একটা সময়ে বাজেট পেশ হওয়ার প্রায় দু সপ্তাহ আগে থেকেই 'লক ইন' শুরু হত। কিন্তু এখন বাজেটের বড় অংশ ডিজিটাল হওয়ার কারণে সপ্তাহ খানেক সময় কর্মীদের আটকিয়ে থাকতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী মন্ত্রীর বাজেট ভাষণ শেষ হওয়ার পরেই তারা বেরতে পারেন।
এ প্রক্রিয়াটি এতটাই গোপণীয়, যে বর্তমান কর্মকর্তারা তো নয়ই, এমনকি প্রাক্তন কর্মকর্তারাও কথা বলতে রাজী হন না। তবে একজন প্রাক্তণ সরকারী কর্মকর্তা, যিনি নিজে সরাসরি ওই বাজেট ছাপার কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন নি, কিন্তু বিষয়টি সম্বন্ধে অবগত, তিনি বলছেন, "লক ইন শুরু হওয়ার আগে নর্থ ব্লকের বেসমেন্টে ভাল করে তল্লাশি চালানো হয়। কর্মীরা ওই সময়ে থাকা, খাওয়া সবই করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের বেসমেন্টেই।
"তারা নিজেদের কাছে কোনও মোবাইল ফোন রাখতে পারেন না। পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা যায় না। আর কোনও জরুরী প্রয়োজনে ফোন করতে হলে তা করতে হয় অন্যদের সামনেই। চারদিকে লাগানো থাকে সিসি টিভি-র ক্যামেরা। ২৪ ঘন্টাই নজরদারী চলতে থাকে।" বাজেট যাতে কোনও ভাবে প্রকাশ না হয়ে যায়, তার জন্য পুরো ভাষণটা অনেক ভাগে ভাগ করে একেকজনকে একেকটা অংশের দায়িত্ব দেয়া হয়। পুরোটা কোনও একজন জানতেই পারেন না।
১৯৮০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এটাই ছিল রীতি। তবে তারপরে বাজেটের বৃহদাংশই ডিজিটাল হয়ে যাওয়ায় ছাপার কাজ এখন অনেক কম। তবুও কিছু নথিপত্র ছাপতেই হয়। তাই আগে যে বন্দীদশা কাটত অন্তত দু সপ্তাহের, এবছর তা নেমে এসেছে মাত্র পাঁচ দিনে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এখন তার ট্যাবলেট থেকেই বাজেট ভাষণ পড়েন। আর আগে যে বিপুল সংখ্যক বাজেট বক্তৃতা এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মোট ১৪টি নথির বহু সংখ্যক কপি ছাপা হত, কমিয়ে দেয়া হয়েছে তাও।
বাজেট নথিসহ ব্রিফকেস চুরির ঘটনা
দিল্লির সিনিয়ার সাংবাদিকরা ১৯৮৪ সালের একটা ঘটনার কথা বাজেটের আগে বলে থাকেন। সেটাই ছিল প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর শেষ বাজেট। অর্থমন্ত্রী ছিলেন প্রণব মুখার্জী। তার এক সহকারী বাজেটের ঠিক আগের দিন পুলিশে খবর দেন যে তার গাড়ি থেকে একটা ব্রিফকেস চুরি হয়ে গেছে, যাতে ছিল বাজেটের কিছু নথিপত্র। অনেক খোঁজাখুঁজি করে একটা নালার ধার থেকে পরের দিন সেই ব্রিফকেস উদ্ধার হয়, কিন্তু দেখা যায় যে কোনও নথি চুরি হয় নি।
কিন্তু এটা এখনও অজানা যে কেউ ওই ব্রিফকেস খুলে নথিগুলি কপি করে নিয়ে আবার ফেলে দিয়েছিল কী না। তবে ব্যবসায়ীরা সবসময়েই চেষ্টা চালিয়ে যান যাতে বাজেটের কিছু তথ্য বা কোনও ইঙ্গিত তারা আগে থেকেই পেতে পারেন। কিন্তু বাজেট পেশ করার আগে কখনও প্রকাশ পেয়ে গেছে বলে জানা যায় নি। আর প্রকাশ যাতে না হয়, তার জন্যই হালুয়া উৎসব থেকে শুরু করে কর্মীদের 'লক ইন' করে রাখার রীতি পালন করে চলে সরকার। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।