বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মুমিন তো সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহ তা’আলাকে বিশ্বাস করে। তাঁকে বিশ্বাস করে একক মাবুদ হিসেবে, একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা হিসেবে। মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করে, নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) যে দ্বীন ও শরীয়ত আমাদের কাছে নিয়ে এসেছেন, তা যথার্থভাবে মেনে চলার মধ্যেই নিহিত আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের পরিপূর্ণ সফলতা। প্রকৃত মুমিন তো সেই ব্যক্তি, নিম্নোক্ত স্বীকারোক্তি যার কণ্ঠে উচ্চারিত হয়, আর কথায়-কাজে প্রতিফলিত হয়, আল্লাহকে রব ও প্রতিপালক, ইসলামকে দ্বীন আর মুহাম্মাদ (সা.) কে নবী হিসেবে পেয়ে আমি খুশি। মুমিনের আরেক স্বীকারোক্তি, আমরা কেবল আপনারই ইবাদত করি আর আপনার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি। (সূরা ফাতেহা : ৪)।
ইবাদত-বন্দেগীর এ স্বীকারোক্তি, আপদে-বিপদে সাহায্য প্রার্থনার এ স্বীকারোক্তি মুমিন প্রদান করে প্রতিনিয়ত। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পাশাপাশি সকল ওয়াজিব-সুন্নত-নফল নামাজের প্রতি রাকাতেই আমাদেরকে এ স্বীকারোক্তি প্রদান করতে হয়। আমরা স্বীকার করি, আমাদের ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশ্যেই নিবেদিত, আমাদের সুখে-দুঃখে সকল চাওয়াও আমরা তাঁর দরবারেই নিবেদন করি। বিপদ থেকে উদ্ধার করার ক্ষমতা তাঁকে ছাড়া আর কার আছে? তিনি যদি না চান, তবে বিপদে ফেলার শক্তি আছে কার?
সকল ক্ষমতার তিনিই উৎস, তিনিই মালিক। তাই সাহায্য চাইতে হলে তাঁর কাছেই চাইতে হয়। মুমিনমাত্রই তাঁর কাছেই সাহায্যের জন্য হাত পাতে। দুনিয়ার যত ব্যবস্থাপনা, সবকিছু অবলম্বনের পরও মুমিন ব্যক্তির মনে থাকে একটিই আকুতি আল্লাহ! একমাত্র আপনিই তো আমাকে সাহায্য করতে পারেন, এ বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারেন, আপনি আমাকে সাহায্য করুন, আমার চেষ্টা সফল করুন, আমার দুয়া কবুল করুন!
যে শক্তির সামনে আমাদের এমন নিঃশর্ত সমর্পণ, সঙ্কটে-সংগ্রামে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখেন বলে একমাত্র যাঁকে আমাদের বিশ্বাস, ইবাদত তো আমরা তাঁরই করব, তাঁর সামনেই তো আমরা সিজদায় লুটিয়ে পড়ব। মুমিনের উপলব্ধি তো এমন : আমার নামাজ, আমার ইবাদত, আমার জীবন, আমার মরণ সবই বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। (সূরা আনআম : ১৬২)।
জীবন-মরণের মালিক যিনি, মুমিন তার কাছেই জীবনের সকল ক্ষেত্রে সফলতা প্রার্থনা করে। সফলতার পর তাঁর দরবারেই কৃতজ্ঞতার সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। যে কোনো ব্যর্থতায় তাঁর রহমতের আশ্বাসবাণীতেই সান্ত¡না খুঁজে বেড়ায়। যার বিশ্বাস আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছার বাইরে গিয়ে জগতের সকলে মিলেও কেউ কারো কোনো বিন্দুমাত্র উপকার করতে পারে না, কাটতে পারে না তার গায়ে একটি কাঁটার আঁচর, আল্লাহকে ছেড়ে সে কোথায় যাবে! কার কাছে যাবে! আল্লাহ তা’আলাই তার একমাত্র ভরসা। প্রার্থনাও তাঁরই প্রাপ্য, কৃতজ্ঞতার অধিকারীও তিনিই।
কথা হলো, জীবনে সফলতা লাভের জন্যে আমরা যে আল্লাহ তা’আলার শরণাপন্ন হই, সফল হলে তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করি, সে সফলতার মানদÐ কী? মুমিনের সফলতা কোথায় নিহিত? সফল মুমিনের পরিচয় কী? একজন মুমিন হিসেবে এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের প্রত্যেকের জানতেই হবে।
আমরা বিশ্বাস করি, পরকালের সফলতাই একজন মুমিনের আসল সফলতা। দুদিনের এ দুনিয়ায় জীবন সুখে-সাচ্ছন্দ্যে হোক, কষ্টে-দুঃখে হোক, কেটে তো যাবেই। এ দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। দুনিয়ার জীবনও ক্ষণস্থায়ী। ক্ষণস্থায়ী এখানকার সবকিছু। কিন্তু পরকাল যে অসীম, চিরস্থায়ী! সেখানকার সুখই আসল সুখ। সেখানেই পাওয়া যাবে অফুরন্ত নিয়ামত।
আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী সচেতন মুমিন তাই নিজের পরকালটাকেই প্রথমে সাজাতে চায় সফলতার রঙে। সেখানে সফলতায় যারা ধন্য হবে, দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের শত কষ্ট নিয়েও তাদের কোনো ভাবনা থাকবে না। দুনিয়ার যত অপ্রাপ্তি, যত ব্যর্থতা, পরকালের সফলতার পর এসব নিয়ে কারো মনেই কোনো আক্ষেপ থাকবে না, থাকবে না দুঃখের ছিটেফোঁটা।
আমরা আরো বিশ্বাস করি, এ জীবনে আমাদের সামনে দু’টি পথ খোলা। যে কেউ যে কোনো পথ ধরেই চলতে পারে। দু’দিক থেকেই আসে আহŸান। একটি ঈমান ও বিশ্বাসের পথ, মহান মালিকের সামনে নিজেকে সঁপে দেয়ার পথ এবং জীবন-জীবিকার সকল চাহিদা তাঁর বিধানের অনুগত করে দেয়ার পথ। আরেকটি কুফর ও অবিশ্বাসের পথ, গোলাম হয়েও মনিবের সঙ্গে অবাধ্যতার পথ এবং আল্লাহর বিধানকে অগ্রাহ্য করে নিজের ইচ্ছেমতো জীবন-যাপনের পথ। সংক্ষেপে বললে, একটি আল্লাহর পথ, আরেকটি শয়তানের পথ। এ তো বলাবাহুল্য, আল্লাহকে খুশি করতে চাইলে এবং পরকালের সুখ-সফলতা অর্জন করতে চাইলে আল্লাহর পথ ধরেই চলতে হবে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
শয়তান ওঁৎ পেতে আছেই বনি আদমকে কীভাবে আল্লাহ বিমুখ করবে। তার একমাত্র ‘সাধনা’ আল্লাহর বান্দাদেরকে আল্লাহর অবাধ্য করে দেয়া। এ অবাধ্যতার আবার নানা ধরন। সবচেয়ে বড় অবাধ্যতা আল্লাহ তা’আলাকে অস্বীকার করা কিংবা তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করা। এ শরীক করা হতে পারে তাঁর একক সত্তা ও সৃষ্টিকর্তা হওয়ার ক্ষেত্রে, হতে পারে ইবাদতের উপযুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রেও। এ কুফর-শিরকের অবাধ্যতায় যারা জড়িত, তাদের আমরা কাফের-মুশরিক বলি। তারা মুমিন নয়। কুফর ও শিরক ঈমানের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।