Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশি কোচের কদর বেশি

বিপিএলের সাত দলের পাঁচটিতেই বাংলাদেশি কোচ

স্পোর্টস রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

মাঠে ঢুকতেই নাফিস ইকবালের সঙ্গে কিছু একটা বলতে শুরু করলেন নাজমুল হোসেন। কাছেই নেটে তখন পেসারদের নিয়ে কাজ করছেন সৈয়দ রাসেল। রাজিন সালেহর ব্যস্ততা ব্যাটসম্যানদের নেট সেশনে। সেখানে তার সঙ্গী তুষার ইমরানও। গত দু’দিনে মিরপুর একাডেমি মাঠে সিলেট স্ট্রাইকার্সের অনুশীলনে টুকরো টুকরো ছবিগুলো দেখে মনে হলো যেন সাবেক ক্রিকেটারদের মিলনমেলা! দেশিদের প্রাধান্য দিয়ে পুরো কোচিং প্যানেলই সাবেক ক্রিকেটারদের নিয়ে সাজিয়েছে বিপিএলে নতুন মালিকের তত্ত্বাবধানে খেলতে আসা সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজি। অবশ্য শুধু সিলেট নয়, বিপিএলে এবার কোচিংয়ে সব দলেই দেশিদের জয়জয়কার।
বিপিএলের আগের আট আসরে বিদেশি কোচদের আধিক্য ছিল নিয়মিত চিত্র। এবার সে পথে না হেঁটে দেশিদের দিকেই ঝুঁকেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। সাত দলের মধ্যে পাঁচটিতেই প্রধান কোচ বাংলাদেশি। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ হিসেবে আগে থেকেই রয়েছেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। দেশি-বিদেশি মিলিয়েই বিপিএলের সফলতম কোচ তিনি। এবার তার চ্যালেঞ্জ নিজের কোচিং রেকর্ড আরও সমৃদ্ধ করার। দল পরিবর্তন করে এবার খুলনা টাইগার্সে দায়িত্বে খালেদ মাহমুদ সুজন। বিপিএলে কোচ হিসেবে শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব আছে তারও। গত আসরে ফরচুন বরিশালের মেন্টর হিসেবে থাকা নাজমুল আবেদীন ফাহিম প্রথমবারের মতো এবার সামলাবেন প্রধান কোচের দায়িত্ব। এছাড়া প্রথমবার প্রধান কোচ হিসেবে থাকছেন রাজিন সালেহ (সিলেট স্ট্রাইকার্স) ও সোহেল ইসলাম (রংপুর রাইডার্স)। দুজনেরই ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা বেশ সমৃদ্ধ।
নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে নানা সময়ে দেশের ক্রিকেটে দেখা গেছে নানা ভূমিকায়। বিকেএসপিতে অনেক দিন কাজ করে পরে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন বিসিবিতে। পরে আবার বিকেএসপিতে ফিরে ক্রিকেট উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। দেশের অনেক ক্রিকেটারের কোচ তিনি, যে কোনো সমস্যায় অনেক ক্রিকেটারর সবচেয়ে বড় ভরসার আশ্রয়স্থল। তবে এরকম পর্যায়ে একটি দলের কোচের দায়িত্ব পালন করবেন তিনি প্রথমবার। বর্ষীয়ান এই ক্রিকেটগুরু বললেন, বিপিএলে এবার দেশিদের এমন আধিক্য স্থানীয় কোচদের সামর্থ্যেরই পরিচায়ক, ‘আমার মনে হয়, এটি একটি ইঙ্গিত করে যে আমাদের দেশেও এই মানের টুর্নামেন্টে দল পরিচালনার মতো কোচ আছে। ভবিষ্যতে হয়তো সাত দলেই দেশি কোচ দেখতে পাবো আমরা। এর মানে এই না যে বিদেশি কোচ আনা যাবে না। তার পাশাপাশি দেশি কোচ তৈরিরও প্রয়োজনীয়তা আছে। সেটিই হয়তো এখন হচ্ছে।’
