বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
‘বরকত’ শব্দটির সাথে পরিচিত নয়, এমন মুমিন-মুত্তাকী লোক খুঁজে পাওয়া প্রকৃতই অসম্ভব। কেননা সকল আসমানী কিতাবেই সেগুলোর ভাষায় বরকত অর্থবোধক শব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে সর্বশেষ আসমানী কিতাব আল কুরআনে বরকত শব্দটি ক্রিয়ামূল ও শব্দমূল হিসেবে এবং সম্বন্ধপদ ও বিভিন্ন ক্রিয়ার রূপে সর্বমোট আটাশ বার ব্যবহৃত হয়েছে। বরকত শব্দের আভিধানিক অর্থ, কল্যাণ ও মঙ্গল। আর-এর ব্যবহারিক অর্থ প্রবৃদ্ধি, শ্রীবৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ। আর বরকতের মূল হচ্ছে কোনো কিছু নিয়মিত থাকা। এতদপ্রসঙ্গে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : আর যদি সেসব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তবে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আসমান ও জমিনের বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম। (সূরা আরাফ : ৯৬)।
এই আয়াতে কারীমায় আসমান ও জমিনের সমস্ত বরকত খুলে দেয়ার উদ্দেশ্য হলো সবরকম কল্যাণ সকল দিক থেকে খুলে দেয়া। অর্থাৎ লোকজনের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক সময়ে আসমান হতে বৃষ্টি বর্ষিত হওয়া, জমিন থেকে যে কোনো বস্তু তাদের মন মতো উৎপাদিত হওয়া এবং সেসব বস্তু দ্বারা তাদের লাভবান হওয়া এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দের ব্যবস্থা করে দেয়া।
আল্লাহপাক ঈমানদার মুত্তাকীদের জন্য তাই অতীতে করেছেন, বর্তমানেও করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। এর কোনো অন্যথা হবে না। (বাগাভী; ফাতহুল কাদীর)। তাতে তাদেরকে এমন কোনো চিন্তা ভাবনা কিংবা টানাপড়েনের সম্মুখীন হতে হয়নি, যার দরুন বড় বড় সহজলভ্য নেয়ামত লাভে বিঘেœর সৃষ্টি হয়। ফলে, তাদের প্রতিটি বিষয়ে বরকত, কল্যাণ ও প্রবৃদ্ধি ঘটতেই থাকে।
এ পর্যায়ে আমরা আল কুরআনে ‘বরকত’ শব্দের ব্যবহারিক রূপের সাথে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করব। আসুন, এ দিকে অগ্রসর হওয়া যাক। তবে, অবশ্যই স্মরণ রাখা দরকার যে, বরকত শব্দটি এক বচনে আল কুরআনে ব্যবহৃত হয়নি। বরং এর বহু বচনের ব্যবহারই লক্ষ্য করা যায়।
১. বহু বচনে ‘বারাকাতিন’ রূপে আল কুরআনেই এই শব্দটি দু’বার এসেছে। যেমন- (ক) ইরশাদ হয়েছে : আর যদি সেসব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তবে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আসমান ও জমিনের বরকত সমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যারোপ করেছিল; কাজেই আমি তাদের কৃত কর্মের জন্য পাকড়াও করেছি। (সূরা আল আ’রাফ : ৯৬)।
(খ) ইরশাদ হয়েছে : বলা হল, হে নূহ! আমার পক্ষ থেকে শান্তি ও কল্যাণসহ অবতরণ কর এবং তোমার প্রতি ও যেসব সম্প্রদায় তোমার সাথে রয়েছে তাদের প্রতি; আর কিছু সম্প্রদায় রয়েছে আমি তাদেরকে জীবন উপভোগ করতে দেব, পরে আমার পক্ষ থেকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে স্পর্শ করবে। (সূরা হুদ : ৪৮)।
২. আর বহুবচন সম্বন্ধপদ ‘বারাকাতুহু’ রূপে এসেছে একবার। (ক) ইরশাদ হয়েছে : তারা বলল, আল্লাহর কাজে আপনি বিস্ময় বোধ করছেন? হে নবী পরিবার! আপনাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও বরকত সমূহ। তিনি তো প্রশংসার যোগ্য ও অত্যন্ত সম্মানিত। (সূরা হুদ : ৭৩)। আর ‘বারাকাতুন’ ক্রিয়া মূল হতে উদগত শব্দ সমূহের বহুমুখী ব্যবহার আল কুরআনে লক্ষ্য করা যায়। যেমন বারাকা, বুরিকা, বারাকনা, তাবারাকা, মুবারাকুন ও মুবারাকাতুন। আসুন, এবার এ সকল শব্দাবলির ব্যবহারিক রূপের সাথে পরিচিত হই।
৩. ‘বারাকা’ ক্রিয়া পদটি আল কুরআনে একবার ব্যবহৃত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : এবং তিনি ভ‚পৃষ্ঠে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন এবং তাতে ‘বরকত’ দিয়েছেন, এবং প্রার্থনাকারীদের জন্য সমভাবে এতে খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন। (সূরা হা-মীম আস্ সেজদাহ বা ফুস্সিলাত : ১০)।
৪. আর ‘বুরিকা’ ক্রিয়া পদটি একবার ব্যবহৃত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : অতঃপর তিনি মূসা (আ:) যখন সেটার (আলোর) কাছে আসলেন, তখন ঘোষিত হল : বরকতময় যা আছে এ আলোর মধ্যে এবং যা আছে এর চারপাশে, আর সৃষ্টিকুলের প্রতিপালক আল্লাহ পবিত্র ও মহিমান্বিত। (সূরা আন্ নামল : ৮)।
৫. আর ‘বারাকনা’ ক্রিয়া পদটি আল কুরআনে ছয় বার ব্যবহৃত হয়েছে। যথা : (ক) ইরশাদ হয়েছে : জেনে রেখ, সৃজন ও আদেশ তাঁরই (আল্লাহরই), সৃষ্টিকূলের প্রতিপালক আল্লাহ কত বরকতময়। (সূরা আল আ’রাফ : ৫৪)।
(খ) ইরশাদ হয়েছে : পবিত্র মহিমময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাহ রাসূলুল্লাহ (সা.) কে রাতের বেলায় ভ্রমণ করালেন মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত রেখে দিয়েছি, যেন আমি তাঁকে আমার নিদর্শন দেখাতে পারি; তিনিই সর্ব¯্রােতা, সর্বদ্রষ্টা। (সূরা বণী-ই¯্রাঈল : ১)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।