মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশে পেঁয়াজ এখন রীতিমতো বিলাসী পণ্য। পেঁয়াজ মাংসের স্বাদ বাড়ায়। তবে দেশটিতে পেঁয়াজই বিক্রি হচ্ছে মাংসের চেয়েও বেশি দামে। এমন দামি পেঁয়াজকে সাজের অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করেছেন কনেও। বিয়ের অনুষ্ঠানে ফুলের বদলে কনের হাতে দেখা গেছে পেঁয়াজ। এই দেশের নাম ফিলিপাইন। সেখানকার বেশির ভাগ রেস্তোরাঁয় ঢুকলে একটা লেখা চোখে পড়বে, ‘নো অনিয়ন টপিং’। অর্থাৎ ওই রেস্তোরাঁয় পেঁয়াজ ব্যবহার করে কোনো খাবার সাজানো হয় না। খাবারে পেঁয়াজের বেরেস্তাও দেওয়া হয় না। পেঁয়াজের সরবরাহ সংকট ও বাড়তি দামের কারণে দেশটির বেশির ভাগ রেস্তোরাঁ এমন লেখা ঝুলিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে ফিলিপাইনে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছিল প্রায় ৭০০ পেসো (স্থানীয় মুদ্রা) বা ১৩ ডলারের কাছাকাছি। মাংসের চেয়েও বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে দেশটিতে। এমনকি পেঁয়াজের দাম ফিলিপাইনের ন্যূনতম দৈনিক মজুরিকে ছাড়িয়ে গেছে। ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলের সেবু শহরে একটি পিৎজার দোকান রয়েছে রিজালদা মাউনেসের। বিবিসিকে তিনি বলেন, যদিও গত কয়েক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম সামান্য কমে এসেছে, তার পরও তা অনেকের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। অনেক ভোক্তার কাছেই পেঁয়াজ কেনা এখন রীতিমতো বিলাসিতা। গত কয়েক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম সামান্য কমে এসেছে, তার পরও তা অনেকের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। অনেক ভোক্তার কাছেই পেঁয়াজ কেনা এখন রীতিমতো বিলাসিতা। রিজালদা মাউনেসের ভাষ্য, আমাদের আগে প্রতিদিনের রান্নার জন্য ৩ থেকে ৪ কেজি পেঁয়াজ লাগত। এখন তা কমে এসেছে। দাম আকাশছোঁয়া এখন প্রতিদিন মাত্র আধা কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারছি। ভারতীয় উপমহাদেশের মতো ফিলিপাইনের রন্ধনশৈলীতে পেঁয়াজ একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। পেঁয়াজ এখন দেশটির মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। মূল্যস্ফীতির জেরে দেশটিতে খাবার ও জ্বালানিসহ সবকিছুর দাম আকাশ ছুঁয়েছে। গত মাসে ফিলিপাইনে মূল্যস্ফীতি ১৪ বছরের সর্বোচ্চে উঠেছে। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র খাবারের মূল্য বৃদ্ধিকে ‘জরুরি পরিস্থিতি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় চলতি মাসের শুরুতে তিনি লাল ও হলুদ পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দিয়েছেন। আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ বাড়িয়ে পেঁয়াজের দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রাখা এর লক্ষ্য। ফেব্রæয়ারিতে ফিলিপাইনে ফসল কাটার মৌসুম। বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিলিপাইনের অর্থনীতি মন্দার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করায় বাজারে চাহিদা বেড়েছে, তাতে এমনিতেই দাম বেড়েছে। এর মধ্যে আবার বৈরী আবহাওয়ায় পেঁয়াজ ও অন্যান্য খাদ্যপণ্যের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তাতে দাম আরও বেড়েছে। এই সংকটের বড় কারণ প্রতিক‚ল আবহাওয়ায় পেঁয়াজের সরবরাহ সীমিত হয়ে আসা। আইএনজি ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ নিকোলাস মাপা বলেন, ফিলিপাইনের কৃষি বিভাগ গত বছরের আগস্টে দেশটিতে খাদ্যসংকটের পূর্বাভাস দিয়েছিল। এর পর দুটি শক্তিশালী ঝড় ফিলিপাইনে আঘাত হানে। এর ফলে পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ফসল যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। ফিলিপাইনের সেবু শহরে রাস্তার পাশের খাবারের দোকানগুলো স্থানীয় মানুষজন ও পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এসব দোকানে ভাজা সবজি, মাংস এবং সামুদ্রিক খাবার প্রচুর পেঁয়াজ আর সস দিয়ে পরিবেশন করা হয়। কিন্তু মূল্যস্ফীতির জেরে এসব দোকান বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়েছে। শহরটিতে রাস্তার পাশে খাবারের দোকান চালান অ্যালেক্স চুয়া। তিনি বলেন, ‘আমার দোকানের যেসব খাবার পাওয়া যায়, তাতে পেঁয়াজ অত্যাবশ্যকীয় একটি উপাদান। খাবারে খানিকটা ঝাঁঝ ও মিষ্টি ভাব যোগ করে পেঁয়াজ। তাই খাবারে পেঁয়াজ দিতেই হয়।’ ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র খাবারের মূল্য বৃদ্ধিকে ‘জরুরি পরিস্থিতি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় চলতি মাসের শুরুতে তিনি লাল ও হলুদ পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দিয়েছেন। আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ বাড়িয়ে পেঁয়াজের দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রাখা এর লক্ষ্য। অ্যালেক্স চুয়া আরও বলেন, বাজারে পেঁয়াজের বাড়তি দাম নিয়ন্ত্রণে বর্তমান সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে, নিচ্ছে। এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। মজার বিষয় হলো, বাড়তি দামের ‘বিলাসী পণ্য’ পেঁয়াজ ফিলিপাইনের বিয়েতেও জায়গা করে নিয়েছে। গত এপ্রিলে দেশটির ইলোইলো শহরের তরুণী লাইকা বিয়ে করেন। তিনি বিয়ের পোশাকের সঙ্গে ফুলের বদলে পেঁয়াজ হাতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে আলোচনার জন্ম দেন তিনি। স্থানীয় একটি পত্রিকাকে লাইকা বলেন, ‘বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে ফুল শুকিয়ে যাবে, শেষ পর্যন্ত ফেলে দিতে হবে। তাই আমি আমার বরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ফুলের বদলে আমরা পেঁয়াজ ব্যবহার করতে পারি কি না। পরে বিয়ের অনুষ্ঠানে ফুলের জায়গা নেয় পেঁয়াজ।’ পেঁয়াজের বাড়তি দাম ও সরবরাহ সংকট প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রকে চাপে ফেলে দিয়েছে। তিনি দেশটির প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি কৃষি মন্ত্রণালয় নিজের হাতে রেখে সামলাচ্ছেন। মার্কোস জুনিয়র দেশে খাবারের উৎপাদন বাড়ানোর প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। এখন সংসদ সদস্যদের কেউ কেউ অন্য কাউকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি তুলছেন। সংকটের জেরে ফিলিপাইনে পাচার হয়ে আসছে পেঁয়াজ। চলতি মাসের শুরুর দিকে ফিলিপাইন এয়ারলাইনসের ১০ জন ক্রুকে লাগেজে করে প্রায় ৪০ কেজি পেঁয়াজ ও ফল আনার অভিযোগে তদন্তের মুখে পড়তে হয়। শুল্ক কর্মকর্তারা পরে জানান, ওই ক্রুদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে যাত্রীরা যেন অনুমতি ছাড়া পণ্য না আনেন, সে বিষয়ে সতর্ক করেছেন তাঁরা। ফিলিপাইনে পেঁয়াজের বাড়তি দাম ও সরবরাহ সংকট প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রকে চাপে ফেলে দিয়েছে। তিনি দেশটির প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি কৃষি মন্ত্রণালয় নিজের হাতে রেখে সামলাচ্ছেন। মার্কোস জুনিয়র দেশে খাবারের উৎপাদন বাড়ানোর প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। এখন সংসদ সদস্যদের কেউ কেউ অন্য কাউকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি তুলছেন। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি নিয়ে স¤প্রতি এক শুনানিতে অংশ নেন ফিলিপাইনের সিনেটর গ্রেস পো। ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগে ছিল চিনি, এখন যুক্ত হয়েছে পেঁয়াজ। রান্নাঘরের জিনিসপত্র নিয়ে শুনানি করতে করতে আমাদের দিন শেষ হবে।’ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কান্টার ওয়ার্ল্ড প্যানেল কনসালটেন্সির পরামর্শক মেরি-অ্যান লেজোরাইন ফিলিপাইনের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন। তাঁর মতে, ফিলিপাইনের মতো একটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন বড় হুমকি। তিনি আরও বলেন, ফিলিপাইনের বেশির ভাগ ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা বেশ সীমিত। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁদের কেবল অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনায় মনোযোগ দিতে হচ্ছে। এই অবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্যঘাটতি আর খাবারের দাম যদি আরও বেড়ে যায়, তাহলে সাধারণ মানুষের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদ নিকোলাস মাপার মতে, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় সরকারের পক্ষ থেকে বেশি বেশি পেঁয়াজ আমদানি করা। তিনি বলেন, ফেব্রæয়ারিতে ফিলিপাইনে ফসল কাটার মৌসুম। বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠবে। এই সময়ে আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে থাকলে দাম নাটকীয়ভাবে আসতে পারে। বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।