মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বিশ্বের পরাশক্তির মধ্যকার শীতল যুদ্ধের জের ধরে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত ও রাজনৈতিক বাঁকবদল সব মিলিয়ে বিশ্ব একটি নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে। মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো পরিস্থিতি সামাল দিতে একের পর এক কঠোর নীতি নিয়ে আসছে, তবু লাগাম টানা যাচ্ছে না প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে। ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বৈশ্বিক মন্দার। ঠিক এমন এক সন্ধিক্ষণে এসে বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি সতর্ক করে বলছে, বিশ্ব অর্থনীতি এক দশকের মধ্যে দ্বিতীয় মন্দা থেকে মাত্র এক আঙুল দূরে। ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ ধরনের নজিরবিহীন পরিস্থিতি দেখা যায়নি। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসকে কমিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি ধারণা করছে, বিশ্ব অর্থনীতি চলতি বছর মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ সম্প্রসারণ হবে। তবে ২০২৪ সাল নাগাদ প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হবে বলে মনে করছে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধির দৃষ্টিভঙ্গিগুলো অবনতি হওয়ায় উন্নয়নের সংকট তীব্রতর হচ্ছে।’ উচ্চ মূল্যস্ফীতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আক্রমণাত্মক নীতি, অবনতিশীল আর্থিক অবস্থা এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রভাব পড়ছে প্রবৃদ্ধির ওপর। ফলে আরো নেতিবাচক ধাক্কা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, এমনকি কঠোর আর্থিক নীতি থেকে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির ঘটনাগুলো বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, এগুলো মন্দা পরিস্থিতির তীব্রতা বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট। ২০২১ সালে খানিকটা পুনরুদ্ধারের পর ২০২০ সালের মহামারীজনিত মন্দার সময় বিশ্ব অর্থনীতি ৩ দশমিক ২ শতাংশ সংকুচিত হয়। তবে ইতিহাস অনুসারে, বিশ্ব সর্বশেষ ১৯৩০-এর দশকে ১০ বছরের ব্যবধানে এ ধরনের দুটি মন্দার সম্মুখীন হয়েছিল। ২০২৩ সালে মার্কিন অর্থনীতি মোটের ওপর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংস্থাটি আরো মনে করছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত যে ২০টি দেশ ইউরো ব্যবহার করে, তারা মোটেও কোনো অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ দেখতে সক্ষম হবে না। সংস্থাটি মনে করে, কভিড-১৯ বিধিনিষেধ তুলে নেয়ায় ২০২৩ সালে চীনের প্রবৃদ্ধি বাড়বে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। যদিও পূর্বাভাসটি ছয় মাস আগের অনুমানের তুলনায় কম, যা দেশটির আবাসন বাজারের চলমান নড়বড়ে অবস্থা, চীনে তৈরি পণ্যের জন্য অন্যান্য দেশের দুর্বল চাহিদা এবং অব্যাহত মহামারীজনিত ব্যাঘাতগুলোকে প্রতিফলিত করে। বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে আরো বলে, বিশ্বের তিনটি প্রধান প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরো অঞ্চল ও চীন—বর্তমানে পরিচ্ছন্ন দুর্বলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ অভিঘাত আক্রান্ত হবে দরিদ্র দেশগুলোও, যারা কিনা এরই মধ্যেই একটি অনিশ্চিত জলবায়ু অর্থনীতি, নিম্ন ব্যবসায়িক বিনিয়োগ এবং ক্রমবর্ধমান সুদহার ঘিরে টালমাটাল পরিস্থিতির মোকাবেলা করছে। তাছাড়া ঋণের ক্রমবর্ধমান খরচ বড় অংকের ঋণ গ্রহণের বিষয়গুলোকে আরো চ্যালেঞ্জিং করে তুলতে পারে। বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উৎপাদন মহামারীর আগে নির্ণয় করা মাত্রার থেকে প্রায় ৬ শতাংশ নিচে থাকবে। আরো ধারণা করা হচ্ছে, আয় বৃদ্ধিও হবে ধীরগতির, যা ধনী দেশগুলোর সঙ্গে অন্যদের ব্যবধান হ্রাসের বড় ধরনের অন্তরায়। সিএনএন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।