নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
আল নাসেরের মাঠ মরসুল পার্কে ছিল না তিল ধরার ঠাই। আফসোসের ব্যাপার মাঠের আসন মাত্র ৩০ হাজার। উৎসুক জনতার ভাবগতি দেখে মনে হচ্ছিল প্রবেশাধিকার যদি লক্ষাধিক হতো, তবুও মাঠ কাণায়-কানায় পূর্ণই থাকতো। কারণ আরব রজনির রূপকথার বইয়ে যে, কিছুক্ষণ বাদেই যোগ হতে যাচ্ছে আরেকটি ইতিহাস। এমন অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী কে না হতে চায়? যাকে ঘিরে এতো আয়জন সেই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো তখন সাউদী প্রো লিগের দ্বিতীয় সফল দল আল নাসেরের সভাপতি ও কোচের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনের অনুষ্ঠানিকতা সারছেন। যেখানে উপচে পড়েছিল গণমাধ্যম কর্মীরা। হয়তো রোনালদোর ক্যারেয়ারের পড়ন্ত বেলা তবে এ কথা তো মিছে নয় যে তিনি ফুটবল ইতিহাসের সর্বকালের সেরাদের একজন। তাই সকলের আগ্রহ মোটেই অমূলক নয়। সংবাদ সম্মেলনের পাট চুকিয়ে পর্তুগিজ মহাতারকে স্টেডিয়ামে উপস্থিতদের সামনে উত্থাপন করল নাসের। সেখানে আত্মহারা দর্শকদের রোনালদো জানালেন সউদীর মানুষের আতিথিয়তায় তিনি মুগ্ধ আর নতুন চ্যালেঞ্জ গহণে তার তর সইছে না আর।
পাঁচবার করে ব্যালন ডি-অর ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী রোনালদো কদিন আগেই জার্সি হাতে নিয়ে সউদী ক্লাব আল নাসরে যোগ দেওয়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছিলেন। বাকি ছিল ক্লাব সমর্থকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক পরিচয় পর্ব ও সংবাদ সম্মেলন। সেটাই হলো পরশু মধ্যরাতে। স্টেডিয়ামে রোনালদোকে বরণ করতে ফুটবলপ্রেমীরা যখন অপেক্ষায় তখন কোচ রুডি গার্সিয়া ও আল নাসর সভাপতি মুসাল্লি আলমুয়াম্মারের সঙ্গে গণমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যস্ত পর্তুগিজ তারকা । নারী সঞ্চালকের প্রশ্নের উত্তরে যা জানালেন তা আগেও বলেছেন কদিন পর ৩৮ বছরে পা দিতে যাওয়া রোনালদো, ‘আমার জীবনের এই বড় সিদ্ধান্ত নিতে পেরে আমি গর্বিত। ইউরোপে আমার কাজ শেষ হয়েছে। আমি সবকিছু জিতেছি, ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্লাবগুলিতে খেলেছি। এখন এশিয়াতে নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণে প্রস্তুত।’
এই সময় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ গোলের মালিক আরও দাবি করলেন বিশ্ব-জুড়ে বেশ কয়েকটি ক্লাব থেকে প্রস্তাব এসেছিল তার কাছে। তবে শেষ পর্যন্ত আল নাসেরকে বেছে নেওয়ার কারণও ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন,‘এখন আমার বলতে আর বাঁধা নেই, ইউরোপ, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খেলার অনেক সুযোগ আমার ছিল। এমনকি পর্তুগালে অনেক ক্লাব আমাকে দলে টানার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আমি এই ক্লাবকে কথা দিয়েছিলাম। আর সেটা শুধু ফুটবলের জন্যই নয়, এই দেশের অন্যান্য অংশের উন্নয়নের জন্যও। আমাকে তরুণ প্রজন্মের জন্য, নারীদের জন্য ফুটবলের উন্নতির সুযোগ দেওয়ায় আল নাসেরের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ, তবে আমি খুব খুশি এবং গর্বিতও বোধ করছি। আমি এখানকার তরুণদের মানসিকতায় বদল আনার জন্য কাজ করব।’ কথা প্রসঙ্গে রোনালদো আরও বলেন, ‘আমি অনন্য খেলোয়াড়। আমি ইউরোপ সব রেকর্ড ভেঙ্গেছি। এখানেও কিছু রেকর্ড নিজের করতে চাই।’ আরও জানালেন, ‘কোচ চাইলে আমি আজকের ম্যাচেই মাঠে নামবো।’
অন্যদিকে আল নাসেরের ফরাসি কোচ গার্সিয়া জানাতে ভুললেন না নিজের আনন্দের কথা। একি সঙ্গে সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলারকে পেয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে করলেন রসিকতা,‘আমার জীবনে, আমি দেখেছি যে ক্রিস্টিয়ানোর মতো দুর্দান্ত খেলোয়াড়দের সামলানো সবচেয়ে সহজ, কারণ আমি তাকে শেখাতে পারি না। সে যেমন বলছিল, আমরা এখানে জিততে এসেছি, আর কিছু নয়। আমি চাই সে আল নাসেরের হয়ে খেলা উপভোগ করুক এবং আল নাসেরের সঙ্গে জিতুক। আজ প্রচুর সংবাদকর্মী দেখছি। অন্যান্য সময় ম্যাচের পর সর্বোচ্চ তিন-চারজন থাকেন। আজ কি হলো?’
