Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

রোনালদো ও জর্জিনার জন্য কেন আইন শিথিল করছে সউদী আরব?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৬:৫৩ পিএম

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও তার পার্টনার জর্জিনা এখন সউদী আরবে। প্রতি বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বেতনে রোনালদো সউদী আরবের আল নাসর ক্লাবে খেলতে গিয়েছেন। তবে সউদী আরবে পা রাখার পর থেকে খেলার চেয়েও রোনালদোর নতুন জীবন নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে।

এই সপ্তাহে টুইটারে ট্রেন্ডিং ইস্যুগুলোর একটি রোনালদো ও জর্জিনার সউদী আরবে বিলাসবহুল এক বাড়িতে এক সাথে থাকা নিয়ে। সউদী আরবে শরীয়া আইন খুব কড়াভাবে পালন করা হয় এবং সেখানে অবিবাহিত জুটি একসাথে থাকা বা যৌন সম্পর্ক স্থাপন গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এজন্য দেশটিতে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।

যদিও এখনো সউদী আরবের ক্লাব আল নাসর কিংবা রোনালদোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও বক্তব্য আসেনি। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে বিশাল আয়োজন করে বরণ করে নিয়েছে সউদী আরব, আল নাসরের স্টেডিয়ামে জমকালো এক অনুষ্ঠান হয়েছে। পুরো বিশ্বের ফুটবল সমর্থকরা এই আয়োজনে চোখ রেখেছিলেন। ওইদিন রোনালদোর পার্টনার জর্জিনা একটি আবায়া পরে এসেছিলেন।

আবায়া মুসলিম প্রধান দেশের নারীদের পোশাক হিসেবে পরিচিত। এতে মাথা, হাত ও পা বাদে গোটা শরীর ঢাকা থাকে, তবে জর্জিনা নেকাব বা হিজাব পরেননি। সউদী আরবে নারীদের পোশাকের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। তবে এসব কিছুই সউদী আরব কর্তৃপক্ষকে এখন ভাবাচ্ছে না সউদী আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের কাছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে – ভিশন ২০৩০। রোনালদো যার একটি বড় অংশ হতে যাচ্ছেন। তাই রোনালদোর ক্ষেত্রে অব্যাহতি দেয়ার কথা বিবেচিত হচ্ছে।

হাজারো সমর্থকদের সামনে সউদী আরবের রাজধানী রিয়াদের মরসুল পার্ক স্টেডিয়ামে আল নাসরের ফুটবলার হিসেবে রোনালদোর শুরু উদযাপিত হয়, রোনালদো আল নাসরের হলুদ জার্সি পরে আসেন। সমর্থকরা মাঠের চেয়েও মাঠের বাইরে সংখ্যায় অনেক বেশি ছিলেন, রোনালদোকে এক ঝলক দেখবেন বলে। আল নাসরের স্টেডিয়ামে ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার, সেখানে টিকিটির লাইনে ছিলেন ৫০ হাজারের বেশি লোক।

এটা কেবল সউদী আরবের ফুটবলের জন্যই বড় একটা ঘটনা নয়, রোনালদো নিজেও আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর এই সুপারস্টার দুই হাজার কোটি টাকা পাবেন। রোনালদোই এখন বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া ফুটবলার। তবে ভবিষ্যৎ লাভের আশা করছে সউদী কর্তৃপক্ষ। কাতারে সফল একটি বিশ্বকাপ আয়োজনের পর মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিনিধি হিসেবে সউদী আরবরও নিজেদের আর্থিক সক্ষমতা প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

কাতার যেমনটা করেছে ফ্রান্সের ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের মালিকানা নিয়ে। মেসি-নেইমার-এমবাপের মতো তারকারা এখন কাতারি মালিকানাধীন ক্লাবে খেলেন। মেসির বিশ্বকাপ জয়ের পর ট্রফি হাতে নেয়ার সময় আরবদের বিখ্যাত পোশাক জোব্বা পরাটাকেও বিশ্লেষকরা আরব রাজনীতি এবং সংস্কৃতির প্রতীকী এক জয় হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করছেন, এটা কেবলই একটা পোশাক না, এটা পশ্চিমাদের প্রতি একটা বার্তা, যারা কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের আগে সমালোচনায় মেতেছিলেন।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এখন সউদী আরবের জন্য এমনই এক আইকন হতে যাচ্ছেন। সউদী আরব সামনে বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার জন্যও চেষ্টা করবে, তখন রোনালদো হবেন বড় অ্যাম্বাসেডর, এমনটাই পরিকল্পনা সউদীর ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের। সউদী ক্রাউন প্রিন্সকে কাতার বিশ্বকাপে বিভিন্ন ম্যাচে গ্যালারিতে দেখা গেছে ফিফার প্রেসিডেন্ট জিয়ানি ইনফ্যান্তিনোর সাথে বসেছেন এবং কথা বলেছেন। নভেম্বরের ২২ তারিখ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে হারানো সউদী আরবের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত ফুটবলে সবচেয়ে বড় সাফল্য। এটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় দেশটি।

