পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে মাদরাসা শিক্ষার উচ্চতর মান নির্ণয়ের জন্য আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি ওঠে নিউ স্কীম মাদরাসা চালুর পর থেকে। এ দাবি ক্রমান্বয়ে জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়। অতীতের সকল মাদরাসা শিক্ষক, শিক্ষার্থী, জাতীয় ইসলামী ব্যক্তিত্ব এ দাবির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। সম্ভবত ১৯২৯ সাল থেকে মওলানা মুনিরুজ্জমান ইসলামাবাদী ও মওলানা আকরম খাঁ প্রমুখ এ দাবি আদায়ের জন্য মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের একটি প্লাটফর্ম তৈরি করেন। তার নাম ছিল আসাম বেঙ্গল জমিয়তে তোলাবায়ে আরাবিয়া। এ দাবির প্রতি ব্রিটিশ আমল থেকেই সরকারি মহল বারবার বৈরি আচরণ দেখিয়েছে। নিউস্কীম চালু করার পর মাদরাসার উচ্চতর সার্টিফিকেটের মান নির্ণয়ের জন্যে এ বিশ^বিদ্যালয়ের দাবির প্রেক্ষিতে বলা হয় যে, যেহেতু সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, কাজেই নতুন করে আরবি বিশ্ববিদ্যালয় নামে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই একটি ফ্যাকাল্টি খোলা হবে ইসলামিক স্টাডিজ নামে। সেই ফেকাল্টিই মাদরাসা শিক্ষার উচ্চতর ডিগ্রির মান নির্ণয়ের চাহিদা পূরণ করবে। কিন্তু ইসলামিক স্টাডিজ নামে ফ্যাকাল্টি খোলার কথা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হওয়ার সময় ফেকাল্টির পরিবর্তে ইসলামিক স্টাডিজ নামে একটি ডিপার্টমেন্ট খোলা হয় এবং নিউস্কীম আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা সিলেটের মওলানা আবু নসর ওয়াহিদ সে ডিপার্টমেন্টে শিক্ষকতা লাভ করেন।
পুরনো আলেমদের জীবনী থেকে জানা যায়, তাদের ফাযিল কামিলের সার্টিফিকেট ইস্যু হত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে। তবে পরবর্তীতে কখন সার্টিফিকেট প্রদানের কাজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা মাদরাসা বোর্ডে ন্যস্ত হয় এবং তার জন্য মাদরাসা ছাত্রদের কোনো আন্দোলন বা দাবি ছিল কিনা তা পৃথক গবেষণার দাবি রাখে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে মুসলিম জনতার এতখানি সেন্টিমেন্ট জড়িত থাকা সত্তে¡ও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি অবহেলা ও অনীহা দেখানোর মানসিকতা দেশের ওলামা, পীর-মাশায়েখদের মধ্যে কীভাবে সংক্রমিত হল তার কারণ খুঁজে পাই না।
আরবি থেকে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় : বলছিলাম মাদরাসা শিক্ষার উচ্চতর মান নির্ণায়ক আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের কথা। এ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এদেশের মুসলিম নেতৃবৃন্দ বহু স্বপ্ন রচনা করেছিলেন। এমনকি উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অকুতোভয় নেতা মওলানা মুনিরুজ্জমান ইসলামাবাদী চট্টগ্রামের আনোয়ারার দেয়াং পাহাড়ে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি বরাদ্দ করেছিলেন। ১৯৮০ সালে বায়তুশ শরফের মরহুম পীর ছাহেব মওলানা আব্দুল জব্বার (র) সেই জমি পরিদর্শনের জন্য একবার সদলবলে সফর করেছিলেন এবং সফরসঙ্গীদের মধ্যে আমারও থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল।
মাদরাসা ছাত্রদের একমাত্র প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন জমিয়তে তোলাবায়ে আরাবিয়ার দীর্ঘ সংগ্রামী ইতিহাস জুড়ে রয়েছে আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি। পাকিস্তান আমলের শেষ দিকে মাদরাসা অঙ্গনে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র সংঘের আন্দোলনের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে জমিয়তে তোলাবায়ে আরাবিয়ার বানান জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ায় রূপান্তরিত হয় এবং মাদরাসা তথা আরবি শিক্ষার উন্নয়নের লক্ষে স্বতন্ত্র আরবি বিশ্ববিদ্যালয় দাবিতেও সংস্কার আসে এবং তা ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় নাম ধারণ করে। এদিকে মাদরাসা শিক্ষকদের সংগঠন জমিয়তুল মুদাররেসীন ১৯৬২ সাল থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে সোচ্চার হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা : নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত সব সরকার এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌক্তিকতা মেনে নিলেও তা বাস্তবায়ন করতে ভয় পেয়েছে। তাদের ভয় ছিল, না জানি কখন ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কর্মজীবনে প্রবেশ করে এবং দেশ ইসলামী প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়ে যায়। আর দেশের নেতৃত্ব তাদের হাতে চলে যায় । কিন্তু ইসলামী চেতনার লালন এবং মুসলিম স্বতন্ত্র জাতিসত্তার উজ্জীবনই যে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ হতে পারে, সে সত্যটি ক্ষমতাসীনরা যখন বুঝতে পারে তখন সময় অনেক দেরি হয়ে যায় এবং পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এ ধরনের বিলম্বিত উপলব্ধি থেকেই পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী বরাবর ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবির প্রতি উপেক্ষা দেখালেও একেবারে জান বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে ১৯৭০ সালে ঢাকার অদূরে সাভারে জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করে। তখনও পাকিস্তানী শাষকগোষ্ঠী ইসলামী নামের ব্যাপারে সতর্কতা দেখিয়ে ইসলামী বা আরাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে বিশ^বিদ্যালয়ের নামের মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয় এবং তা বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে বর্তমানে ইসলামী শিক্ষা সংস্কৃতি চর্চার পরিবেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।