মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : ব্রেক্সিট ইস্যুটি এই দশকেই বিশ্ব অর্থনীতির তালিকা থেকে ব্রিটেনকে পেছনে ঠেলে দেবে বলে বিশেষজ্ঞরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন। এরই মধ্যে এক পরিসংখানে দেখা যায়, ব্রেক্সিটের নেতিবাচক প্রভাব ব্রিটিশ মুদ্রাকে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এই পরিণতি অব্যাহত থাকলে ব্রিটেন শিগগিরই বিশ্ব অর্থনীতির সরণির পঞ্চম থেকে অষ্টম স্থানে চলে যাবে। সেন্টার ফর ইকোনোমি অ্যান্ড বিজনেস রিচার্স (সেবার) গবেষকরা বলছেন, স্টার্লিং-এর মুদ্রামান ইতিমধ্যে ১৮ ভাগ এবং ইউরোর তুলনায় ১০ ভাগ নেমে গেছে। গত ২৩ জুনের পর থেকে তারা লক্ষ্য করে ছেন ব্রিটিশ মুদ্রা মান পড়তে শুরু করে। দেখা যাচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করার পক্ষে ভোটাভোটির পর ব্রিটেনের আর্থিক বাজারে যে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে তা মোটেই আনন্দদায়ক নয়। এশিয়ার বাজারের লেনদেন শুরু হলে পাউন্ডের দাম ডলারের বিপরীতে কমেছে ১০ শতাংশের বেশি যা গত ৩১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ইয়েনের বিপরীতে এর অবস্থান আরও করুন। বিনিয়োগকারীরা নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে। ইউরোপের বাজারেও এশিয়ার বাজারের মতো দরপতন হতে থাকে এবং ১০ শতাংশের মতো দরপতন ঘটে।
বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তাকে ঘৃণা করেন এবং গণভোটের ফলাফল এই অনিশ্চয়তাকেই বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু এশিয়ার তারল্য বাজারের দরপতন দিয়ে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর প্রভাব নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আগাম মন্তব্য হয়ে যাবে। অবশ্যই বাজার কখনও কখনও একটু বেশিই প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে থাকে। বিশ্বের মোট উৎপাদনের মাত্র ৩.৯ শতাংশ ব্রিটেনের। তাই আমেরিকা বা চীন যেভাবে বিশ্ববাজারে ফেলতে পারে ততটা সক্ষমতা ব্রিটেনের নেই। আবার আমেরিকার অর্থনীতি সাম্প্রতিক সময়ে অনেকটাই মন্থর হয়ে পড়েছে এবং চীনও তাদের বিশাল অঙ্কের ঋণের বোঝা কতটা সামর্থ্যরে সঙ্গে বহন করতে পারে তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। ব্রিটেনের অর্থনীতির গভীর প্রভাব রয়েছে ইউরোপের ওপর, যেখানে ব্রিটেন একটি গ্রহণযোগ্য ভোক্তা দেশ। এবং ইউরোপীয় প্রবৃদ্ধিতে যে কোনো ধরনের বাধাকে এখন সুনির্দিষ্টভাবেই স্বাগত জানানোর সুযোগ নেই।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ড কাল সকালে বলেছে, এর জন্য তাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। ব্যাংকটি হয়তো এখন তার মূল সুদের হারের মাত্রাকে কমাবে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে হয়তো তাদের পরিমাণগত সহায়তা কর্মসূচিকেও পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। ব্রিটেনের অর্থনীতিতে তাই মন্দার আশঙ্কাই রয়েছে। ব্রিটেনের একক বাজারের সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যোগসূত্রে অন্য অঞ্চলের বাজারগুলোতে প্রবেশগম্যতার অনিশ্চয়তায় কর্পোরেট বিনিয়োগও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অস্থিতিশীল সময়ে ব্যবসায় খরচের পরিমাণ যে কোনো পরিমাণেই কম হয়ে থাকে।
ভোক্তাদের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। যারা ইইউ ত্যাগের পক্ষে ভোট দিয়েছেন তাদের বেশিরভাগই মনে করতে পারেন যে ব্রেক্সিট ভোটের কারণে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা মূলত ভোটারদের ভীত করার একটি কৌশল। যদি তাই হয়, তারা তাদের খরচের পরিমাণ রাতারাতি কমিয়ে দিবে না। কিন্তু অর্থনীতিতে কালো ছায়ার আশঙ্কা স্পষ্ট হয়ে উঠছে, বড় বড় খরচের খাত সম্ভবত সঙ্কুচিত হতে যাচ্ছে। পাউন্ডের পতনের ফলে মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে যা প্রকৃত আয় কমিয়ে দিবে। কিছু কর্মসংস্থান বাদ যাবে। কর্মঘণ্টা ও বেতনের প্রবৃদ্ধি কমবে। এবং ব্রিটেনের এমন একটি মন্দা ইউরোপের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব রাখতে সক্ষম। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, ব্রিটেনের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে যতটুকুই হ্রাস হোক না কেন ইউরোপের অর্থনীতি তার অর্ধেক হারে কমবে।
ব্রেক্সিট অন্যভাবে বিশ্ব অর্থনীতিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বড় একটি আশঙ্কা হলো, আর্থিক ঝুঁকি থেকে পশ্চাদপসরণের সীমা বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির ফাঁকফোকড়গুলোকে প্রভাবিত করবে, বিশেষ করে চীন ও দক্ষিণ ইউরোপকে। অক্টোবরে ইতালির নিজেদের সংবিধান পরিবর্তন নিয়ে একটি গণভোট রয়েছে। ইতালির সংস্কার-মনস্ক প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেনজি বলেছেন, ওই গণভোটে তার বিরুদ্ধে ফলাফল এলে তিনি পতদ্যাগ করবেন। ব্রেক্সিট গণভোট সেই সম্ভাবনারই পক্ষে সহায়ক হবে। দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক এমন আরও ভোটের কারণ হতে পারে। ইউরোপীয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক বন্ড কিনে সেই উদ্বেগের লক্ষণকে ভাসিয়ে দিতে হস্তক্ষেপ করতে পারে। কিন্তু তারা দুর্বল প্রবৃদ্ধির অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলো নির্মূলে খুব বেশি কিছু করার নেই তার। ব্রেক্সিট থেকে চীন পর্যন্ত সংযোগ রেখা টানা অত্যন্ত কঠিন। ইউরোপের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়লে তা অবশ্যই চীনের রপ্তানিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সম্ভবত আরও বড় একটি ঝুঁকি হলো ডলারের শক্তিশালী অবস্থান; ইউরোপের মুদ্রা দুর্বল হতে থাকলে তা ইউয়ানকে নতুন করে আরও বেশি চাপের মুখে ফেলতে পারে। সূত্র: দ্য ইনডিপেন্ডেন্ট, ইকোনমিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।