পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বায়তুল মোকারম মসজিদের উত্তর গেটে বিরাট বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এছাড়া একই সময় আওয়ামী ওলামালীগ পৃথক প্রতিবাদ সভা করেছে। পৃথক সমাবেশে মিজবাহুর রহমান চৌধুরী মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করতে সরকারকে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীকে জোরদার কুটনীতির আহ্বান জানান।
তিনি অবিলম্বে ঢাকায় ওআইসির শীর্ষ সম্মেলনের ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। সমাবেশে হাফেজ মোহাম্মদ আবদুল সাত্তার রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিকত্ব দিতে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করাসহ ৪ দফা দাবি উত্থাপন করেন।
বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট
বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান আলহাজ মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, গত অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে বার্মার সেনাবাহিনী ও মগদস্যুরা নিরাপরাধ মুসলমানদের উপর ইতিহাসের ভয়ঙ্কর নির্যাতন চালাচ্ছে, পাইকারী গণহত্যা চালাচ্ছে, এই গণহত্যায় নারী, শিশু কেহই রেহাই পাচ্ছে না, মুসলিম নারীদের পাশবিক নির্যাতন করছে, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। এহেন জগন্য নির্যাতনে বিশ্ব মোড়লদের টনক নড়ছে না। জাতিসংঘ এমনকি ওআইসি পর্যন্ত কেউ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। মিয়ানমারের প্রতিবেশী বাংলাদেশ আরকানদের রক্ষায় প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্বের নির্যাতিত মুসলিমসহ সকল নির্যাতিত মুক্তিকামী মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে আরকান মুসলমানদের তাদের নিজ দেশে স্বাধীনভাবে শান্তি ও নিরাপদে বসবাসের ব্যবস্থা করতে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করার জন্য নীরব কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন অনতিবিলম্বে ঢাকায় ওআইসি এর শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করুন, জাতিসংঘের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন বন্ধ করার ব্যবস্থা করুন প্রয়োজনে জাতিসংঘবাহিনী প্রেরণের ব্যবস্থা করুন।
গতকাল বাদ জুম’আ বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে দলের মহানগর কমিটির ঘোষিত মাসব্যাপী কর্মসূচির বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে মিছবাহুর রহমান চৌধুরী প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। ঢাকা নগর কমিটির সভাপতি হাফেজ মাওলানা মোশারফ হোসেন মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ভাইস চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ জুলকার নাইন, মুফতি বোরহান উদ্দিন আল আজিজী, ঢাকা নগর সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা ছালামত উল্লাহ প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।
মিছবাহুর রহমান চৌধুরী আরো বলেন আমাদের দেশের একশ্রেণির রাজনীতিবিদ বিশেষ করে আলেম ও পীরদের নাম ব্যবহার করে রোহিঙ্গা মুসলিমদের সাহায্য দেওয়ার কথা বলে জনগণ থেকে টাকা উঠিয়ে আত্মসাৎ করছে। দায়িত্বহীন কর্মসূচি দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করছে। এ সমস্ত অসহায় মানুষের নামে উঠানো প্রতিটি টাকার হিসাব দিতে হবে বলে তিনি কঠোর ভাবে হুঁশিয়ার করে দেন। মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে সমাবেশ শেষে এক বিরাট বিক্ষোভ মিছিল বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইট থেকে বাহির হয়ে পল্টন মোড় ঘুরে দৈনিক বাংলার মোড়ে এসে শেষ হয়।
ওলামালীগ
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্বিচারে গণহত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামালীগ গতকাল বাদজুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে আলহাজ হাফেজ মাওলানা আব্দুস সাত্তার এর সভাপতিত্বে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আলহাজ মুফতি মাসুম বিল্লাহ নাফেয়ী। আলহাজ হাফেজ মাওলানা মোস্তফা চৌধুরী, মাওলানা ফখরুদ্দীন ও মাওলানা শোয়াইব।
বক্তারা বলেন, গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা রোহিঙ্গা নির্যাতনের পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রথমবারের মতো প্রতিবেশী ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জোট আসিয়ানের রাষ্ট্রগুলোর সামনে জবাবদিহিতা ও চাপের মুখে পড়েছে মিয়ানমার। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির আমন্ত্রণে সোমবার আসিয়ান দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইয়াঙ্গুনের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠকে করেছেন। সেখানে মধ্য অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো হত্যা ও নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। আর রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আরো সময় চেয়েছেন নির্লিপ্ত অং সান সু চি। অথচ গত দুই মাসে ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ নির্যাতিত হয়েছেন। ২৭ হাজার মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারে এবারের সহিংসতা অতীতের সব ভয়াবহতাকে ছাড়িয়ে গেছে।
রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যার প্রতিবাদে আওয়ামী ওলামা লীগের দাবিসমূহ হচ্ছে :-
জাতিসংঘ কর্তৃক
মিয়ানমারে শান্তিরক্ষী মোতায়েন ও অবরোধ আরোপ করা।
মিয়ানমারের সামরিকবাহিনী ও লেডি হিটলার সূচি’র উপর গণহত্যার অভিযোগ আনা।
রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানে বাধ্য করা।
বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করা।
ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশ
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায় : গণহত্যা বন্ধ ও রোহিঙ্গা সমস্যা সমধানের দাবিতে মিয়ানমার অভিমুখী লংমার্চে সরকারি বাধার প্রতিবাদে গতকাল (শুক্রবার) নগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশে নেতবৃন্দ বলেছেন, মিয়ানমার দাবি করছে, রোহিঙ্গা মুসলিমরা সে দেশের নাগরিক নয়, তারা বাংলাদেশের অভিবাসী। বার্মিজ মগদস্যুদের এ বক্তব্য একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি ওপেন চ্যালেঞ্জের শামিল। যদি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি হয় আরাকানও বাংলাদেশের অংশ। সেনা পাঠিয়ে আরাকান দখল করে নিতে হবে। বাদ জুমা চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ উত্তর গেইট চত্বরে এক প্রতিবাদ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ একথা বলেন।
নগর সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম বিএসসির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, লংমার্চ সরকার বিরোধী কোনো কর্মসূচি ছিল না। মজলুম, অসহায়, রাষ্ট্রহীন, বন্ধুহীন, মিত্রহীন একটি জনগোষ্ঠীর করুণকাহিনী বিশ্বের মানবতাবাদী জনগণের কাছে তুলে ধরতেই এ কর্মসূচি দিয়েছিল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। কিন্তু সরকার অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে শান্তিপূর্ণ লংমার্চ কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে জালিম মানবতাহীন মিয়ানমারের জান্তা সরকারের পক্ষাবলম্বন করেছে। এই ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে, এ কোনো মনুষ্যত্বের সরকার নয়। এই সরকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যায় মিয়ানমারের দস্যুদের সহযোগী।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুহাম্মদ আবুল কাশেম মাতব্বর, মুহাম্মদ আল-ইকবাল, ডা. ফরিদ খান, অধ্যাপক মাওলানা মুহাম্মদ রফিকুল আলম, ডা. মুহাম্মদ রেজাউল করীম, এইচ এম মুসলেহ উদ্দীন, মু. সগির আহমদ চৌধুরী, মাওলানা তরীকুল ইসলাম সরকার, মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম শাহীন প্রমুখ।
সিলেটে ইসলামী আন্দোলনের মিছিল-সমাবেশ
মিয়ানমারে মুসলিম গণহত্যার প্রতিবাদে
সাংসদদের প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান
সিলেট অফিস জানান : ‘হিন্দু মারা গেলে চিতায় যেমন ভাবে পোড়ানো হয় মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের তার চেয়েও করুণ পরিণতিতে জীবিত অবস্থায় পোড়ানো হচ্ছে। চীন মুসলিম রাষ্ট্র না হয়েও রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছে। কিন্তু ৯২ ভাগ মুসলমানদের বাংলাদেশে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ঢুকতে না দিয়ে রোহিঙ্গা নারী শিশু বোঝাই নৌকাগুলো সাগরে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এটা কোনো মুসলমান করতে পারে না।’
মিয়ানমারে মুসলিম গণহত্যা বন্ধের দাবিতে এবং পীর সাহেব চরমোনাই কর্তৃক মিয়ানমার অভিমুখে লংমার্চে সরকারের বাধা প্রদানের প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেছেন।
রোহিঙ্গা হত্যাকা- বন্ধে সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সিলেট জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘জাতীয় সংসদে আপনারা যে সমস্ত মুসলমান এমপি রয়েছেন আপনারা মহান সংসদে দাঁড়িয়ে মিয়ানমারে মুসলিম গণহত্যার প্রতিবাদ করুন। এতে সরকার বাধা দিলে সংসদ থেকে আপনারা পদত্যাগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন।
গতকাল শুক্রবার বাদ জুম্মা সিলেট নগরীর বন্দরবাজারস্থ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সিলেট জেলা ও মহানগরের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আম্বরখানা পয়েন্টে সমাবেশে মিলিত হয়।
মহানগর সভাপতি মুফতি মো. ফখরুদ্দিনের সভাপতিত্বে ও মহানগর সেক্রেটারি ডা. রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা সভাপতি নজির আহমদ, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন সিলেট জেলা সভাপতি ফজলুল হক, ইশা ছাত্র আন্দোলন সিলেট জেলা সভাপতি মুহা. সোহেল আহমদ, জাতীয় শিক্ষক ফোরাম সিলেট জেলা আহ্বায়ক মাওলানা আব্বাস উদ্দিন, ইসলামী যুব আন্দোলন জেলা আহবায়ক মাওলানা নযির হোসেন প্রমুখ।
-ইসলামী আন্দোলন, নরসিংদী
স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী থেকে জানান, মিয়ানমারে সেনা পুলিশ ও রাখাইন বৌদ্ধদের মুসলিম গণহত্যা, ধর্ষণ ও বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগ বন্ধের দাবিতে ১৮ ডিসেম্বরের লং মার্চে সরকারি বাধার প্রতিবাদে নরসিংদী শহরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে ইসলামী আন্দোলন নরসিংদী জেলা শাখা। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ইসলামী আন্দোলনের হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক গতকাল শুক্রবার বাদ আছর নরসিংদী পৌরসভা চত্বরে সমবেত হয়। সেখান থেকে মাওলানা আব্দুল বারী ও আশরাফ উদ্দিন ভূইয়ার নেতৃত্বে বিক্ষোভে সংঘঠিত হয়ে শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে নরসিংদী রেলস্টেশন চত্বরে গিয়ে সমবেত হয়। সেখানে বক্তৃতা করেন মাওলানা আব্দুল বারী, মো: আশরাফ উদ্দিন ভূইয়া, মুফতি কাউছার আহমেদ, মাস্টার বজলুল হক, আব্দুল ওয়াহেদ মিয়া, আসাদুল হক হামিদ, মাওলানা আলমগীর হোসেন ভূইয়া, আরিফ বিন মেহের উদ্দিন, জয়নাল আবেদীন, ডা. ইদ্রিস আলী ও এইচ এম মাজহারুল ইসলাম মোলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।