নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
খেলার শুরুতে রিয়াদের কিং ফাহাদ স্টেডিয়ামে হাজির ভারতীয় সিনেমার কিংবদন্তী অভিতাম বচ্চন। মাঠের দুই দলের খেলোয়ারদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাও করলেন। তবে আয়োজকরা হয়ত ভুলে গিয়েছিল যে একটু পরেই মাঠে নামবে বহু নক্ষত্র যার মাঝে উজ্জ্বল হয়ে আলো ছড়াবেন লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নামের ফুটবল ইতিহাসের দুই সর্বকালের সেরা। এমন ম্যাচে কি আর অযাচিত অতিথী এনে অযথা সময় ক্ষেপনের মানে আছে? আর ম্যাচ শুরু হওয়ার পর, মাঠের এই দুই ধ্রুপদী যা করলেন তাতে ২৬ কোটি টাকা দিয়ে বিশেষ ভিয়াইপি টিকেট ক্রয় করা সেই দর্শকের নিশ্চয় বলতেই পারে-প্রিতিটি টাকা উশুল তাহলে। মেসি এক গোল করলেন, রোনালদো দুই। ম্যাচ দেখল ৯ গোলের রোমাঞ্চ। রিয়াদ অল স্টার একাদশের বিপক্ষে পিএসজি তো জেতারই কথা, রোনালদো ছিলেন বলেই হয়তো যা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারল সাউদী দলটা। পিএসজির জয় ৫-৪ গোলে।
অবশ্য কে জিতল, কে হারল, সে হিসাব সম্ভবত কারও মাথায়ই আসেনি ম্যাচ শেষে! একে তো এ কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ নয়, তার পর যখন মেসি আর রোনালদোকে একসঙ্গে, এক মাঠে দেখার সুযোগ এলো হয়তো শেষবারের মতোই। সেখানে ম্যাচ, ফল বা দুই দল গুরুত্বহীন। দুজনের গতি হয়তো আর আগের মতো নেই, মাঠ দাপিয়ে বেড়ানোর ক্ষমতায় মরচে ধরিয়েছে বয়স, কিন্তু মেসি আর রোনালদো যখন মাঠে, অন্য কোনো দিকে আর তাকানোর সময় কোথায়!
নেইমার ছিলেন মাঠে, এমবাপ্পে, রামোসও। পিএসজি পুরো তারকারাজি নিয়েই নেমেছিল। অন্যদিকে রিয়াদের দলে একটাই ধ্রুবতারা, যার নাম রোনালদো। আল-নাসর আর আল-হিলালের খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া রিয়াদ অল-স্টারের হয়ে সউদী ফুটবলে অভিষেকের রাতটা রোনালদোর জন্য এর চেয়ে বর্ণিল হয়তো আর হতে পারত না। প্রতিপক্ষে তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বা বন্ধু মেসি, তাকে আদর্শ মেনে বড় হওয়া এমবাপ্পে, মেসি ও তার পাশাপাশি গত এক দশক ফুটবল রাঙিয়ে যাওয়া নেইমার, তার বন্ধু সার্জিও রামোস- কে নেই! বলতে গেলে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবলে রঙিন এক সন্ধ্যায়ই সাউদী ফুটবলে অভিষেক রোনালদোর। ইউরোপে হয়তো আর ফেরা হবে না, বয়স ৩৮ হয়ে যাবে আর দিন পনের পর। তবে ইউরোপ শেষে এশিয়া অধ্যায়ের শুরুতেও রোনালদো বুঝিয়ে দিলেন, গোল করায় তিনি এখনো অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
