Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আগামী জাতীয় নির্বাচনও নাসিক নির্বাচনের মতো নিরপেক্ষ হবে -ওবায়দুল কাদের

| প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের মতো অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে হবে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে তিনি এ দাবি কথা বলেন।
কাদের বলেন, আমি কথা দিচ্ছি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো ‘ফ্রি এন্ড ফেয়ার’ করার ব্যবস্থা করব।
ওবায়দুল কাদের বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কিন্তু আপনি (খালেদা) যদি নির্বাচনে না আসেন তাহলে কার জন্য ফ্রি এন্ড ফেয়ার নির্বাচন করব? নাসিক নির্বাচনের মতো হবে আগামী জাতীয় নির্বাচন। এর জন্য আমরা সবার সহযোগিতা চাই।
কাদের বলেন, আজ শুধু নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মানুষের মধ্যে আলোচনা। এই নির্বাচন খুবই সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের এটা একটা  রেকর্ড হয়েছে।
তিনি বলেন, এই নির্বাচনের কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি আমাদের বার বার বলেছিলেন সবাইকে বলে দাও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। এই নির্বাচন  সেভাবেই হয়েছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য বিজয় হয়েছে।
সেই ছাত্রলীগ দরকার নাই
ছাত্রলীগের মারামারিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার ঘটনায় ‘বিস্ময়’ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, গতকাল বুধবার হঠাৎ করে দেখলাম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কারণ ছাত্র লীগের দুই গ্রুপ মারামারি করেছে। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এর জন্য কি আইন নেই? ছাত্রলীগ কি আইন-কানুনের ঊর্র্ধ্বে?
তিনি বলেন, যে ছাত্রলীগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট করে, সেই ছাত্র লীগের দরকার নাই। ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারির জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ অর্থাৎ মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলতে হবে। আমি এর বিপক্ষে। এর জন্য তো আইন আছে। আইন অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
কাদের বলেন, আমি সঙ্গে সঙ্গে ওখানে কথা বলেছি, ছাত্রলীগের বলেছি যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বহিষ্কার করতে। আর প্রশাসনকে বলেছি তাদের গ্রেফতার করতে।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে কাদের বলেন, সেখানের ক্যাম্পাসে পুলিশকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না বলে পুলিশ জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমি বলেছি। পুলিশ ঢুকতে দিলেন না, সতিত্ব ও সুচিতা নষ্ট হবে।
তিনি বলেন, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়ে কি সুচিতা থাকলো? আমি সেখানে ক্লাস খুলে  দেয়ার ব্যবস্থা করলাম। এটা একটা দৃষ্টান্ত করে দিলাম। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও যেন এটা অনুসরণ করে। এ সময় তিনি শিক্ষকদেরও সমালোচনা করেন।
কাদের বলেন, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এতো বেশি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন, যেটা দরকার নেই। আর এটা তারা করেন পদোন্নতি ও নিজেদের বলয় তৈরি করার জন্য। আমি বলছি না, শিক্ষকদের রাজনীতি করা অভিপ্রেত নয়। রাজনীতির প্রতি তাদের সমর্থন অবশ্যই থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফীন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি নাসরিন আহমেদ, আইবিএর পরিচালক অধ্যাপক একেএম সাইফুল মজিদ, আইবিএ’র অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের নতুন রেকর্ড নাসিক
এর আগে গতকাল বিকালে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডি কার্যালয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন শেষ হওয়ার পরপরই এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের দাবি করেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে জাতিকে দেয়া ওয়াদা আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, গতকাল ঠিক এই সময়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আস্থা, দৃঢ়তা ও বিশ্বাস নিয়ে বলেছি, আমরা নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন যেকোনো মূল্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সর্বাত্মক স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার মনে হয়, আমরা আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে জাতিকে আওয়ামী লীগ  নেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে যে ওয়াদা দিয়েছি তা অক্ষরে অক্ষরে আমরা সেই ওয়াদা পালন করেছি।
গতকাল বুধবার একই কার্যালয়ে নাসিক নির্বাচন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, নাসিকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করে বিএনপিকে আন্দোলনের কোনো সুযোগ দেয়া হবে না।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আজকে আমার মনে হয় শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের একটা নতুন রেকর্ড স্থাপন হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। অনেক শঙ্কা, অনেক তৃতীয় শক্তি, অনেক সমস্যা, অনেক সংকট, অনেক উদ্বেগ এসবের জল্পনা-কল্পনা ছিল। কিন্তু বাস্তবে সব কিছুই ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে। এগুলোর বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই, সেটা নাসিক নির্বাচনে জনগণ এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রমাণ করেছে। আমাদের পার্টি (আওয়ামী লীগ) সেখানে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছে। সরকারের সকলে দায়িত্ব পালন করেছে, একটা নিরপেক্ষ শান্তিপূর্ণ অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য।
শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য নারায়ণগঞ্জের জনগণকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও দলের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দনও জানান ওবায়দুল কাদের। পাশাপাশি নাসিক নির্বাচনে ইসি তাদের স্বাধীন কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। সেজন্য নির্বাচন কমিশনকেও অভিনন্দন জানান কাদের।
ভোট গ্রহণ শেষে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন নির্বাচন শেষ হয়েছে। রেজাল্ট আসবে। ফলাফলের ব্যাপারেও আমরা ইনশাআল্লাহ আশাবাদী। জনগণের রায়েই ইনশাআল্লাহ আমরা বিজয়ী হব।
বিএনপি এই সরকারের অধীনে এই পর্যন্ত কোনো নির্বাচনে অংশ নিয়ে নাসিকের নির্বাচনী পরিবেশকে সুষ্ঠু বলে দাবি করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব। যে যেটাই বলুক শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের মানসকন্যা, সেটা তিনি প্রমাণ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের আরও উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দিপু মণি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আহমদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ কেন্দ্রীয় নেতা অসীম কুমার উকিল, সুজিত রায় নন্দী, ইঞ্জি. আব্দুস সোবহান গোলাপ, ফরিদুন্নাহার লাইলী, দেলোয়ার হোসেন, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, মারুফা আকতার পপি, আনোয়ার হোসেন, আমিরুল আলম মিলন, এবিএম রিয়াজুল কবির কাওসার প্রমুখ।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১১:৪৩ পিএম says : 0
    আমি আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রতিটি বক্তব্য পড়ে থাকি কারন তার প্রতি আমার বিশ্বাস কম ছিল তাই তিনি মন্ত্রী হবার পর নানা রকম কৌতক আমি করেছি লিখার মাধ্যমে। কিন্তু এখন যেহেতু ওনাকে জননেত্রী শেখ হাসিনা এই পদে বসিয়েছেন তখন আমাকে অবশ্যই তাকে সম্মান দেখাতেই হবে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। আমি মানি তিনি অনেক ভাল বক্তা এবং তিনি সাংবাদিক ছিলেন লিখক এখনও আছেন কাজেই তিনি ভাল্ভাল উপদেশ মূলক কথা বলবেন এটাই স্বাভাবিক। তিনি যেভাবে দলকে একটা পর্যায়ে নেয়ার চেষ্টা করছে এটা প্রশংসনীয়। ...........................
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ওবায়দুল কাদের


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