Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ঝড় তুলে শুরু, আচমকা শেষ!

তেত্রিশেই অবসরে বেল

স্পোর্টস ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ৩৩ বছর বয়সেও যোজন দূরত্বে এগিয়ে ছিলেন সময়ের যে কোন ফুটবলারদের থেকে। অথচ ঠিক সেই বয়সটাকে গ্যারিথ বেল বেছে নিলেন বুট জোড়া তুলে রাখার জন্য। দীর্ঘ ৬৪ বছর পর ওয়েলসকে বিশ্বকাপের মঞ্চে নেওয়া এই ফুটবলার আচমকা বিদায় বলার সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন। পরশু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জীবনের এই কঠিনতম সিদ্ধান্ত জানান ব্রিটিশ ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই উইঙ্গার। টুইটারে নিজের ভেরিফাইড অ্যাকাউন্টে বেল লিখেছেন, ‘অনেক ভেবে চিন্তে আমি ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ফুটবল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যে খেলাটাকে আমি ভালোবাসি সেটা খেলতে পেরে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়।’ স্কুলে পড়ার সময় বেল যোগ দেন সাউদাম্পটনের একাডেমিতে। আর সিনিয়র দলে অভিষেক হয় ২০০৬ সালের এপ্রিলে। কিছুদিন পর দেশের হয়েও অভিষেক হয় তার। এরপর প্রায় ১৭ বছরের ক্যারিয়ার যে বর্ণাঢ্য ছিল তা ফুটে উঠল বেলের কথায়, ‘এটা সত্যিই জীবনের সেরা কিছু মুহূর্ত উপহার দিয়েছে আমাকে। সামনে যাই থাক না কেন, সেই ১৭টি মৌসুমকে ফিরিয়ে আনা অসম্ভব।’
বেলের হাত ধরে ওয়েলস দুইবার খেলেছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপেও। ২০১৬ সালে চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালের সঙ্গে কাটা পড়ে সেমি ফাইনালে। ক্লাব ক্যারিয়ারে সাউথাম্পটন থেকে টটেনহ্যাম হটস্পার হয়ে ২০১৩ সালের গ্রীষ্মে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন তিনি। দলবদলের বিশ্বরেকর্ড ১০০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে। এই রিয়ালের হয়ে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেন বেল। মাস ছয়েক আগে মাদ্রিদের অধ্যায় চুকিয়ে যোগদান করেছিলেন আমেরিকান মেজর লিগ সকারের লস অ্যাঞ্জেলস এফসিতে। ওয়েলস কে পুনর্জন্ম দেওয়া এই উইঙ্গার জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১১১টি ম্যাচ খেলেন এবং সর্বোচ্চ ৪১ গোলের রেকর্ডটিও নিজের করে নেন, এই সময়টাতে করিয়েছেন ২২টি গোল।
দেশের ব্যাপারে বেল বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত আমার ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত নেওয়া কঠিনতম সিদ্ধান্ত। আমি কীভাবে ব্যাখ্যা করব, এই দেশের এবং জাতীয় দলের অংশ হওয়াটা আমার কাছে কেমন? ওয়েলসের জার্সি পরার প্রতিটি মুহূর্ত কেমন অনুভব করেছি, সেটা কীভাবে প্রকাশ করব? আমার উত্তর হচ্ছে, এগুলো সম্ভবত আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’ বিদায় বেলায় বেলের মনে হ”েচ্ছ, দেশের জন্য দিয়েছেন যত, পেয়েছেন তার শতগুণ, ‘আন্তর্জাতিক আঙিনার পথচলা আমাকে অতুলনীয় অভিজ্ঞতা দিয়েছে। এই অবিশ্বাস্য দেশটির ইতিহাসের অংশ হতে পেরে, খেলতে পেরে আমি সম্মানিত এবং গর্বিত। আমি যাদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করেছি, তারা একসময় ভাই হয়েছে এবং যারা স্টাফ ছিলেন তারা হয়ে ওঠে পরিবার। এই পথচলায় পাশে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আমার জার্সিতে ড্রাগনের লোগোটা আছে এবং এটাই আমার প্রয়োজন। ঐক্যবদ্ধ, শক্তিশালী।’
বেল তার ক্লাব ক্যারিয়ারে ৫৫৪ ম্যাচে পেয়েছেন ১৮৬ গোল ও ১৩৭ এসিস্ট। আর স্বর্ণ সময়টা পার করেছেন রিয়ালে। সেখানে রোনালদো ও করিম বেনজেমার সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর গণমাধ্যম এই ত্রয়ীর নাম দিয়েছিলেন ‘বিবিসি’। তিনজন মিলে দীর্ঘ ৬ বছর ঘুম হারাম করেছিলেন ইউরোপে খেলা ডিফেন্ডারদের। এই ত্রিফলা একসঙ্গে ৪বার ইউরোপ সেরার মর্যাদা এনে দিয়েছিল রিয়ালকে। বেলের রিয়ালে প্রথম মৌসুমে কোপা ডেল রে ফাইনালে বার্সেলোনার বিপক্ষে, নিজেদের অর্ধে বল পেয়ে বাঁ প্রান্ত দিয়ে দৌড় শুরু করেন। বার্সা ডিফেন্ডার মার্ক বাত্রা তাঁকে ঠেকাতে এলেও বেলের আগুনে দৌড়ের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারেননি। বাত্রার ক্যারিয়ার শেষ করে ফেলা সেই গোলটি বেলের ক্যারিয়ারেরই সেরা মুহূর্ত। সত্যি বলতে সেই গোলটিই তার সামর্থ্যরে সঠিক প্রতিফলন ছিল।
তবে চোট ও ইগো সমস্যার কারণে মেধার সঠিক ব্যবহার করতে পারেননি বেল। এরপরও বিদায়ের আগ পর্যন্ত যা করেছেন, তার জন্য ভবিষ্যতে বলতেই হবে যে গ্যারেথ বেল ছিলেন ফুটবলের এক বড় নাম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