Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিয়ানমারকে অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত সহ ১৩ দেশ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ৮:২২ পিএম

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সেদেশের জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য বিপুল পরিমাণ সমরাস্ত্র তৈরি করছে – এবং এজন্য তারা অন্তত ১৩টি দেশ থেকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সরবরাহ পাচ্ছে, বলছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা। এই ১৩টি দেশের মধ্যে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও ফ্রান্স।

মিয়ানমারের ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেশটি অব্যাহতভাবে অস্ত্র কিনতে পারছে, বা অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় এসব সরঞ্জামের সরবরাহ পাচ্ছে বলে জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়। রিপোর্টে বলা হয় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের সেনা-অভ্যুত্থানের পর থেকেই মিয়ানমারে সহিংসতা চলছে, এবং দেশটির সামরিক বাহিনী তাদের বিরোধীদের ওপর নৃশংসতা চালানোর জন্য অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত অস্ত্র ব্যবহার করছে।

জাতিসংঘের মিয়ানমার সংক্রান্ত বিশেষ উপদেষ্টা পরিষদের তৈরি এ রিপোর্টে বলা হয়, জাতিসংঘের বেশ কিছু সদস্য দেশ এখনো সামরিক বাহিনীর কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে। ‘তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশের ভেতরেই নানা ধরনের অস্ত্র তৈরি করতে পারছে, যা বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে’ – বলা হয় রিপোর্টে।

অভ্যুত্থানের সময় সামরিক বাহিনী দেশটির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে এবং অভ্যুত্থানবিরোধীরা এখন জাতিগত বিদ্রোহীদের সাথে হাত মিলিয়ে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। জাতিসংঘের রিপোর্টটিতে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে বলা হয়, তারা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে কাঁচামাল, প্রশিক্ষণ ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে এবং এর ফলে যে অস্ত্র উৎপাদিত হচ্ছে তা তাদের সীমান্ত রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে না।

‘মিয়ানমার কখনো বিদেশীদের হাতে আক্রান্ত হয়নি, এবং তারা কোন অস্ত্র রপ্তানিও করে না’ – বলেন রিপোর্টটির অন্যতম প্রণেতা এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সাবেক বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার ইয়াংগি লি, ‘১৯৫০ সাল থেকেই তারা নিজ দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য নিজেরাই অস্ত্র তৈরি করছে।’ সরকারি পরিসংখ্যানে বলা হয়, অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত ২,৬০০-রও বেশি লোক সামরিক বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে কিন্তু আসল সংখ্যা এর ১০ গুণ বেশি বলে মনে করা হয়।

মিয়ানমারের শাসকরা যেসব অস্ত্র তৈরি করছে তার মধ্যে আছে স্নাইপার রাইফেল, বিমান-বিধ্বংসী কামান, গ্রেনেড, বোমা, ল্যান্ডমাইন, এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ-ব্যবস্থা। ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর বহু রকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা সত্ত্বেও এসব অস্ত্র উৎপাদন বন্ধ হয়নি। এ রিপোর্টের প্রণেতারা সাবেক সৈন্যদের সাক্ষাতকার, ফাঁস হওয়া সামরিক দলিলপত্র ও ছবি, অস্ত্র কারখানার উপগ্রহ চিত্র থেকে পাওয়া তথ্য কাজে লাগিয়েছেন।

মিয়ানমারে তৈরি এসব অস্ত্র যে অভ্যুত্থানের আগে থেকেই ব্যবহৃত হচ্ছিল তারও প্রমাণ পাওয়া গেছে ২০১৭ সালে তোলা বিভিন্ন ছবি থেকে। সেসময় সংঘটিত ইন-দিন হত্যাকাণ্ড – যাতে মিয়ানমারের সৈন্যরা ১০ জন নিরস্ত্র রোহিঙ্গা পুরুষকে হত্যা করে – সেখানেও মিয়ানমারে-তৈরি রাইফেল হাতে সৈন্যদের দেখা যাচ্ছে। রিপোর্টটির প্রণেতাদের মধ্যে আরো আছেন মিয়ানমার সংক্রান্ত জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের দু’জন সদস্য ক্রিস সিডোটি এবং মারজুকি দারুসমান।

