গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
ব্যাংকে টাকা জমা দিতে আসা, ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে বের হওয়া ও মানি এক্সচেঞ্জে আসা ব্যক্তিদের টার্গেট করতো একটি ছিনতাই চক্র। টার্গেটকরা ব্যক্তির পিছনে গাড়ি নিয়ে সুবিধাজনক স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে নিজেদেরকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে জোর করে গাড়িতে তুলে নিতো। গাড়িতে তুলে ভিকটিমের কাছে থাকা নগদ অর্থ ও মূল্যবান মালামাল কেড়ে নিয়ে সুবিধাজনক নির্জন স্থানে ফেলে দিয়ে চলে যেতো।
এই ছিনতাই চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগ।
গ্রেপ্তাররা হলো পিযুষ সুর, মো. হারুন, জোবায়ের হোসেন পারভেজ, মো. আরিফ হোসেন ও খোকন চন্দ্র দেবনাথ। তাদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত দুইটি মাইক্রোবাস, একটি প্রাইভেটকার, দুইটি পুলিশের রিফ্লেক্টিং ভেস্ট ও একটি হ্যান্ডকাফ উদ্ধার করা হয়।
রোববার (১ জানুয়ারি) রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গত ১৩ ডিসেম্বর রাত ৮টায় মতিঝিলের সিটি সেন্টার পার হয়ে অলিম্পিয়া বেকারির সামনে দিয়ে রিকশায় করে যাচ্ছিলেন ভিকটিম। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই কালো রংয়ের একটি মাইক্রোবাস রিকশার গতিরোধ করে এসে সামনে দাঁড়ায়। তারা ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার কাছে অবৈধ জিনিস আছে উল্লেখ করে রিকশা থেকে নেমে গাড়িতে উঠতে বলে। ভিকটিম গাড়িতে উঠতে না চাইলে চর থাপ্পর মেরে জোরপূর্বক ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে উঠায়।
ডিবি প্রধান বলেন, গাড়িতে উঠানোর পর ভিকটিমের দুই হাতে হ্যান্ডকাফ পড়ানো হয়। ভিকটিমের কাছে থাকা ৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকার সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা, একটি মোবাইল ফোন ও কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয় তারা। এরপর মতিঝিল শাপলা চত্ত্বর, ধোলাইপাড় টোলপ্লাজা, ধলেশ্বরী টোলপ্লাজা ও কুচিয়ামারা ব্রিজ হয়ে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পিডিএল ক্যাম্পের সামনে এসে রাত ৮টা ৩৮ মিনিটের দিকে ভিকটিমকে হ্যান্ডকাফসহ গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। এরপর গাড়িটি মাওয়ার দিকে চলে যায়।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, গত ২৬ ডিসেম্বর এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় একটি মামলা হয়। মামলাটি থানা পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা-মতিঝিল বিভাগ। তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে মাইক্রোবাসটি পশ্চিম নাখালপাড়া থেকে উদ্ধার করা হয়। গাড়ির মালিক এবং ঘটনার দিনের গাড়ির ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের দেয়া তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে অভিযুক্তদের অবস্থান সনাক্ত করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির এই কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তাররা পারস্পরিক যোগসাজসে প্রাইভেটকার নিয়ে ঢাকা মহানগর এলাকার বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে ঘোরাফেরা করতো। ব্যাংকে টাকা জমা দিতে আসা, ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে বের হওয়া ও মানি এক্সচেঞ্জে আসা ব্যক্তিদের টার্গেট করতো। এরপর টার্গেটকরা ব্যক্তির পিছনে-পিছনে গাড়ি নিয়ে সুবিধাজনক স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে নিজেদেরকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে নিতো।
গাড়িতে তুলে ভিকটিমের কাছে থাকা নগদ অর্থ ও মূল্যবান মালামাল কেড়ে নিয়ে সুবিধাজনক নির্জন স্থানে ফেলে দিয়ে চলে যেতো। ছিনতাই চক্রের সদস্যরা দুইটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পৃথক দুইটি গাড়িতে করে এ কার্যক্রম চালাতো।
গ্রেপ্তাররা আরও জানায়, তাদের গ্রুপের প্রধান পলাতক শহীদুল ইসলাম মাঝি। তার বিরুদ্ধে সারাদেশে ১৬টি মামলা রয়েছে। ইতোপূর্বে ডিবি পুলিশ শহীদুলকে একাধিকবার গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। পলতক শহীদুলসহ তার অন্যান্য সহযোগীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।সবাইকে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে ডিবি পুলিশ কিনা সেটা ভেরিফাই করে নিতে হবে। ডিবি পুলিশ বললেই গাড়িতে উঠবেন না।
প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে অথবা ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে নিশ্চিত হতে হবে এরা আসলেই ডিবি পুলিশ কিনা। এমন ঘটনার শিকার হলে অনেকেই থানায় অথবা ডিবি পুলিশকে জানাতে চায় না। ইতোপূর্বে যারাই তথ্য দিয়েছে, আমরা তাদের দেয়া তথ্য যাচাই করে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছি। তাই সবাইকে বলবো আপনারা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে অবিলম্বে পুলিশকে অবহিত করার অনুরোধ জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।