নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
জাতীয় দলে একসঙ্গে খেলেন দুই যমজ বোন, আনাই মগিনির চেয়ে আড়াই মিনিটের ছোট আনুচিং। ২০১১ সালে বঙ্গমাতা ফুটবল দিয়ে দু’বোনেরই ক্যারিয়ার শুরু। ২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা দলের হয়ে খেলেছিলেন আনুচিং। ২০১৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৪ নারী ফুটবলে খেলেন নিজের জেলা খাগড়াছড়ির হয়ে। ২০১৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত সাফে প্রথমবার জাতীয় দলে সুযোগ পান। এরপর বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ও বয়সভিত্তিক দলের হয়ে এএফসি, সাফ, এশিয়া কাপ, জকি কাপ, ও আন্তর্জাতিক প্রীতি টুর্নামেন্টে খেলেছেন আনুচিং। ২০১৮ সালে ভুটানে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দলেও খেলেছেন আনুচিং। ২০১৯ সালে নেপালের বিরাটনগরের আসরে খেলা হয়নি তার। সবশেষ গত সেপ্টেম্বরে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে প্রথম মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী বাংলাদেশের দলের সদস্যও ছিলেন আনুচিং। চলছে অলিম্পিকের ক্যাম্প। গত শনিবার সকালেও অনুশীলন করেছেন। বিকালের টিম মিটিংয়ে ডেকে বলা হলো ব্যাগ-পত্র গুছিয়ে নাও। ক্যাম্প ছাড়তে হবে। সেদিন রাতেই উঠে পড়েন খাগড়াছড়ির বাসে। পরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছোট্ট বার্তায় ফুটবলকে বিদায় বলে দেন আনুচিং মোগিনি। পোস্টে লেখেন, ‘আজকের পর থেকে ফুটবলকে বিদায়’। পরে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ‘আমি খেলা ছেড়ে দিয়েছি। আর ফুটবল খেলব না।’
প্যারিস অলিম্পিকসের বাছাইয়ের বাংলাদেশ দলে জায়গা হয়নি আনুচিং ও সাজেদা খাতুনের। দুজনের বাদ পড়ার প্রসঙ্গে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে তাদের খেলায় উন্নতির ছাপ নেই আগের মতো, ‘আনুচিংকে আমরা ছেড়ে দিয়েছি পারফরম্যান্সের অবনতির কারণে। তবে যারাই এভাবে বাদ পড়ে তাদের বলে দেওয়া হয়, ভালো খেলে তুমি আবারও ফিরতে পারবে। এর আগে মারিয়া মান্দাও বাদ পড়েছিল ২০১৫ সালে। পরের বছর ফিরে এসে সে বয়সভিত্তিক সাফ জিতিয়েছে বাংলাদেশকে।’
বয়স হয়েছে মাত্র কুড়ি বছর। অথচ সামনে পড়ে তার অপার সম্ভাবনা। চড়াই-উতরাই থাকতেই পারে। কি কারণে এমন আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে বলেন, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে কোনো ম্যাচ খেলতে না পারা এবং ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ার হতাশা থেকেই তার এই সিদ্ধান্ত। অভিমানী কণ্ঠে আনুচিং জানান, কোচের কাছ থেকে ওই মিটিংয়ে বাদ পড়ার কারণগুলেই শুনতে চেয়েছিলেন তিনি, ‘পারফরম্যান্স ভালো না হলে বাদ পড়ব, এ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। ফুটবলে এটা হয়ই। কিন্তু অনুশীলনে রানিংয়েও আমি ভালো করেছি। সকালেও অনুশীলন করলাম আর সন্ধ্যায় ডেকে নিয়ে শুধু বলা হলো ব্যাগ গুছিয়ে নাও; ক্যাম্প ছাড়তে হবে। কেন ক্যাম্প ছাড়ব, কেন বাদ দেওয়া হলো, তা নিয়ে কেউ কিছু বলল না। বাদ পড়ার কারণগুলো তারা বলতে পারত। তাহলে কোথায় উন্নতি করতে হবে, কোন দিক নিয়ে কাজ করতে হবে, সেগুলো বুঝতে পারতাম। কিন্তু তারা কোনো ব্যাখ্যা দিল না, শুধু বলে দিল চলে যাও।’
আনুচিং মূলত যে পজিশনে খেলেন জাতীয় দলে সেখানে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। কৃষ্ণা রানি সরকার, সিরাত জাহান, শামসুন্নাহার জুনিয়রদের সঙ্গে লড়াই করে তাই একাদশে সব সময় সুযোগ পাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ে আনুচিংয়ের জন্য। নেপালে গত বছর অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সাফে তাই দলে থাকলেও একটি ম্যাচেও মাঠে নামতে পারেননি। সর্বশেষ মেয়েদের লিগে সর্বোচ্চ গোল করা আকলিমা খাতুন জাতীয় দলে ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছেন। ২০২১ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ সাফে সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন শাহেদা আক্তার। জাতীয় দলে ঢোকার অপেক্ষায় আছেন তিনিও। পারফরম্যান্স ছাড়া তাই জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়া যে কঠিন হতে পারে সেটাই বললেন গোলাম রব্বানী, ‘এখানে টিকে থাকতে হলে প্রতিযোগিতা করতে হবে। পারফরম্যান্স দেখাতে হবে। বয়সভিত্তিক দল থেকে সিনিয়র দলে ওর পজিশনে আরও অনেক ভালো মানের খেলোয়াড় আছে। তাদের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারলে, খেলায় উন্নতি করতে না পারলে তো জায়গা ছেড়ে দিতেই হবে।’
তবে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে এই চলে যাওয়াকে প্রস্থান বলেই মেনে নিচ্ছেন ২০১৬ সাল থেকে জাতীয় দলের আক্রমণভাগে খেলা আনুচিং, ‘এর আগেও এগুলোই হয়েছে। আমি কারো নাম বলতে চাই না, কিন্তু সত্যি হচ্ছে, যাদেরকে ক্যাম্প ছাড়তে বলা হয়েছে, তাদেরকে আর কখনও ফিরিয়ে আনা হয়নি। তাদের বেলায় যেটা হয়েছে, আমার বেলায়ও সেটাই হলো। তাই অবসর নিয়েছি। জীবনে স্বপ্ন ছিল ফুটবল খেলে পরিচিতি পাওয়ার, মাথা তুলে দাঁড়ানোর, পরিবারকে দেখভাল করার। সেটা কিছুটা করতে পেরেছি। কিন্তু সেই ফুটবলই আমাকে কষ্ট দিল এভাবে। অনেকে বলছেন, আমি বিয়ে, সংসার করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওগুলো নিয়ে আমার তো কোনো ভাবনাই নেই। আমার স্বপ্ন ছিল শুধু ফুটবলকে নিয়ে।’
জাতীয় দল থেকে বিদায় নিলেও ক্লাব ফুটবল চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা যেমন আছে, দোটানাও কম নয় আনুচিংয়ের, ‘শীর্ষ স্থানীয় একটি ক্লাব থেকে ফোন করেছে তাদের হয়ে খেলার জন্য। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কী হয়। বুঝতে পারছি না কি হবে? কেননা, এখন জাতীয় দলে নেই এবং আপনারা জানেন জাতীয় দলে না থাকলে কোথাও দাম থাকে না।’ এর আগে ঘরোয়া ফুটবলে খেলেছেন নাসরিন স্পোর্টিং, আতাউর রহমান ভূঁইয়া কলেজ স্পোর্টিং ও বসুন্ধরা কিংসের মতো ক্লাবের হয়ে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।