Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘বিপিএল যাচ্ছে-তাই টুর্নামেন্ট’

শুরুর আগেই সাকিবের বোমা

স্পোর্টস রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

আগের দিনই বাংলাদেশ ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। বিসিবির এই পরিচালক প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, লভ্যাংশ ভাগাভাগিসহ আর্থিক কাঠামোয় পরিবর্তন না আনলে আগ্রহ হারাবে না দলগুলো। প্রসঙ্গটি পুরনো। আলোচনাটিও নতুন কিছু নয়। তবে সবসময়ই প্রাসঙ্গিক। একদিন পর তাই সেই প্রশ্নই উঠে এলো সাকিব আল হাসানের কণ্ঠে। তবে সেটি ফাটলো বোমা হয়ে!
বিপিএলের নবম আসর শুরু হতে আর বাকি এক দিন। আগামীকালই মাঠে গড়াতে যাচ্ছে দেশের ক্রিকেটের সবচাইতে বড় এই টুর্নামেন্ট। ২০১২ সালে চালু হয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। কিন্তু প্রায় এক যুগ পরে এসেও ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক এই টি-টোয়েন্টি আসর পায়নি শক্ত ভিত। নেই কোনো নির্দিষ্ট আর্থিক কাঠামো। ক্রিকেটীয় প্রযুক্তি থেকে শুরু করে খেলোয়াড়দের বেতন-ভাতা সংক্রান্ত জটিলতায় বারবার ওঠে প্রশ্ন। বিপিএলের মান নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আয়োজক বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কড়া সমালোচনাই জাতীয় দলের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। দেশের ক্রিকেটে সবচাইতে বড় এই বিজ্ঞাপনের বিবেচনায়, ‘বিপিএল যাচ্ছে-তাই’!
গালফ অয়েলের শুভেচ্ছা দূত বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব। গতকাল একদিনের জন্য প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহীর প্রতীকী দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সেখানে সংশ্লিষ্ট নানা প্রশ্নের পাশাপাশি বিপিএল নিয়ে মুখ খুলতে হয় তাকে। আগামীকালই মাঠে গড়াচ্ছে বিপিএলের নবম আসর। কিন্তু এবারও প্রতিযোগিতাটি শুরুর আগেই সঙ্গী হয়েছে ঘাটতি। ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস) ছাড়াই চালু হচ্ছে ব্যাট-বলের লড়াই। এসব অবশ্য নতুন কিছু নয়। শুরু থেকেই বিপিএলের সঙ্গী নানা অব্যবস্থাপনা, পেশাদারিত্বের অভাব। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর আয়ের কোনো নিশ্চিত রাস্তা নেই। ফলে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের লড়াইয়ে বিপিএল পড়ে গেছে অনেক পিছনে। অথচ জন্মলগ্নে ভারতের আইপিএলের সমমানের আসর আয়োজনই ছিল বিসিবির লক্ষ্য। এতদিন পেরিয়ে গেলেও বিপিএলের কোনো ভালো অবস্থানে না যাওয়ার প্রসঙ্গে সাকিব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পারিনি নাকি চাইনি?... জানি না, বলাটা কষ্টকর। চাইলে না পারার কোনো কারণ আমি দেখি না। আমার মনে হয়, আমরা সৎ মনে কখনও চাইনি কিছু করতে এখন পর্যন্ত। বাজেট নেই কারণ আমরা বাজেট তৈরি করতে পারিনি। যদি তৈরি করতে পারতাম, মান অর্জন করতে পারতাম, অবশ্যই এই বাজেটটা অনেক বড় হওয়ার কথা ছিল।’
