বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হাশর ময়দানের এক পর্যায়ে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত মুমিন বান্দাহগণকে নূর দান করবেন। এতদপ্রসঙ্গে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : সেদিন আপনি (হে প্রিয় রাসূল সা:) দেখবেন মুমিন নর-নারীদেরকে তাদের সামনে ও ডানে নূর ছুটতে থাকবে। (সূরা আল হাদীদ : ১২)।
এই আয়াতে কারীমায় ‘সেদিন’ বলতে কিয়ামত পরবর্তী হাশর দিনের কথা বুঝানো হয়েছে। এই আয়াতে কারীমার তাফসীর হযরত আবু উমামা বাহেলী (রা.) থেকে এভাবে বর্ণিত হয়েছে। তিনি একদিন দামেস্কে এক জানাজায় অংশ গ্রহণ করেন। জানাজা শেষে উপস্থিত লোকদেরকে মৃত্যু ও আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য তিনি মৃত্যু, কবর ও হাশরের কিছু অবস্থা বর্ণনা করেন। নিম্নে তার দীর্ঘ বক্তব্যের চয়নকৃত কিছু অংশ উপস্থাপন করা হলো।
তিনি বলেছেন : অতঃপর তোমরা কবর থেকে হাশরের ময়দানে স্থানান্তরিত হবে। হাশরের ময়দানে বিভিন্ন মঞ্জিল ও স্থান অতিক্রম করতে হবে। এক মঞ্জিলে আল্লাহ তা’য়ালার নির্দেশে কিছু মুখমণ্ডলকে সাদা ও উজ্জ্বল করে দেয়া হবে এবং কিছু মুখমণ্ডলকে গাঢ় কৃষ্ণ বর্ণ করে দেয়া হবে। অপর এক মঞ্জিলে সমবেত সব মুমিন ও কাফিরকে গভীর অন্ধকার আচ্ছন্ন করে ফেলবে। কিছুই দৃষ্টি গোচর হবে না। এরপর নূর বণ্টন করা হবে।
প্রত্যেক মুমিন নর-নারীদেরকে নূর দেয়া হবে। মুনাফিক ও কাফিরদেরকে নূর ব্যতীত অন্ধকারেই রেখে দেয়া হবে। নূর দেয়ার ব্যাপারটি পুলসিরাত অতিক্রম করার কিছু পূর্বে ঘটবে। এহেন অন্ধকার মঞ্জিলের উদাহরণ মহান আল্লাহপাক আল কুরআনে এভাবে তুলে ধরেছেন।
ইরশাদ হয়েছে : অথবা তাদের কাজ গভীর সাগরের তলদেশের অন্ধকারের মতো, যাকে তরঙ্গের উপর তরঙ্গ আচ্ছন্ন করে, যার ঊর্ধ্বে রয়েছে মেঘপুঞ্জ, অন্ধকারপুঞ্জ স্তরের উপর স্তর, এমনকি সে হাত বের করলে তা আদৌ দেখতে পাবে না। আল্লাহ যাকে নূর দান করেন না তার জন্য কোনো নূরই নেই। (সূরা আন্ নূর : ৪০)।
হযরত আবু উমামা বাহেলী (রা.) আরো বলেছেন, অতঃপর যেভাবে অন্ধ ব্যক্তি চক্ষুম্মান ব্যক্তির চোখ দ্বারা দেখতে পায়না, তেমনি কাফের ও মুনাফিকরা ঈমানদারের নূর দ্বারা আলোকিত হতে পারবেনা। মুনাফিকরা ঈমানদারদেরকে বলবে, ‘তোমরা আমাদের জন্য একটু থাম, যাতে আমরা তোমাদের নূরের কিছু গ্রহণ করতে পারি’। আসলে তারা নূরের কিছুই পাবেনা। এভাবে আল্লাহপাক মুনাফিকদেরকে তাদের বিগত জীবনের ধোঁকার প্রতিফল প্রদান করবেন।
যেমন আল্লাহপাক আল কুরআনে ইরশাদ করেছেন : তারা আল্লাহকে ধোঁকা দেয় আর আল্লাহ তাদেরকে তাদের ধোঁকার প্রতিফল দেবেন। (সূরা আন্ নিসা : ১৪২)। তারপর তারা যেখানে নূর বণ্টন হয়ে ছিল সেখানে ফিরে যাবে। কিন্তু তারা কিছুই পাবেনা। ফলে, তারা ঈমানদারদের কাছে ফিরে আসবে। ইত্যবসরে মুমিন নর-নারী এবং কাফের মুনাফিকদের মধ্যে একটি প্রাচীর স্থাপিত হবে, যাতে একটি দরজা থাকবে। সেটির ভেতরে থাকবে রহমত এবং বাইরে থাকবে শাস্তি। এভাবেই কাফির ও মুনাফিকরা তাদের দুনিয়ার জীবনে দেয়া ধোঁকার শাস্তি ও প্রতিফল ভোগ করতে থাকবে এবং মুমিনদের মাঝে তাদের নূর বণ্টিত হয়ে যাবে।
এ পর্যায়ে স্মরণ রাখা দরকার যে, দুনিয়ার জীবনে কাফের ও মুনাফিকদের ধোঁকার কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে ধোঁকায় ফেলা বা-এর প্রতিফল ভোগ করানো একান্তই যুক্তিযুক্ত ও যথার্থ। এতে আল্লাহর জন্য খারাপগুণ বিবেচিত হবে না। কারণ, এটি তাদের কর্মের বিপরীতে আল্লাহর কর্ম বা প্রতিবিধান, যা তাদের একান্তভাবেই প্রাপ্য।
কাফের ও মুনাফিকরা রোজ হাশরে কিভাবে ধোঁকার প্রতিফল ভোগ করবে তার বর্ণনায় ইমাম সুদ্দী ও হযরত হাসান বসরী (রহ.) বলেন : হাশরের দিন তাদেরকে কিছু নূর বা আলো দেয়া হবে। ফলে, তারা মুমিনদের সাথে চলতে থাকবে। যেমনিভাবে তারা দুনিয়াতে মুমিনদের সাথে ছিল। তারপর আল্লাহ তা’য়ালা তাদের সে নূর বা আলো ছিনিয়ে নেবেন। ফলে তারা অন্ধকারে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে। আর ঠিক তখনই তাদের ও মুমিনদের মাঝে প্রাচীর পড়ে যাবে। পরস্পর পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। (তাফসীরে বাহরুল মুহিত)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।