মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মন্দার মুখে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। আর এর প্রভাব বেশ ভালোভাবে পড়েছে ব্যাংক অব আমেরিকা, সিটিগ্রুপ, গোল্ডম্যান স্যাকস, জেপিমরগান চেজ, মরগান স্ট্যানলি ও ওয়েলস ফার্গোর মতো আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ব্যাংকগুলোর ওপরে । আর্থিক মন্দার মুখে এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন উচ্চ সুদের হারের সঙ্গে লড়ছে। বিশ্বের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, এ ছয়টি ব্যাংকের মুনাফা ২০২১ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিক থেকে ২০২২ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসি পর্যন্ত সময়ে ২০ শতাংশ কমে ৩ হাজার ৪০০ কোটি থেকে ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে নেমে গেছে। তবে মুনাফা কমে যাওয়ার হার ছয়টি প্রতিষ্ঠানেই একরকম নয়। যেমন জেপিমরগান ও ব্যাংক অব আমেরিকার মুনাফা কিছুটা বেড়েছে। অন্যদিকে, গোল্ডম্যান স্যাকসের আয় দুই-তৃতীয়াংশ কমেছে।এ ব্যবধানের কারণ বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। সাধারণত, ব্যাংক অব আমেরিকা ও জেপিমরগানের মতো বড় ব্যাংকগুলো যখন সুদের হার বাড়তি থাকে, তখন ভালো করে। আর ব্যাংকগুলো আমানতের বিপরীতে গ্রাহকদের কী দিচ্ছে ও ঋণের মাধ্যমে কী পরিমাণ উপার্জন করছে তার মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয় ক্রমবর্ধমান সুদের হার, যাকে নিট সুদের আয় ব্যবধান বলা হয়। দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, ২০২২ সালে ব্যাংকগুলোর মধ্যে নিট সুদ থেকে আয়ের ব্যবধান আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। ২০২১ ও ২০২২ সালের শেষে বিশ্বের বড় ছয়টি বিনিয়োগ ব্যাংকের মধ্যে এ ব্যবধান ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার বেড়ে ৬ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে পৌঁছে। অনেকের মতে, উচ্চ সুদের হার গ্রাহকদের ও কোম্পানিগুলোর জন্য ঋণ পরিশোধ করা কঠিন করে তুলবে। তাছাড়া, ২০২২ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে ঋণের ক্ষতি কাটিয়ে তুলতে ব্যাংকগুলো এরই মধ্যে ৭২০ কোটি ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। এদিকে, জেপিমরগানের চেয়ারম্যান জেমি ডিমন ও ব্যাংক অব আমেরিকার চেয়ারম্যান ব্রায়ান ময়নিহান দুজনই এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে মৃদু মন্দার পূর্বাভাস দিয়েছেন। যদিও এ মুহূর্তে মুনাফা অর্জনের ওপর উচ্চ সুদের হারের প্রভাব ইতিবাচকই রয়েছে। তবে শেয়ার বাজারে ধস নামার কারণে গোল্ডম্যান স্যাকস ও মরগান স্ট্যানলির শেয়ারমূল্য প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে। দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, এ ছয়টি ব্যাংকের মধ্যে লাভের পার্থক্যকে কেবল বিনিয়োগ ও আলাদা কর্মক্ষমতা দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। শুধু একটি কারণে মর্গান স্ট্যানলির মুনাফা গোল্ডম্যান স্যাকসের তুলনায় বেশ কম গতিতে হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে, বড় ভোক্তা ব্যাংক থাকা সত্ত্বেও ওয়েলস ফার্গো জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি আরেকটি বাজে প্রান্তিকের মুখে পড়তে চলেছে। ওয়েলস ফার্গোর এমন বাজে অবস্থার বড় কারণ হলো, ত্রুটিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। গত বছরের ডিসেম্বরে ব্যাংকটি যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা আর্থিক সুরক্ষা ব্যুরোকে ১৭০ কোটি ডলার জরিমানা দিতে রাজি হয়। কারণ, এটির বিরুদ্ধে লাখ লাখ গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ভুলভাবে পরিচালনার অভিযোগ ওঠে। তবে গোল্ডম্যান স্যাকসের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা কিছুটা কঠিন। ফার্মটি তার ব্যবসায় বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্যে একটি ভোক্তা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। তবে ঋণজনিত ক্ষতির মুখে পড়ে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন এটির শীর্ষ কর্মকর্তারা। গোল্ডম্যানের ভুল সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ডেভিড সলোমন যুক্তি দেখান, ফার্মটি অল্প সময়ের মধ্যে বেশি ভালো করার চেষ্টা করেছিল। তবে প্রয়োজনীয় প্রতিভা বা পরিকল্পনার অভাবে উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলো অর্জন করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি তার ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করেছে। দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ব্যাংকগুলোর উপার্জন অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেশটির অর্থনৈতিক অস্থিরতার ওপর নির্ভর করে। অর্থনীতি ত্বরান্বিত হলে ঋণের চাহিদা কমে যায়। আর ঋণের চাহিদা কমে গেলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই আলাদাভাবে চিন্তা করতে হয়। কারণ ব্যাংকের অধিকাংশ মুনাফা আসে ঋণের মাধ্যমে। মূলত, বিনিয়োগ ব্যাংকগুলো অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার সময়ে ভালো উপার্জন করার প্রবণতা রাখে। অন্যদিকে, অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকলে তাদের পরামর্শমূলক সেবাগুলো সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। ব্যাংক কর্তাদের এসব বিষয় ও তাদের লক্ষ্যের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। সবশেষে বলা যায়, গত তিন বছরে মার্কিন অর্থনীতি যে অস্থিরতার মধ্য দিয়ে গেছে, তা ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভারসাম্য বজায় রাখার প্রচেষ্টায় সফলতা ও ব্যর্থতার একটি সাধারণ চিত্র তুলে ধরেছে। তাছাড়া, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক ধাক্কা প্রকাশ করেছে, ব্যাংকগুলোর নির্বাহীরা কর্মদক্ষতা ও তাদের লক্ষ্যের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। দ্য ইকোনমিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।