Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদায় পেলে, বিদায়

প্রতিটি দেশে পেলের নামে স্টেডিয়াম চান ফিফা সভাপতি

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

যেখানে খেলে কিংবদন্তি হয়ে ওঠার পথে যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্তোস থেকেই শেষ বিদায়টাও নিলেন পেলে। আগে যখনই এসেছেন পায়ের জাদুতে মুগ্ধ করেছেন এই স্টেডিয়ামের দর্শকদের, রোমাঞ্চিত করেছেন নানান কারিকুরিতে, গর্বিত করেছেন নানা কীর্তিতে। সতীর্থ, সমর্থকদের কাঁধে চড়ে উল্লাসে মেতেছেন বহুবার। প্রিয় সেই মাঠ ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচায় আবারও এলেন পেলে, এবারও বন্ধু-প্রিয়জনদের কাঁধে চড়ে, তবে কফিনবন্দী ফুটবল সম্রাট, নিথর।

ক্যান্সারের সঙ্গে লম্বা সময়ের লড়াইয়ের পর গত বৃহস্পতিবার ৮২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন খেলোয়াড় হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জেতা ইতিহাসের একমাত্র ফুটবলার পেলে। সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতাল থেকে আগের দিন ভোরে তার কফিন আনা হয় সান্তোসের এই ভিলা বেলমিরো। মাঠের মাঝখানে পেলের কফিন নিয়ে আসে ছেলে এডিনহোর নেতৃত্বে আত্মীয়স্বজন। এর পরই সারিবদ্ধভাবে ফুটবলের রাজাকে শেষ বিদায় জানানো শুরু করেন হাজারও ব্রাজিলিয়ান। গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত কফিন ছিল পেলের প্রিয় মাঠে। ভিলা বেলমিরোর এস্তাদিও উরবানো কালদেরিয়ায় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে সান্তোসের রাস্তায় হয় শেষ যাত্রা। পরে তার চাওয়া অনুযায়ী পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে সমাহিত করা হয় একুমেনিকাল নেক্রপলিস মেমোরিয়ালে।

সমুদ্রতীরে অবস্থিত সান্তোসের মাঠ ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়াম, যা ‘আরবানো কালদেরিয়া’ স্টেডিয়াম নামেও পরিচিত, যেখানে ফুটবল খেলে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বজয়ী, সেই চিরচেনা আঙিনায় তার শেষ বিদায়। শেষবারের মতো ছেলেকে দেখতে এসেছিলেন শতবর্ষী মা সেলেস্তা, ছিলেন পেলের শেষসময়ের সঙ্গী স্ত্রী মার্সিয়া আওকি ও সন্তানেরা। ফুলে ফুলে ঘেরা পেলের কফিনে প্রথম শ্রদ্ধা জানান ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো, কনমেবলপ্রধান আলেজান্দ্রো ডমিঙ্গেজসহ ব্রাজিলের গণমান্য ব্যক্তিবর্গ। পিএসজি থেকে ছুটি নিলেও আসতে পারেননি নেইমার। তার পরিবর্তে হাজির ছিলেন তার বাবা। ব্রাজিলের কালো মানিককে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ১২ বছর বয়সি ছেলেকে নিয়ে ৫০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করে রিও থেকে সান্তোসে এসেছেন কার্লোস মোতা। ৫৯ বছর বয়সি এ ব্রাজিলিয়ান বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমার পুরো ছেলেবেলা পেলেময়। তখন তিনি ব্রাজিলকে তিনটি বিশ্বকাপ এনে দিয়েছেন। তিনি ব্রাজিলের প্রতীক!’

স্বামীর লাশের পাশে স্ত্রী মার্সিয়া কান্নায় ভেঙে পড়লে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। ফিফা সভাপতি তখন আওকিকে সান্ত্বনা দেন। পরে শেষ শ্রদ্ধার অনুষ্ঠানে সারা বিশ্বকে আবেগঘন এক বার্তাই দেন ফিফা বস। প্রতিটি দেশে ‘ও রেই’ বা ‘দ্য কিং’ এর নামে স্টেডিয়াম দেখতে চান তিনি। বিশ্বের প্রতিটি দেশের কাছে অনুরোধ করলেন ফুটবলকে মুঠোভরে দেওয়া পেলের নামে স্টেডিয়ামের নামকরণের, ‘পেলে চিরন্তন। “রাজা”র প্রাপ্য সম্মান অবশ্যই ফিফা দেবে। আমরা বিশ্বের সব ফুটবল ফেডারেশনকে প্রতিটি ম্যাচের আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করতে বলেছি এবং ২১১টি দেশকে বলেছি, তাদের একটি স্টেডিয়ামের নামকরণ যেন পেলের নামে করা হয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জানতে হবে এবং মনে রাখতে হবে যে পেলে কে ছিলেন।’

দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক নানা জটিলতায় ভোগা পেলে গত ২৯ ডিসেম্বর সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান পেলে। সোমবার তার প্রিয় ক্লাব সান্তোসে চলছে শেষ শ্রদ্ধার অনুষ্ঠান। ফিফা সভাপতি থেকে শুরু করে ভক্ত, সমর্থকেরা ফুটবলের রাজাকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। কাতার বিশ্বকাপের চলাকালীন অসুস্থ হয়ে সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন পেলে। ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জেতা এই মহানায়কের আরোগ্য কামনা করে বিবৃতি দিয়েছিল ফিফা। সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের আকুল প্রার্থনা ছিল প্রিয় তারকার জন্য। কিন্তু সব ব্যর্থ করে দিয়ে ৮২ বছর বয়সে অন্যলোকে পাড়ি জমান পেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