বাংলাদেশের চেয়ে ক্রিকেটের বাজার অনেক ছোট, এমন দেশগুলোতেও ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ উল্লেখযোগ্য জায়গায় পৌঁছেছে। প্রায় এক যুগ আগে শুরু হওয়া টুর্নামেন্টে সুনির্দিষ্টি কোনো আর্থিক কাঠামো এখনও পর্যন্ত দাঁড় করাতে পারেনি বিসিবি। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর আয়ের কোনো নিশ্চিত বা সম্ভাব্য পথ তৈরি করা হয়নি। বিপিএলকে আকর্ষণীয় করতে না পারার পিছনে বিসিবির ব্যর্থতা দেখেন এবারের আসরে বরিশালের নেতৃত্ব পাওয়া সাকিব, ‘গ্রামের এমন কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চল দেখবেন না যেখানে ক্রিকেট খেলা হচ্ছে না। এমন তো না যে এটার জনপ্রিয়তা নেই। ১৬-২০ কোটি মানুষের একটা দেশে এত পছন্দের একটা খেলা, এটার বাজারটা থাকবে না, এটা খুবই দুঃখজনক। মানে আমি অন্তত বিশ্বাস করি না। সেই জায়গা থেকে আমার ধারণা, এটা মার্কেটিংয়ের জায়গা থেকে বড় একটি ব্যর্থতা যে কারণে আমরা সেই রকম একটা বাজার তৈরি করতে পারিনি। সদিচ্ছা থাকলে কোনো কিছু থেমে থাকার কারণ দেখি না। আমি তো কোনো কারণই দেখি না ডিআরএস না থাকার, তিন মাস আগে ড্রাফট বা অকশন না হওয়ার, দলগুলো দুই মাস আগে ঠিক হবে না এবং খেলোয়াড়দের পাওয়া যাবে না।’
আইপিএলসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে লভ্যাংশের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ পেয়ে থাকে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। বাংলাদেশে তা কখনোই দেওয়া হয়নি। এই প্রসঙ্গ উঠলেই বিসিবি তা উড়িয়ে দিয়ে আসছে বরাবরই। টুর্নামেন্টের প্রাইজমানিও খুব আকর্ষণীয় কিছু থাকে না। সব মিলিয়ে দলগুলির খরচের খাত প্রচুর থাকলেও আয়ের সুযোগ সামান্য। সেই সাথে খেলোয়াড়দের আর্থিক নিরাপত্তার দিকটিও থেকে গেছে চিন্তার বাইরে। ৯ আসরের প্রতিটিতেই ছিল, এমন কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিই নেই বিপিএলে। দেশের অনেক বড় প্রতিষ্ঠান আগ্রহ নিয়ে আসার পর ক্রমে সরে গেছে এখান থেকে। ধারাবাহিকতা ও পেশাদারিত্ব না থাকায় একসময় দারুণ সম্ভাবনা থাকলেও এখন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের লড়াইয়ে বিপিএল পড়ে গেছে অনেক পেছনে। আইপিএল তো বটেই, বিগ ব্যাশ, পিএসএল, সিপিএল এখন যোজন যোজন এগিয়ে বিপিএলের চেয়ে। এমনকি এই বছর থেকে শুরু হতে যাওয়া দুবাইয়ের আইএল টি-টোয়েন্টি, দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ টি-টোয়েন্টির সঙ্গেও তুলনায় আসার মতো জায়গায় নেই বিপিএল।
এতগুলো বছরে কোনো পেশাদারীত্বই এখনও পর্যন্ত দাঁড় করানো যায়নি এই টুর্নামেন্টে। বাংলাদেশের শীর্ষ তারকার মতে, বিপিএলের চেয়ে বরং ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) আয়োজন ভালোভাবে হয়, ‘এখন এক খেলোয়াড় একদিন আসবে, দুইদিন পর চলে যাবে। কে কখন আসবে কখন যাবে কেউ জানে না। জার্সি পায়নি খেলোয়াড়রা। আমি আপনাদের সংবাদেই দেখেছি। একটা যা-তা অবস্থা। এর থেকে আমাদের ডিপিএল আরও ভালোভাবে হয় কারণ তারা আগে থেকেই দলটা গোছাতে পারে। আরও আগে থেকে জানে যে দলটা কী হচ্ছে এবং তারা সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