সেজন্য ২০৩০ সাল পর্যন্ত একটা মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সউদী কর্তৃপক্ষ যার অংশ হিসেবে বিশাল অঙ্কের বেতনে রোনালদো সউদী আরবে গিয়ে ফুটবল খেলছেন। সউদী আরবের জন্য ফুটবল এখন একটা বড় হাতিয়ার। বিশ্বকাপে ম্যাচগুলোর দিন দেশটিতে সরকারি ছুটি ছিল, আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জয়ের পরদিনও ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল।

কঠোর আইনের জন্য সউদী আরবের বেশ একটা কাঠখোট্টা ভাবমূর্তি রয়েছে বিশ্বজুড়ে, সেটা পরিবর্তনেরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সউদী কর্তৃপক্ষ। যার অংশ হিসেবে সামনে বিদেশি নাগরিক নারী-পুরুষেরা যখন এক ছাদের নিচে থাকবেন, তারা বিবাহিত না অবিবাহিত সেটা দেখবে না সউদী আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রকরা। সম্প্রতি মোহাম্মদ বিন সালমান একটি বক্তব্যে বলেছেন, ‘সউদী আরব হতে যাচ্ছে নতুন ইউরোপ’। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষত টুইটারে এই ভিডিওটি বেশ আলোচিত হয়েছে।

যেখানে সউদী আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, “পাঁচ বছরের মধ্যে সউদী আরব সম্পূর্ণ ভিন্ন এর রূপ নেবে, বাহরাইন ভিন্ন এক রূপ নেবে, কুয়েত এমনকি কাতারও। আমরা আর্থিকভাবে আরও শক্তিশালী হবো এবং আমাদের অন্যরকম দেখাবে। আরব আমিরাত, ওমান, লেবানন, জর্ডান, ইজিপ্ট ও ইরাকে প্রচুর সম্ভাবনা এখন।” মোহাম্মদ বিন সালমান মনে করেন, “আগামী ত্রিশ বছর মধ্যপ্রাচ্যে আরব রেঁনেসা দেখবেন আপনারা সবাই।”

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূরাজনীতি নিয়ে পড়ালেখা করা গোকুল সাহনি টুইটারে লিখেছেন, “অবশেষে সউদী আরব ধর্মকে এক পাশে রেখে, সত্যিকারের একটা বড় শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে।” হাসিমুখে সউদী আরবে পা রাখলেও ফুটবল ক্যারিয়ারের বিবেচনায় রোনালদো এক মলিন বিদায়ের পথেই এগোচ্ছেন বলছেন ফুটবল পন্ডিতেরা। পিয়ার্স মরগানকে দেয়া বিস্ফোরক এক সাক্ষাৎকারের পর রোনালদোর সাথে চুক্তি বাতিল করেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এরপর বিশ্বকাপে পর্তুগালের অধিনায়ক হয়েও কোচের অসন্তুষ্টির কারণ হওয়াতে রোনালদো বেঞ্চে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে বসেন। মরক্কোর সাথে কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে বাদ পড়ে তার দল।

বিশ্বকাপের পরে রোনালদো আল নাসরের সাথে চুক্তিতে সই করেন, যা ইউরোপে রোনালদোর ফুটবল ক্যারিয়ারের এক রকম শেষ ধরে নিচ্ছেন অনেকে।সউদী আরব এসে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তিনি সউদী আরবকে মুখ ফসকে বলে ফেলেন ‘সাউথ আফ্রিকা’। বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, রোনালদোর এখানেই শেষ। রোনালদোও সউদী আরবে পা রেখেই বলেছেন, “ইউরোপে যা জেতার ছিল আমি জিতেছি।” সূত্র: বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