মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারত সরকার জরুরী ক্ষমতা ব্যবহার করে বিবিসির একটি তথ্যচিত্রের সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে যেখানে দাবি করা হয়েছিল যে, রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘সরাসরি দায়ী’।
সরকার ইউটিউব এবং টুইটার উভয়কে দেশের তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের অধীনে জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করে বিবিসির দুই পর্বের সিরিজ ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ এর বিষয়বস্তু বøক করার জন্য আদেশ জারি করেছে, সরকারের একজন উপদেষ্টা কাঞ্চন গুপ্তা শনিবার তার টুইটার হ্যান্ডেলে বলেছেন। ‘তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বিবিসি ওয়ার্ল্ড এর বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণা ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’-এর প্রথম পর্বের একাধিক ইউটিউব ভিডিও বøক করার নির্দেশনা জারি করেছে। এই ভিডিওগুলোর লিঙ্ক সহ ৫০টিরও বেশি টুইট বøক করার জন্য টুইটারকেও আদেশ জারি করা হয়েছিল,’ তিনি একটি টুইটার থ্রেডে বলেছেন।
গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যে তথ্যচিত্রটির প্রথম পর্ব প্রচার করেছে বিবিসি। ৫৯ মিনিটের ডকুমেন্টারিটি ভারতে প্রচারিত হয়নি, যদিও এটি টুইটার এবং ইউটিউবে ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়েছিল, যা দেশের সবচেয়ে মারাত্মক ধর্মীয় দাঙ্গায় মোদির ভ‚মিকা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। বিবিসি ডকুমেন্টারিতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দফতর থেকে পূর্বে প্রকাশিত একটি অপ্রকাশিত প্রতিবেদন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যেটি গুজরাট সহিংসতা ঘটাতে সক্ষম হওয়া ‘দায়মুক্তির পরিবেশের’ জন্য মোদিকে ‘সরাসরি দায়ী’ বলে উল্লেখ করেছে। ফেব্রæয়ারী ২০০২-এর সে দাঙ্গায় ১ হাজার জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছিল - যাদের বেশিরভাগই ছিল মুসলিম - যখন তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তদানীন্তন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাক স্ট্র-র নির্দেশে সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঐ দাঙ্গার পর গুজরাটে একটি অনুসন্ধানী দলও পাঠিয়েছিল, তাদের সেই রিপোর্টকেও বিবিসির তথ্যচিত্রে উদ্ধৃত করা হয়েছে। তবে ভারতে বিবিসির পক্ষ থেকে ওই তথ্যচিত্রটি টেলিভিশনে বা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার করা হয়নি।
এদিকে, তথ্যচিত্রের লিঙ্ক ভারত সরকার ইউটিউবে বøক করতে বলার পরও ভারতের বিরোধী দলীয় নেতা-নেত্রীরা সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে সোশ্যাল মিডিয়াতে তা পোস্ট করছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি মহুয়া মৈত্র ও ডেরেক ও ব্রায়েন – দুজনেই ওই তথ্যচিত্রের ভিডিও লিঙ্ক টুইট করেছেন। এআইএমআইএম নেতা ও হায়দ্রাবাদের এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি টুইটারে লিখেছেন, সরকার বিবিসির তথ্যচিত্র বøক করতে পারে - কিন্তু জাতির জনকের হত্যাকারী নাথুরাম গোডসেকে নিয়ে চলচ্চিত্র আটকাতে পারে না।
পার্লামেন্টে সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভাষণ দেয়ার জন্য পরিচিত মহুয়া মৈত্র লেখেন, ‘দু:খিত, সেন্সরশিপ মেনে নেয়ার জন্য বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রর প্রতিনিধিত্ব করতে নির্বাচিত হইনি। এই দিলাম লিঙ্ক - যতক্ষণ আছে তার মধ্যে দেখে নিন।’ বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে ‘সম্রাট ও তার পারিষদরা’ যে এত নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, সেটাও ‘চরম লজ্জার’ বিষয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। পার্লামেন্টে মৈত্রর সতীর্থ ডেরেক ও ব্রায়ান জানান, টুইটারে তার পোস্ট করা লিঙ্কটি তিনদিন টিঁকতে পেরেছিল - তার মধ্যেই লাখ লাখ মানুষ সেটি দেখে ফেলেছেন। শিবসেনার এমপি প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী লেখেন, ‘আজকের এ ভিপিএনের যুগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় আইনের যে বিশেষ ধারা প্রয়োগ করে বিবিসি ডকুমেন্টারি নিষিদ্ধ করতে চাইছে তাতে কি আদৌ কাজ হবে?’ ‘বরং আপনি যত বাধা সৃষ্টি করতে চাইবেন, যত প্রতিবাদসূচক চিঠি লিখবেন, ততই মানুষ সেটি দেখার জন্য উৎসুক হয়ে উঠবেন’, মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব অপূর্ব চন্দ্রা আইটি অ্যাক্ট ২০২১-র একটি ধারাকে উদ্ধৃত করে বিবিসির ওই তথ্যচিত্রটির প্রথম পর্ব ভারতে বøক করার জন্য ইউটিউবকে নির্দেশ দেন। ওই লিঙ্ক যারা টুইটারে শেয়ার করছেন, সেই টুইটগুলি সরানোর জন্যও টুইটার কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা কাঞ্চন গুপ্তা এ খবর সোশ্যাল মিডিয়াতে নিশ্চিত করেন। দ্য ইকোনমিক টাইমস পত্রিকা জানিয়েছে, রোববার বিকেল পর্যন্ত ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ নামে এই তথ্যচিত্রটির লিঙ্ক আছে, এমন অন্তত পঞ্চাশটি টুইট বøক করা হয়েছে। ইতিমধ্যে যারা এই তথ্যচিত্রটির লিঙ্ক শেয়ার করছেন, ভারতের আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু তাদের কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন।
এদিকে ব্রিটেনে তথ্যচিত্রটির প্রথম পর্ব প্রচারিত হওয়ার দুদিনের মাথায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটিকে একটি ‘প্রোপাগান্ডা’ বা প্রচারধর্মী কাজ বলে বর্ণনা করে এবং এতে ‘ঔপনিবেশিক মানসিকতা’র পরিচয় ফুটে উঠেছে বলেও মন্তব্য করে। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিবিসি একটি বিবৃতিতে বলেছে, দসর্বোচ্চ সম্পাদকীয় মান অনুসরণ করে নিরলস গবেষণার ফসল এই তথ্যচিত্রটি, যেখানে বিজেপি-সহ নানা পক্ষের বক্তব্যই প্রতিফলিত হয়েছে।‘ এই তথ্যচিত্রে যে সব প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছে সেগুলো নিয়ে ভারত সরকারের বক্তব্যও জানতে চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা কোনও জবাব দিতে অস্বীকার করেছে বলেও বিবিসি জানিয়েছে। সূত্র : বিবিসি নিউজ, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।