চীনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর ছিল ২০২২ সাল। কোভিড মহামারী থেকে পরিত্রাণ পেতে বছরটির শেষদিকে দেশটির ঘটনাক্রম বিশ্বকে বুঝিয়েছে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি) চীনের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে অবিশ্বাস্যভাবে সিদ্ধহস্ত হলেও জনগণকে শাসনের জন্য ঠিক ততোটা পারদর্শী নয়।
২০২২ সালের পুরোটা সময় কেটেছে
করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে চীন সরকারের কঠোর
লকডাউন এবং নিপীড়নমূলক বিধিনিষেধে। তিন বছর ধরে একইভাবে কঠোর বিধিনিষেধের পর বছরের শেষদিকে এসে চীন সরকারের প্রতি ব্যাপক জনঅসন্তোষ তৈরি হয় এবং উরুমকিতে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের পর বিক্ষোভ শুরু হয় দেশজুড়ে।
ওই বিক্ষোভের পরই রাতারাতি সরকার শূন্য-কোভিড নীতি থেকে সরে আসে। এই নীতির আওতায় এত সময়, সম্পদ আর প্রচারণার পর সরকার এত দ্রুত যে এই নিয়ম শিথিল করেছে তা আসলে বিষ্ময়ের। যেহেতু সরকার মহামারীর ডেটা প্রকাশ বন্ধ করে দিয়েছে, তাতে ভাইরাস আসলে কতোটা ভয়াবহ তা সত্যিই কেউ জানে না।
এএনআই জানিয়েছে, একটি বিষয় পরিষ্কার যে, পরিস্থিতি ভয়াবহ এবং হাজার হাজার মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এসব মৃত্যুর সনদপত্রে কারণ হিসেবে কোভিডকে উল্লেখ করা হচ্ছে না। মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে ‘হঠাৎ মৃত্যু’।
অন্য কোনো দেশ সফলভাবে কোভিড-প্রতিরোধ নীতি প্রয়োগ করতে পারেনি। আর দীর্ঘ তিন বছর ধরে সিসিপি যা করেছে তা ছিল স্বৈরাচারী নিয়ন্ত্রণ নীতির এক অভিনব পন্থা। যাইহোক চীন সরকারের এই নীতি আসল কার্যকর দীর্ঘমেয়াদী কৌশল ছিল না, যেহেতু জনগণ ও অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
এখন পর্যন্ত মহামারী নিয়ন্ত্রণে সকল পদক্ষেপের দায়ভার সিসিপির। উন্নত ভ্যাকসিন, নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের সক্ষমতা, ওষুধের মজুদ, এবং বয়স্কদের জন্য টিকার ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়ার পরিবর্তে সরকার কোভিড পরীক্ষা, কোয়ারেন্টিন ক্যাম্প,
লকডাউন এবং পশ্চিমা গণতন্ত্রের ওপর ‘চীনা বৈশিষ্ট্যযুক্ত সমাজতন্ত্রের’ শ্রেষ্ঠত্বের প্রশংসার দিকে মনোনিবেশ করেছে।
চীনে কোভিডের সামগ্রিক প্রভাব নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন। নতুন বছরে সম্ভবত জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে প্রথম পর্যায়ের চূড়ান্ত সংক্রমণ হতে পারে। আর মার্চের শুরুতে হতে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ।
এয়ারফিনিটির অনুমান বলছে, চীনে জানুয়ারিতে দৈনিক সংক্রমণ হতে পারে ৩৭ লাখ। আর মার্চে তা ৪২ লাখে পৌঁছাতে পারে।
বর্তমানে চীনে কোভিড সংক্রমণে সম্ভবত দৈনিক ৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। বিপরীতে বেইজিং প্রতি সপ্তাহে গড়ে মাত্র সাতজনের মৃত্যুর কথা বলছে।
নতুন কোভিড ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় অনেক দেশ চীন থেকে আসা মানুষদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে কিংবা চীন সফরকারীদের কোভিড পরীক্ষা করছে। ২০২০ সালের শুরুর দিকে চীন বিশ্বে
করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে এবং এবারও ঠিক একই কাজ করছে।