এ এমন এক রাত, যেখানে সব তারাই কোনো না কোনোভাবে আলোচনায়। তৃতীয় মিনিটে নেইমারের দারুণ লব ধরে সুন্দর ফিনিশিং মেসির, রিয়াদ একাদশ ৩৪ মিনিটে সমতায় ফিরল পেনাল্টি থেকে রোনালদোর গোলে। পেনাল্টি আদায়ে রোনালদোকে একটু ব্যথাও পেতে হলো। একটা ফ্রি-কিকে ভেসে আসা বলে তিনি আর পিএসজি গোলকিপার কেইলর নাভাস, রিয়াল মাদ্রিদে রোনালদোর টানা তিন চ্যাম্পিয়ন্স লিগজয়ী দলের আরেক সঙ্গী একসঙ্গে লাফিয়েছিলেন। বিপদমুক্ত করতে নাভাস হাত ছুঁড়েছিলেন, তার হাত বলে না লেগে আঘাত হানে রোনালদোর মুখে। পেনাল্টি রিয়াদ একাদশের, চোখের একটু নিচে পাওয়া আঘাতে শুশ্রƒষা শেষে রোনালদোই নিলেন সে পেনাল্টি। সউদী আরবে তার প্রথম গোল।
এরপর? বিরতির আগে কিছুক্ষণের নাটক! রিয়াল একাদশের পাল্টা আক্রমণ রুখতে গিয়ে ৩৯ মিনিটে হুয়ান বের্নাট লাল কার্ড দেখলেন। তবু ৪৩ মিনিটে এমবাপ্পের ক্রসে মারকিনিওসের গোলে পিএসজির এগিয়ে যাওয়া। ৪৮ মিনিটে নেইমার পেনাল্টি পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ, তিন মিনিট পর রোনালদোর গোলে বিরতিতে সমতায় রিয়াদ একাদশ। ভেসে আসা ক্রসে রোনালদোর হেড ফিরে আসে পোস্টে লেগে। রামোসের সুযোগ ছিল সহজেই বলটা ক্লিয়ার করার, কিন্তু স্প্যানিশ ডিফেন্ডার শরীরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেললেন। বল গেল তো গেল রোনালদোর কাছেই! তার ফিরতি শটে ম্যাচে সমতা।
বিরতির পর কিছুক্ষণ চলল গোলবন্যা– ৫৩ মিনিটে রামোসের গোল, তিন মিনিট পর আবার রিয়াদকে সমতায় ফেরালেন জাং হিউন-সু, চার মিনিট পর আবার পেনাল্টিতে এমবাপ্পের গোলে এগিয়ে যাওয়া পিএসজির।
এর এক মিনিট পর এদিকে রোনালদো আর ওদিকে মেসি-নেইমার-এমবাপ্পে-রামোসকে তুলে নেয়া হলো। এরপর ম্যাচটা তো অর্থহীনই! মেসি-রোনালদো উঠে যেতে কয়েক সেকেন্ডের মাথায় ইউটিউব লাইভস্ট্রিমগুলো থেকে বিদায় নিচ্ছিলেন লাখ-লাখ দর্শক। তবে এতে আর অবাক হওয়ার কি আছে! পিএসজির উগো একিতিকে আর রিয়াদ একাদশের আন্দারসন তালিসকার গোল ম্যাচে ফুটবলীয় অ্যাকশনের হিসাব রাখতে বাধ্য করেছে। ম্যাচ শেষে ঘটা করে পিএসজিকে শিরোপাও দেয়া হলো। কিন্তু ওসবে কারই বা আগ্রহ আছে! ওসব ছবি চোখের সামনে ভেসেছে, মনে দাগ কাটেনি।
মন তো রাঙিয়ে গেছে ম্যাচের শুরুতে টানেলে মেসি, নেইমার আর এমবাপ্পেকে রোনালদোর অভিবাদন কিংবা ম্যাচের আগে মেসি-রোনালদোর আলিঙ্গনের ছবিগুলোই। দুজনের ইনস্টাগ্রামও রাঙাচ্ছে আলিঙ্গনের ছবি-ভিডিও। বোনাস হয়ে মেসি-রোনালদোর গোলের মুহূর্তগুলো তো ছিলই। মেসি পিএসজিতে চুক্তি নবায়ন করতে যাচ্ছেন, তা মোটামুটি নিশ্চিত। রোনালদো এখন সাউদী আরবে। বয়সও বড্ড বেরসিক। পাক ধরিয়েছে তাদের খেলায়। কিন্তু গত দুই যুগ থেকে তৈরি করা এই দুই ফুটবল শিল্পীর আবেদনে কি ভাটা পড়েছে? উত্তরটা হচ্ছে মোটেই না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।