মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
রাজধানী কিয়েভে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ১৪ জনের মৃত্যুর পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘যুদ্ধের সময় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে না’। সরাসরি রাশিয়ার জড়িত থাকার দাবি করেনি ইউক্রেন, তবে জেলেনস্কি দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামকে বলেছেন, এই বিয়োগাত্মক ঘটনাটি যুদ্ধের পরিণতি। এতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডেনিস মোনাস্টিরস্কি বেশ কয়েকজন সহকর্মীর সাথে মারা গেছেন।
জেলেনস্কি তার ভিডিও বার্তা ব্যবহার করে, নতুন রাশিয়ান আক্রমণের আগে দ্রুত আরও অস্ত্র পাঠাতে মিত্রদের অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘মুক্ত বিশ্ব যে সময়টা চিন্তা করতে ব্যয় করে, সন্ত্রাসী রাষ্ট্র সেই সয়টা হত্যা করতে ব্যয় করে।’ জার্মানি যাতে বহু কাঙ্খিত লেপার্ড ট্যাঙ্ক দ্রুত ইউক্রেনে পাঠায় তার অনুরোধ হিসেবে এই বাক্যটি ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব অ্যাব্রাম যুদ্ধ ট্যাঙ্ক সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি না দেয়া পর্যন্ত বার্লিন এই যুদ্ধ যানটিকে পাঠাতে রাজি নয় বলে জানা গেছে। যুক্তরাজ্য সম্প্রতি কিয়েভে নিজস্ব কয়েকটি ট্যাঙ্ক পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
নেটো সামরিক জোটের প্রধান বুধবার দাভোসে বলেছেন যে, ইউক্রেন ‘আরও সমর্থন, আরও উন্নত সমর্থন, ভারী অস্ত্র এবং আরও আধুনিক অস্ত্র’ পাওয়ার আশা করতে পারে। জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, কিয়েভে কী কী সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করতে নেটোর সদস্য দেশগুলো শুক্রবার বৈঠকে মিলিত হবে।
বুধবার স্থানীয় সময় সাড়ে আটটার দিকে কিয়েভের বাইরে ব্রোভারিতে একটি নার্সারির কাছে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। নিহত ১৪ জনের মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। ৪২ বছর বয়সী মোনাস্টিরস্কি, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির দীর্ঘতম রাজনৈতিক উপদেষ্টাদের একজন ছিলেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে নিহত ইউক্রেনিয়দের মধ্যে তিনি সর্বোচ্চ খেতাবধারী ব্যক্তি। তার মৃত্যু কিয়েভ সরকারের হৃদয়ে আঘাত করেছে কারণ যুদ্ধের সময় নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং পুলিশের পরিচালনার মতো অতি প্রয়োজনীয় কাজের ভার থাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপর।
দুই হাজার বাইশ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর থেকে মস্কোর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হতাহতের বিষয়ে জনগণকে তিনিই সবশেষ তথ্য জানাতেন। যার কারণে তিনি পুরো যুদ্ধ জুড়ে ইউক্রেনীয়দের জন্য একটি পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট অফিসের ডেপুটি হেড বলেছেন, মোনাস্টিরস্কি যুদ্ধের একটি ‘হট স্পট’ ভ্রমণ করছিলেন। খারকিভের পুলিশ প্রধান আরো বলেন, মন্ত্রীর দল তার সাথে দেখা করতে রওয়ানা করেছিল।
হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনা ছাড়া অন্য কিছুর মুখে পড়েছে বলে কোন ইঙ্গিত নেই। কিন্তু এসবিইউ স্টেট সিকিউরিটি সার্ভিস বলেছে, এটি নাশকতা, প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা ফ্লাইটের নিয়ম লঙ্ঘনের মতো কোন কারণ জড়িত কিনা সেসব বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে। ইউক্রেনের প্রধান কর্মকর্তাদের প্রায়শই গাছের উচ্চতায় নিয়ে এসে হেলিকপ্টারে করে যাতায়াত করতে হয় যাতে সেটি সনাক্ত করা না যায়। তবে এটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। হেলিকপ্টারটি যেসব অংশ চেনা যায় তা হচ্ছে একটি দরজার প্যানেল এবং একটি রোটোর যা একটি গাড়ির উপর এসে পড়েছে। তার পাশে ফয়েল কম্বলে ঢাকা তিনটি লাশ।
দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ফার্স্ট ডেপুটি মিনিস্টিার ইয়েভেন ইয়েনিন, স্টেট সেক্রেটারি ইউরি লুবকোভিচ এবং মোনাস্টিরস্কির একজন সহযোগী তেতিয়ানা শুতিয়াক। এ দুর্ঘটনার পর, ইউক্রেনের জাতীয় পুলিশ বাহিনীর প্রধান ইহোর ক্লাইমেনকোকে ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়েছে।
প্রয়াত মন্ত্রীর বন্ধু, এমপি মারিয়া মেজেনসেভা বলেছেন, এটি সবার জন্য একটি ট্র্যাজেডি কারণ ইউক্রেনে আক্রমণের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানানোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘তিনি তার সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের প্রতি দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা সাড়া দিতেন। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির নির্বাচনি প্রচারণা শুরুর দিন থেকেই তিনি তার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই দুর্ঘটনাকে ‘হৃদয় বিদারক বিয়োগাত্মক ঘটনা’ বলে অভিহিত করেছেন। কাজ করতে যাওয়ার আগে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের কিন্ডারগার্টেনে নিয়ে আসছিলেন। তখনই হেলিকপ্টারটি এসে আছড়ে পড়ে। হতাহতদের অনেকেই মাটিতে পড়েছিলেন। এক শিশু নিহত হওয়ার পাশাপাশি, আহত ২৫ জনের মধ্যে আরো ১১ কিশোর ছিলেন।
কিয়েভের প্রত্যক্ষদর্শীরা প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সাথে একমত যে, যুদ্ধই এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। স্থানীয় বাসিন্দা ভলোদিমির ইয়েরমেলেঙ্কো বিবিসিকে বলেছেন, ‘এটি খুব কুয়াশাচ্ছন্ন ছিল এবং সেখানে কোনও বিদ্যুৎ ছিল না, এবং যখন বিদ্যুৎ নেই তখন ভবনগুলিতে কোনও আলো নেই।’ অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন যে, পাইলট দুর্ঘটনার আগে উঁচু ভবনগুলো এড়াতে চেষ্টা করেছিলেন এবং এর পরিবর্তে কিন্ডারগার্টেনের কাছে নেমে গিয়েছিলেন। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।