Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

‘বিষকন‌্যা’ সূত্রে অ্যালার্জির বিরুদ্ধে সাফল্য পেলেন চিকিৎসকরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০২৩, ৬:৩৬ পিএম | আপডেট : ৬:৫১ পিএম, ২ জানুয়ারি, ২০২৩

অ‌্যারিস্টটল আর সক্রেটিস দু’বার বিষকন‌্যার কবল থেকে বাঁচিয়েছিলেন গ্রিক বীর আলেকজান্ডারকে। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকেও বিষকন‌্যার ছোবল থেকে রক্ষা করেছিলেন তার গুরু কৌটিল‌্য ওরফে চাণক‌্য। কৌটিল্যের অর্থ্রশাস্ত্রে তার উল্লেখও রয়েছে। এবার সেই বিষকন‌্যার দর্শন মেনেই অ‌্যালার্জির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন চিকিৎসকরা। বিষবৎ খাবারকে উপকারি করে তোলার দাবিও সামনে রাখলেন।

গ্রিক ও ভারতীয় ইতিহাসে জ্বলজ্বল করছে বিষকন‌্যারা! শত্রু নিকেষে রাজা-মহারাজাদের ব্রহ্মাস্ত্র হয়ে ওঠা এই সুন্দরী ললনারা অনেক সময় বুমেরাংও হয়েছে। যেমন চন্দ্রগুপ্তের মিত্রবেশী শত্রু পর্বতকের মৃত্যু হয়েছিল বিষকন্যার ছোবলে। বিষকন‌্যার প্রেমের জালে ফেঁসে কত বীরের যে মৃত্যু হয়েছে, ইয়ত্তা নেই। বিশাখ দত্তের মুদ্রারাক্ষস, সোমদেব ভট্টের কথাসরিৎসাগর-সহ একাধিক বইয়ে মিথ হয়ে উঠেছেন বিষকন‌্যারা। কবি ওয়াটেকার, হাউথর্ন, তুলসী দাস, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, অনেকের লেখাতে রয়েছে তাদের উল্লেখ।  সেই বিষকন‌্যা তৈরির দর্শন মেনেই নাছোরবান্দা অ‌্যালার্জির চিকিৎসায় সাফল‌্য পাচ্ছেন বলে দাবি করলেন চিকিৎসকরা।

‘বিশ্ব আয়ুর্বেদ মিশন’-এর সভাপতি অধ‌্যাপক জি এস তোমর ‘ওয়ার্ল্ড আয়ুর্বেদ কংগ্রেস’-সহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে এই নিয়ে বক্তৃতা করেছেন। তিনি জানালেন, শত্রুরাজারা তিল তিল করে বিষকন‌্যাদের তৈরি করতেন। টিকার ধাঁচেই অল্প অল্প ডোজে বিষ প্রবেশ করানো হত কন‌্যাদের শরীরে। ফলে কোনও প্রতিক্রিয়া হতো না। পরে সময় সুযোগ মতো বিষাক্ত হয়ে ওঠা এই কন‌্যাদেরই শত্রু নিকেশের লক্ষ্যে পাঠানো হতো, টার্গেটকে লাস‌্য-মোহে, রূপের মায়াজালে বন্দি করে ঘায়েল করতে। অনেক রাজা বিষকন্যার চুম্বনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। এগনিস নামে এক বিষকন্যার সঙ্গে শারীরিক সংসর্গের পরেই মারা যান বোহেমিয়ার রাজা দ্বিতীয় ওয়েনচেসলাউস।

অ‌্যালার্জি রুখতে একই তত্ত্বকে হাতিয়ার করছেন চিকিৎসকেরা। তোমরের দাবি, বহু মানুষের কাছে বহু খাবার বিষাক্ত। দুধ, দই, বাদাম, আটা, ভাত, সয়াবিন— এক-একজনের এক-এক খাবারে অ‌্যালার্জি। ধরা পড়ার পরে সেগুলি তাদের মেনু থেকে চিরতরে হারিয়ে যায়। এবার বিষকন‌্যা তৈরির ফর্মুলায় বিষবৎ খাদ‌্যকে উপকারি খাবারে পরিণত করা হচ্ছে। অর্থাৎ, অ‌্যালার্জি থাকলেও বাদাম, ডিম, দুধ, দই, আটা খাওয়া যাবে। শুধু বিষকন‌্যাদের মতো সইয়ে সইয়ে, অল্প অল্প করে ডোজ বাড়াতে হবে। একটা সময় খাবারে থাকা অ‌্যালার্জেন আর বিপাকে ফেলতে পারবে না খাদককে।

এমনটাই জানালেন রাজীব গান্ধী মেমোরিয়াল আয়ুর্বেদ হাসপাতালের অধ‌্যক্ষ ডা. তাপস মণ্ডল। তার কথায়, ‘‘কৌটিল্যের অস্ত্রশাস্ত্রে বিষকন‌্যার উল্লেখ রয়েছে। সুশ্রুত সংহিতায় রয়েছে বিষ চিকিৎসার বিধান। এছাড়া অষ্টাঙ্গহৃদয় ও অষ্টাঙ্গসংগ্রহেও অগদতন্ত্রের উল্লেখ রয়েছে। সেই সূত্র মেনেই থেরাপি শুরু হয়েছে।’’ যদিও এই পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আরজি কর হাসপাতালের ‘পয়জন সেন্টার’-এর প্রধান ডা. সোমনাথ দাস। তার মতে, অ‌্যালার্জি মোকাবিলায় চিকিৎসকরা বিজ্ঞান মেনে সাফল‌্য পেলে তো ভালই। কিন্তু যে দর্শনের ভিত্তিতে মেয়েরা বিষকন‌্যা হয়ে উঠেছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তা যথেষ্ট বিজ্ঞানসম্মত নয়। সূত্র: টাইমস নাউ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