খেলোয়াড়ি জীবন শেষে রাজিন সালেহ কোচিংয়ে সম্পৃক্ত হয়েছেন বেশ কয়েক বছর ধরেই। বাংলাদেশের হয়ে ২৪ টেস্ট ও ৪৩ ওয়ানডে খেলা ক্রিকেটার বিপিএলেও কোচিং করিয়েছেন সহকারী নানা দায়িত্বে। এবার প্রধান কোচের দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন ৩৯ বছর বয়সী সাবেক ব্যাটসম্যান। সিলেটের প্রথম দিনের অনুশীলনের পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে রাজিন বলেন, এই চ্যালেঞ্জ জয়ের পূর্ণ আত্মবিশ্বাস তার আছে, ‘এটি আমার জন্য অনেক বড় সুযোগ। আমি রোমাঞ্চিত। দলে মাশরাফি, মুশফিকদের মতো বড় খেলোয়াড়রা থাকায় আমার জন্য কাজ করা খুব একটা চাপ হবে না। আমার কোচিং স্টাফের অন্যরাও অনেক বছর ক্রিকেট খেলে এসেছে। আমি আশা করি তাদের নিয়ে আমার কাজটা সহজ হয়ে যাবে। বিপিএল অনেক বড় একটা মঞ্চ। অনেকটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মতোই। অনেক বিদেশি খেলোয়াড়রা আসবে। বড় বড় খেলোয়াড়দেরকে কোচ হিসেবে ম্যানেজ করা খুব কঠিন। তবে আমি মনে করি, যেহেতু আমরা সব খেলোয়াড়দের সঙ্গেই খেলেছি। তাই আমাদের কাজটা সহজ হয়ে যাবে।’
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সবশেষ আসরের চ্যাম্পিয়ন কোচ সোহেল ইসলাম। গত বছর তার কোচিংয়েই প্রথমবার শিরোপা জিতেছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। ঘরোয়া ক্রিকেটের সাফল্যের সোপান বেয়ে এবার বিপিএলেও রণপরিকল্পনা সাজাবেন জাতীয় দলের ফিল্ডিং কোচ ও স্পিন কোচ হিসেবে নানা সময়ে কাজ করা সাবেক এই অফ স্পিনার।
রাজিনের মতো তিনিও বিপিএলে কাজ করার সুযোগ পেয়ে রোমাঞ্চিত। এখান থেকে সামনে এগিয়ে চলার প্রত্যয় ফুটে উঠল তার কণ্ঠে, ‘এটি আমাদের জন্য একটা ভালো সুযোগ। পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও আছে যে অনেক বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করতে হবে। তবে এটি আমাদের ক্যারিয়ারের জন্য ভালো। এতে আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে যে বড় টুর্নামেন্টে কাজ করারও সামর্থ্য আছে আমাদের, ‘এতদিন (বিপিএলে) দেশি কোচদের খুব বেশি দেখা যায়নি। তবে এখন ফ্র্যাঞ্চাইজিরা আমাদের ওপর ভরসা রাখছে। আমরা সেই জায়গাটা তৈরি করতে পেরেছি, এটাও একটা ভালো দিক।’
দায়িত্ব পাওয়া এক ব্যাপার, ভরসার প্রতিদান দিতে পারা অন্য ব্যাপার। শেষ পর্যন্ত ফাইনাল খেলবে স্রেফ দুটি দল, শিরোপা জিতবে একটি। তবে কোচ হিসেবে পার্থক্য গড়ে দেওয়া, নিজের ছাপ রাখার সুযোগ আছে সবার সামনেই। এখানেই দেশের কোচদের বড় দায়িত্ব দেখছেন নাজমুল আবেদীন। বিপিএলে সামর্থ্যরে জানান দিয়ে নিজেদেরকে আরও বড় জায়গার জন্য প্রস্তুত ঘোষণা করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি, ‘বড় কাজে জড়িত থাকার মানে হলো বড় জায়গার অভিজ্ঞতা সঞ্চার করা। সাধারণত আমাদের কোচদের ওই সুযোগটা হয় না। কারণ কাজগুলো করার সুযোগ পাওয়া যায় না। কাজ না করলে কোচ তৈরি হবে না। কোচদের জন্য এই অভিজ্ঞতাটা খুব জরুরি। এখানে যত বেশি অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে, একজন কোচও নিজের তত বেশি উন্নতি করতে পারবে। শুধু কাজ করলেই হবে না। এখন আমাদের কোচদের দায়িত্বও বেড়ে গেল। যেহেতু দেশি কোচই বেশি। সবার দায়িত্ব হলো নিজ দলকে ভালো পারফর্ম করানো। ভালো ফলের মাধ্যমে এটি প্রতিষ্ঠা করা যে, আমাদের দেশের কোচরাও এই পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করতে পারে।’
বিপিএলের বাকি দুই দল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও ঢাকা ডমিনেটর্সে দেখা যাবে বিদেশি কোচ। এরই মধ্যে প্রধান কোচ হিসেবে জুলিয়ান উডকে নিয়োগ করেছে চট্টগ্রাম। এছাড়া ঢাকায় যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি পেসার চামিন্দা ভাসের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