ক্রিস সিডোটি বলেন, সম্প্রতি মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলে এক গণহত্যার সময় একটি স্কুলের ওপর বোমা ও গোলাবর্ষণ করা হয় যাতে নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকটি শিশু ছিল। তিনি বলেন, সেখানে পাওয়া অস্ত্র ও গুলির খোসা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে এগুলো মিয়ানমারের অস্ত্র কারখানাগুলো থেকেই এসেছে। জাতিসংঘের কাউন্সিল বলছে, অস্ত্র তৈরির কিছু যন্ত্র অস্ট্রিয়া থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়। অস্ট্রিয়ার জিএফএম স্টেইর-এর তৈরির এসব যন্ত্র বন্দুকের নল তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়।

এসব মেশিনের রক্ষণাবেক্ষণ দরকার হলে তা তাইওয়ান পাঠানো হয়, সেখানে জিএফএমের টেকনিশিয়ানরা গিয়ে তা মেরামত করেন এবং তার পর তা আবার মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। রিপোর্টে বলা হয়, এসব যন্ত্র যে মিয়ানমোরের ভেতরে ব্যবহৃত হবে তা এই টেকনিশিয়ানরা জানতেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। এ ব্যাপারে বিবিসি জিএফএম স্টেইরের কাছে মন্তব্য চাইলে তারা কোন জবাব দেয়নি।

রিপোর্টের প্রণেতারা বলছেন, তারা যা উদ্ধার করেছেন তা মিয়ানমারের অস্ত্র উৎপাদনের নেটওয়ার্কের খুব সামান্য একটি অংশ মাত্র, এবং এতে বেশ কয়েকটি দেশ জড়িত। মিয়ানমারের অস্ত্র তৈরির জন্য কাঁচামাল – যেমন তামা – সিঙ্গাপুর এবং চীন থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়। বিভিন্ন ফিউজ ও বৈদ্যুতিক ডেটোনেটরের মত গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম এসেছে ভারত ও রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে। জাহাজ চলাচলের রেকর্ড এবং সাবেক সামরিক সূত্রের সাক্ষাতকার থেকে এসব জানা গেছে।

বলা হয়, মিয়ানমারের অস্ত্র কারখানাগুলোর ভারী যন্ত্রপাতি এসেছে জার্মানি, জাপান, ইউক্রেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আর মেশিন চালানোর সফটওয়্যারগুলোর উৎস হচ্ছে ইসরাইল ও ফ্রান্স - এমনটাই ধারণা করা হয়। জাতিসংঘের রিপোর্টটি বলছে, মনে করা হয় যে এসব লেনদেনের ‘ট্রানজিট হাব’ হচ্ছে সিঙ্গাপুর। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং বিদেশী সরবরাহকারী – এ দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে সিঙ্গাপুরের কিছু কোম্পানি।

গত কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ওপর বিভিন্ন রকম আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে কিন্তু তাতে তাদের অস্ত্র উৎপাদন বন্ধ হয়নি। দেশটিতে অস্ত্র কারখানার সংখ্যাও বাড়ছে। ১৯৮৮ সালে সেখানে কারখানার সংখ্যা ছিল প্রা ৬টি, কিন্তু এখন তা বেড়ে ২৫টির মত হয়েছে। ক্রিস সিডোটি বলছেন, ‘আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় খুব বেশি কাজ হয়নি, এসব নিষেধাজ্ঞা নিরাপত্তা পরিষদ বলবৎ করেনি - করেছে বিভিন্ন দেশ।’ ‘অনেক কোম্পানিই এ জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ না-করা দেশের কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বা স্থানীয় মধ্যস্থতাকারী ব্যবহার করে বেশ সহজেই এসব নিষেধাজ্ঞা এড়াতে পেরেছে।’

এখন পর্যন্ত মনে করা হয় যে মিয়ানমার অন্য কোন দেশে অস্ত্র রপ্তানি করছে না। তবে ২০১৯ সালে থাইল্যান্ডের এটি ‘অস্ত্র বাণিজ্য মেলা’ মিয়ানমারের তৈরি বুলেট, বোম এবং গ্রেনেড লঞ্চার প্রদর্শিত হতে দেখা গেছে। সূত্র: বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->