মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ারও যোগ্যতা রাখেন, ভারতের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন একটি সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করার পর দেশে ক্ষমতাসীন বিজেপির সাথে তার সঙ্ঘাত তুঙ্গে পৌঁছেছে।
নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রবল সমালোচক বলে পরিচিত অমর্ত্য সেন সম্প্রতি একের পর এক সাক্ষাৎকারে ও অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যেই বিজেপির মতাদর্শকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেছেন।
সবশেষ গেল সপ্তাহে বার্তা সংস্থা পিটিআই-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি মন্তব্য করেছেন, আগামী বছর দেশের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি অনায়াসে জিতবে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তার সূত্র ধরেই তিনি মমতা ব্যানার্জির প্রধানমন্ত্রিত্বের সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেন।
এর পরই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ওনার মতো এত অভিজ্ঞ ও একজন বিদ্বান ব্যক্তির এই মন্তব্য আমার কাছে আদেশ!
তৃণমূলের পক্ষ থেকে প্রবীণ অর্থনীতিবিদের বক্তব্যে উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া জানানো হলেও বিজেপি অবশ্য যথারীতি অমর্ত্য সেনকে কটাক্ষ করেছে তীব্র ভাষায়।
একজন অর্থনীতিবিদ হয়েও কেন তিনি দেশের রাজনীতি নিয়ে নাক গলাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা এখন আবার সেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।
অমর্ত্য সেন বেঁচে থাকতে ভারত থেকে বিজেপির বিদায় দেখে যেতে পারবেন না, এমন কথাও সরাসরি বলছেন তারা।
দিল্লিতে বিজেপির ক্যাবিনেট মন্ত্রীরা পর্যন্ত ব্যঙ্গ করে বলছেন, অমর্ত্য সেন যা খুশি বলতে পারেন কিন্তু ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে কোনো চাকরি খালি নেই!’
বছরদুয়েক আগে শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের পৈতৃক বাসভবনের জমি যখন জবরদখল করা বলে অভিযোগ উঠেছিল, তখন ‘বোন ও বন্ধু’ হিসেবে মমতা ব্যানার্জি যে তাকে সমর্থনসূচক চিঠি লিখেছিলেন, সে কথাও তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন।
সব মিলিয়ে মমতা ব্যানার্জিকে দেয়া অমর্ত্য সেনের ‘প্রশংসাপত্র’কে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের বিরোধ আবার দৃষ্টিকটুভাবে সামনে চলে এসেছে।
ঠিক কী বলেছেন অমর্ত্য সেন?
গত ১৯ ডিসেম্বর ফরাসি পত্রিকা লে মঁদকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য সেন বলেছিলেন, ভারতে এখন যেটা চলছে সেটাকে বলা যেতে পারে সাম্প্রদায়িকতাপূর্ণ একটি শাসনব্যবস্থার সংকীর্ণতম রূপ।
যেভাবে ভারতে মুসলিমরা আক্রান্ত হচ্ছেন এবং যেভাবে একটি হিন্দু রাষ্ট্রের ভাবনা প্রচার করা হচ্ছে তার তীব্র নিন্দা ব্যক্ত করেন তিনি।
এরপর এ বছরের ৯ জানুয়ারি কলকাতায় নিজের প্রতিষ্ঠিত ‘প্রতীচী ট্রাস্টে’র একটি অনুষ্ঠানে তিনি সরাসরি বিজেপির নাম না নিয়েও মন্তব্য করেন, ভারতে এই মুহূর্তে যে অসহিষ্ণুতার পরিবেশ চলছে তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। মানুষকে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতেই হবে।
গত সপ্তাহেই সুপরিচিত সাংবাদিক করণ থাপারকে দেয়া আর একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম সরকারগুলোর মধ্যে একটি হলো ভারতের মোদি সরকার।
পার্লামেন্টের কোনো কক্ষেই যে ভারতের শাসক দলের একজনও মুসলিম সদস্য নেই, সে বিষয়টিকেও ‘বর্বরোচিত’ ও ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে বর্ণনা করেন তিনি।
