বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মানবজীবনে ইবাদত-বন্দেগী সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর জন্যই মানুষের সৃষ্টি। আল্লাহ তাআলার দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা : আমি জিন ও মানুষকে কেবল এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত করবে (যারিয়াত : ৫৬)। নামাজ, রোযা, জাকাত ও হজ এ চারটিই প্রধান ইবাদত। এগুলো ইসলামের রুকন বা স্তম্ভ। এছাড়া ইসলামের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। এ গুরুত্বের কারণেই কুরআন-হাদিসে এসব বিষয়ে বিস্তারিত শিক্ষাদান করা হয়েছে এবং এর গুরুত্ব ও মর্যাদার প্রতি সুস্পষ্ট আলোকপাত করা হয়েছে।
এ ক্ষেত্রেও কুরআন-হাদিসে মধ্যপন্থা ও পরিমিতিবোধের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সাবধান করা হয়েছে যাতে কেউ এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও শিথিলতাÑ এ দুই প্রান্তিকতার কোনোটারই শিকার না হয়। যেমন ইরশাদ হয়েছে : তুমি নিজের নামাজ বেশি উঁচু স্বরে পড়বে না এবং অতি নিচু স্বরেও না। বরং উভয়ের মাঝামাঝি পন্থা অবলম্বন করবে (বনী ইসরাঈল : ১১০)।
ইবাদতের জন্যই যেহেতু মানুষের সৃষ্টি তাই এ ব্যাপারে শিথিলতার অবকাশ না থাকাটা তো স্পষ্ট, যা বুঝিয়ে বলার দরকার পড়ে না। তা সত্ত্বেও কুরআন-হাদিসে বারবার সাবধান করা হয়েছে, যাতে চিন্তা-চেতনা ও ব্যবহারিকভাবে এ ব্যাপারে কেউ শিথিলতা প্রদর্শন না করে। বিশ্বাস ও চিন্তাগত শিথিলতা মানুষকে গোমরাহ বানিয়ে দেয়, এমনকি ইসলাম থেকে খারিজও করে দেয়। কেউ যদি এ চার মৌলিক ইবাদতের গুরুত্বকে খাটো করে দেখে এবং এর ফরযিয়াতকে অস্বীকার করে, তবে সে ঈমানহারা হয়ে যায়। আর তা স্বীকার করা সত্ত্বেও বাস্তবে পালন না করলে ফাসেক ও পাপিষ্ট বলে গণ্য হয়।
উভয়ের জন্যই রয়েছে জাহান্নামের কঠোর শাস্তি। অস্বীকারকারীর জন্য স্থায়ী শাস্তি, আর আমলে অবহেলাকারীর জন্য অস্থায়ী শাস্তি। সে শাস্তি থেকে বাঁচার লক্ষ্যে ইবাদতে শিথিলতা অবশ্য পরিত্যাজ্য। মানুষ যাতে সর্ববিধ শিথিলতা ত্যাগ করে ইবাদতকে তার যথাযোগ্য মর্যাদা দেয় ও নিষ্ঠার সাথে তা পালনে রত হয়, সে জন্য ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও উৎসাহদান উভয় পন্থাই অবলম্বন করা হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে : যারা অহঙ্কারে আমার ইবাদত থেকে বিমুখ হয়, তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে, লাঞ্ছিত হয়ে (মুমিন : ৬০)।
ইবাদত-বন্দেগীতে শৈথিল্যের মতো বাড়াবাড়িও নিন্দনীয়। এটাও বহুবিধ অনর্থের কারণ। বিশ্বাস ও চিন্তাগত বাড়াবাড়ি তো গোমরাহীর কারণ হয়ে যায় এবং অনেক সময় তা মানুষকে ইবাদতের প্রতি নিরুৎসাহীও করে তোলে। আর কর্মগত বাড়াবাড়ির সর্বাপেক্ষা বড় ক্ষতি হলো ইবাদতের স্থায়িত্ব ও নিরবচ্ছিন্নতা নষ্ট হওয়া। কেননা ইবাদতে মাত্রাজ্ঞান হারালে ক্লান্তি ও অবসাদ অনিবার্য হয়ে পড়ে, যার পরিণাম ইবাদতকে বিদায় জানানো। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে : যে কেউ (সাধ্যাতীত আমলে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যমে) দীনকে কঠিন করে তোলে, দীন তাকে কাবু করে ফেলে। (সহীহ বুখারী : ৩৯)।
পক্ষান্তরে পরিমিতি রক্ষা করলে অবসাদ দেখা দেয় না, স্ফূর্তি বজায় থাকে। ফলে ইবাদত স্থায়ী হয়। সুতরাং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা আমলের এ পরিমাণই বহন করো যার ক্ষমতা তোমাদের আছে। (সহীহ বুখারী, হাদিস : ৬৪৬৫)। অর্থাৎ যা করতে সক্ষম তাই করো। সাধ্যের অতীতে লিপ্ত হতে যেও না। কেননা তা ধরে রাখতে পারবে না। পরিমিত পরিমাণ করলে তা নিরবচ্ছিন্নভাবে করে যেতে পারবে। আর আল্লাহ তাআলার কাছে সেই আমলই বেশি প্রিয় যা অল্প হলেও স্থায়ীভাবে করা হয়। (সহীহ বুখারী, হাদিস : ৬৪৬৫)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।