এরপর ক্লাব সভাপতি ও কোচের সঙ্গে রোনালদো যান ড্রেসিংরুমে, যেখানে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন নতুন সতীর্থরা। দোভাষীর সহযোগিতা নিয়ে প্রতিশ্রুতি দেন, শিরোপা জেতার জন্য উজাড় করে দেবেন নিজেকে। তারপর দলের পক্ষ থেকে কথা বলেন অধিনায়ক। আনন্দময় পরিবেশে পাঁচবারের ব্যালন ডি-অর জয়ীকে বরণ করে নেন তারা। তারপরই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আগামী আড়াই বছর যে মাঠে আলো ছড়ানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন রোনালদো, সেখানে উপস্থিত হন তিনি। ট্যানেলর সামনে লাগে নতুন লগো। আল নাসেরের হলুদ-নীল জার্সি পড়ে দুই সারিতে দাঁড়ানো শিশুদের সবার সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রবেশ করেন মাঠে। সেই সময় দর্শকদের গগণবিদারী চিৎকারে শুরুতে কিছুক্ষণ কথাই শোনা যাচ্ছিল না। এমন উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য পর্তুগিজ মহাতারকা সবাইকে ধন্যবাদ জানান। প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তাদের শিরোপা এনে দেওয়ার।
মাঠ ঘুরে ঘুরে নিজের স্বাক্ষর করা বেশ কিছু বল লাথি দিয়ে পাঠান গ্যালারিতে। টিকেট কেটে আসা ভাগ্যবান কয়েকজন পেলেন সেগুলো। তবে সবার দৃষ্টি আটকে গেল সিআর৭ যখন ছোট্ট একটি মেয়েকে নিজে থেকে গিয়ে একটি বল দিয়ে এলেন। উপহার পেয়ে ঘোর যেন কাটছিল না ক্ষুদে সেই দর্শকের। মাঠে উপস্থিত একজন করে নারী ও পরুষ সঞ্চালকদের প্রশ্নের উত্তর শেষ হলে রোনালদোর ছোট্ট সন্তান ছাড়া পরিবারের সবাই আসেন মাঠের মাঝের মঞ্চে। জবাব দেন দর্শকদের অভিবাদনের। যেভাবে সবাই বরণ করে নিয়েছে এর জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে আবার ধন্যবাদ জানিয়ে আপাতত বিদায় নেন মাঠ থেকে। রেকর্ডের মালা পড়াতে যে আবারও ফিরতে হবে এই মরসুল পার্কে!
এরই মধ্যে ছাপ পড়তে শুরু করেছে তা। বাজারে আসার পর মাত্র দুই ঘণ্টায় বিক্রি হয় রোনালদোর ২০ লাখ নতুন জার্সি। অন্যদিকে হু-হু করে বেড়ে চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আল নাসের নিয়ে ফুটবল প্রেমীদের আগ্রহ।
সাউদী ক্লাবে যোগ দেওয়ার আগে রোনালদো ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে সম্ভাব্য সবকিছুই জিতেছেন। রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। সান্তিয়াগো বার্নাবুতে নয়টি সফল মৌসুমে চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, দুটি লা লিগাসহ জিতেছেন অনেক শিরোপা। এরপর জুভেন্টাসের হয়ে তিন বছরের অধ্যায়ে জিতেছেন দুটি সিরি আ, একটি ইতালিয়ান কাপ। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে দুই মেয়াদে জিতেছেন তিনটি প্রিমিয়ার লিগ, দুটি লিগ কাপ ও একটি করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।