বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
‘বরকত’ শব্দের পূর্ববর্তী আলোচনার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে আল কুরআনে ব্যবহৃত ‘বারাকনা’ শব্দের অবশিষ্ট উদ্ধৃতি সহৃদয় পাঠক ও পাঠিকাদের সামনে পেশ করা হচ্ছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস সম্মানিত অনুসন্ধানীমহল তা সানন্দ চিত্তে গ্রহণ করবেন। (গ) ইরশাদ হয়েছে : এবং আমি তাকে (ইবরাহীম) ও লুতকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলাম সে দেশে, যেখানে আমি বরকত রেখেছি সৃষ্টি জগতের জন্য। (সূরা আম্বিয়া : ৭১)। (ঘ) ইরশাদ হয়েছে : আর সুলাইমানের বশীভ‚ত করে দিয়েছিলাম প্রবল বায়ূকে, সেটা তার আদেশে সে দেশের দিকে প্রবাহিত হত, যেখানে আমি প্রভ‚ত কল্যাণ রেখেছি; আর প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কে আমিই সম্যকজ্ঞানী। (সূরা আম্বিয়া : ৮১)।
(ঙ) ইরশাদ হয়েছে : আর তাদের ও যেসব জনপদের মধ্যে আমি বরকত দিয়েছিলাম, সেগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে আমি দৃশ্যমান বহু জনপদ স্থাপন করেছিলাম এবং ঐসব জনপদে ভ্রমণের যথাযথ ব্যবস্থা করেছিলাম, বলেছিলাম, তোমরা এ সব জনপদে দিনে ও রাতে নিরাপদে ভ্রমণ কর। (সূরা সাবা : ১৮)।
(চ) ইরশাদ হয়েছে : আর আমি বরকতদান করে ছিলাম ইবরাহীমের ওপর এবং ইসহাকের ওপরও, তাদের উভয়ের বংশধরদের মধ্যে কিছু সংখ্যক মুহসিন এবং কিছু সংখ্যক নিজেদের প্রতি স্পষ্ট অত্যাচারী। (সূরা সাফফাত : ১১৩)। প্রসঙ্গত মনে রাখা দরকার যে চলমান পৃথিবীতে বরকতের বিকাশ দু’রকমে ঘটে থাকে।
যেমন: (এক) কখনো মূল বস্তুটি প্রকৃতভাবেই বেড়ে যায়। এই প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে ধারণা ও কল্পনা করা যায় না। পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মুজিযা সংক্রান্ত সহীহ, সঠিক ও বিশুদ্ধ রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, একটা সাধারণ ও ছোট পাত্রের পানি দ্বারা গোটা কাফেলার লোকজন পরিতৃপ্ত হয়েছে। আবার এমনও হয়েছে যে, সামান্য খাদ্যদ্রব্য দ্বারা একটা বিরাট সমাবেশের লোকজনদের পেট পুরে খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহপাকের দেয়া বরকতের ফলেই এমনটি হয়েছে।
৬. আর ‘তাবারাকা’ ক্রিয়া পদটি আল কুরআনে নয় বার ব্যবহৃত হয়েছে। যথা : (ক) ইরশাদ হয়েছে : জেনে রেখ, সৃজন ও আদেশ তাঁরই (আল্লাহরই)। কুল মাখলুকাতের প্রতিপালক আল্লাহ কত বরকতময়। (সূরা আরাফ : ৫৪)। এখানে ‘তাবারাকা’ শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে এবং আরো আটটি আয়াতে একই শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এই শব্দের দু’টি অর্থ হতে পারে। এর এক অর্থ তিনি (আল্লাহ) প্রশংসা ও সম্মানের অধিকারী। আর এর দ্বিতীয় অর্থ তাঁর (আল্লাহর) কল্যাণ ও বরকত বৃদ্ধি পেয়েছে। (ফাতহুলকাদীর)।
(খ) ইরশাদ হয়েছে : অতএব (দেখে নিন) সর্বোত্তম ¯্রষ্টা আল্লাহ কত বরকতময়। (সূরা মুমিনুন)। (গ) ইরশাদ হয়েছে : কত বরকতময় তিনি (আল্লাহ)! যিনি স্বীয় বান্দাহর (রাসূলের) ওপর ফুরকান (সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী কুরআন) নাযিল করেছেন। সৃষ্টি জগতের প্রতি সতর্ককারী হওয়ার জন্য। (সূরা ফুরকান : ১)।
(ঘ) ইরশাদ হয়েছে : কত বরকতময় তিনি (আল্লাহ)! যিনি ইচ্ছা করলে আপনাকে দিতে পারেন-এর চেয়ে উৎকৃষ্ট বস্তু, উদ্যানসমূহ যার পাদদেশে নদী-নালা প্রবাহিত এবং তিনি আপনাকে দিতে পারেন প্রাসাদ সমূহ। (সূরা ফুরকান : ১০)।
(ঙ) ইরশাদ হয়েছে : কত বরকতময় তিনি (আল্লাহ)! যিনি নভোমÐলে বিশাল তারকাপুঞ্জ সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে প্রদীপ (সূর্য) ও আলো বিকিরণকারী চাঁদ স্থাপন করেছেন। (সূরা ফুরকান : ৬১)। (চ) ইরশাদ হয়েছে : তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক। সুতরাং কুল মাখলুকাতের প্রতিপালক আল্লাহ কত বরকতময়। (সূরা মুমিন : ৬৪)। (ছ) ইরশাদ হয়েছে : আর তিনি (আল্লাহ) বরকতময় যাঁর কর্তৃত্বে আসমান সমূহ রয়েছে, জমিন ও এ দুয়ের মধ্যবর্তী সব কিছু। (সূরা যুখরুফ : ৮৫)।
(জ) ইরশাদ হয়েছে : কত বরকতময় আপনার প্রতিপালকের নাম যিনি মহিমাময় ও মহানুভব। (সূরা আর রাহমান : ৭৮)। (ঝ) ইরশাদ হয়েছে : বরকতময় তিনি (আল্লাহ), যাঁর হাতে সর্বময় কর্তৃত্ব, আর তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। (সূরা মুলক : ৬৭)। এখানে সর্বময় কর্তৃত্ব ও রাজত্ব বলে, আকাশ ও পৃথিবী এবং দুনিয়া ও আখেরাতের সার্বিক কর্তৃত্ব বুঝানো হয়েছে। (তাফসীরে কুরতুবী)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।