কিন্তু চলতি সপ্তাহে বার্তা সংস্থা পিটিআই-কে দেয়া তার সাক্ষাৎকারটি ঘিরেই সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে, কারণ সেখানে তিনি দেশের বর্তমান রাজনীতি নিয়ে নিজস্ব কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন।
ওই সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য সেন বলেন-
মমতা ব্যানার্জির অবশ্যই দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা আছে, তবে এই পদে যেতে হলে তাকে দেশের বিজেপি-বিরোধী শক্তিগুলোকে একজোট করে দেখাতে হবে।
বিজেপির বিরুদ্ধে দেশের মানুষের হতাশাকে ব্যানার্জি কতটা কাজে লাগাতে পারবেন, তা অবশ্য এখনো দেখার বিষয়। এটা এখনো সন্দেহাতীতভাবে প্রতিষ্ঠিত বা প্রমাণিত নয়।
বিজেপি ২০২৪ -এর নির্বাচনে একাই দৌড়াবে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আগামী বছরের নির্বাচনে আঞ্চলিক দলগুলোও খুব প্রাসঙ্গিক ভূমিকা পালন করবে।
এই পটভূমিতেই লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। একই রকমভাবে নজর থাকবে সমাজবাদী পার্টি বা ডিএমকের মতো দলগুলোর ওপরেও।
বিজেপির প্রতিক্রিয়ায় শ্লেষ
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কখনো সরাসরি নাম করে অমর্ত্য সেনের সমালোচনা না করলেও তার সরকার যে বর্ষীয়ান ও বরেণ্য এই অর্থনীতিবিদকে কী চোখে দেখে তা অবশ্য নানা ঘটনাতেই স্পষ্ট হয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদিও ২০১৭তে একটি জনসভায় বলেছিলেন, ‘হার্ভার্ডের চেয়ে হার্ড ওয়ার্ক (কঠোর পরিশ্রম) যে অনেক বেশি শক্তিশালী, সেটা বারে বারে প্রমাণ হয়েছে’। উল্লেখ্য, অমর্ত্য সেন তখনও হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিরই অধ্যাপক ছিলেন।
বিহারে ‘পুনরুজ্জীবিত’ নালন্দা ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলার হিসেবে অমর্ত্য সেনের ভূমিকা নিয়েও বিজেপি নানা প্রশ্ন তুলেছে, যদিও সেই সব কথিত দুর্নীতির অভিযোগ এখন অবধি প্রমাণিত হয়নি।
জাতীয় স্তরে দলের সহ-সভাপতি ও এমপি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, মোদিজিকে সরিয়ে অন্য কাউকে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে বসাবেন, এটা অমর্ত্য সেনদের অনেক পুরাতন স্বপ্ন। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যাবে, এটা দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি।
আগামী লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের সবগুলো পেলেও যে মমতা ব্যানার্জির পক্ষে প্রধানমন্ত্রী হওয়া সম্ভব নয়, সে কথাও তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য আরো কড়া ভাষায় মন্তব্য করেছেন, অমর্ত্য সেনের দীর্ঘায়ু কামনা করি, কিন্তু তিনি যে নিজের জীবদ্দশায় বিজেপি-মুক্ত ভারত দেখে যেতে পারবেন না তাতে কোনো সংশয় নেই।
২০২৪-র নির্বাচনে অমর্ত্য সেনের বাসভবন ‘প্রতীচী’র দরজাতেও ‘পদ্মফুল’ (বিজেপির নির্বাচনী প্রতীক) ফুটবে বলে তিনি কটাক্ষ করেন।
আরো এক ধাপ এগিয়ে বিজেপির সিনিয়র নেতা ও কেন্দ্রের ক্যাবিনেট মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন, গণতন্ত্রে যে কেউ যা খুশি বলতে পারেন, দিবাস্বপ্নও দেখতে পারেন। অমর্ত্য সেনেরও মতামত দেয়ার পূর্ণ অধিকার আছে, তা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু ওনাকে মনে করিয়ে দেব, এই দেশে প্রধানমন্ত্রী পদে কোনো ভ্যাকেন্সি নেই। গত দু’দফায় দেশের মানুষ মোদিজিকে বিপুল ভোটে জিতিয়েছে, সামনের বছর আবার জেতাবে!
অমর্ত্য সেন ১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পরের বছর তাকে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব ‘ভারতরত্নে’ ভূষিত করেছিল অটলবিহারী বাজপায়ীর বিজেপি সরকার। সূত্র : বিবিসি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।