Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

শুরুর আগেই বিতর্কের আগাম বার্তা

প্রাইজমানি দ্বিগুণ, শুরুতে নেই, ডিআরএস, সালাউদ্দিনের ক্ষোভ

স্পোর্টস রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

বিশ্বের প্রতিটি দেশেই এখন ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের বেশ কদর। কাড়ি কাড়ি অর্থের ঝনঝনানি আর গ্ল্যামারের মিশেলে ক্রিকেট যে এখানে পায় বাড়তি রং! তবে সেই রং বরাবরই একটু ফিকে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ। যদিও বিসিবির দাবি ভারতীয় আইপিএলের পরই এই টুর্নামেন্টের অবস্থান। কিন্তু আরেকটি আসর মাঠে গড়ানোর আগেই যে সেই দাবিকে অবান্তর করে তুলছে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের কিছু অপারগতা!
আর তিনদিন পরই শুরু হতে যাচ্ছে বিপিএলের নবম আসর। ঢাক, চট্টগ্রাম ও সিলেট- দেশের এই তিনটি ভেন্যু হবে এবারের আসর। এবার ফ্রাঞ্চাইজিগুলোকে তিনবঝরের জন্য এক সুঁতোয় বেধে দিয়েছে বিসিবি। সেই সাতদল নিয়ে হতে যাওয়া আসরে প্রাইজমানিও বাড়ছে দ্বিগুণ পরিমাণ। টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের প্রাইজমানি বাড়ছে পাঁচগুণ। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন এই খবর। বিসিবি কার্যলয়ে তিনি জানান, ‘এবার চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ২ কোটি টাকা। রানার্সআপ পাবে ১ কোটি। এভাবে করে সবমিলিয়ে প্রায় ৪ কোটি টাকার মতো প্রাইজমানি থাকবে।’
গত আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স পেয়েছিল ১ কোটি টাকার প্রাইজমানি। রানার্সআপ ফরচুন বরিশাল পেয়েছিল ৫০ লাখ টাকা। একদম দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে এই প্রাইজমানি। ব্যক্তিগত প্রাইজমানির হারও বাড়ছে অনেক। গতবার টুর্নামেন্ট সেরা হয়ে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা প্রাইজমানি পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। সেটা এবার হয়ে যাচ্ছে ১০ লাখ, ‘ম্যান অব দ্য সিরিজকে (টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়) ১০ লাখ টাকা দেওয়ার চিন্তা আছে। এছাড়া সেরা বোলার, সেরা ব্যাটসম্যানকে ভালো একটা অঙ্কের পুরস্কার দেওয়া... এরকম করে আমরা প্রাইজমানি বাড়াচ্ছি।’
এটা অবশ্যই আশার খবর। তবে হতাশা জাগানিয়া খবর হচ্ছে, প্রাইজমানি বাড়লেও এবারও ডিশিসন রিভিউ সিষ্টেম (ডিআরএস) ব্যবস্থা করতে পারেনি বিসিবি। সময়ের অভাবে বিপিএলের গত আসরে এই প্রযুক্তি রাখতে পারেননি বলে অজুহাত দিয়েছিল আয়োজকরা। এবার সময় থাকলেও অন্যান্য সিরিজ ও টুর্নামেন্টের ব্যস্ততার সঙ্গে পেরে ওঠেননি তারা। তাই এবারও টুর্নামেন্টের অধিকাংশ সময়ে মিলছে না এই প্রযুক্তির সহায়তা। বিকল্প হিসেবে গতবারের মতো এবারও ‘অল্টারনেট ডিআরএস (এডিআরএস)’ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান ইসমাইল হায়দার। ডিআরএস প্রযুক্তি না পাওয়ার পেছনে এই সময়ে বিশ্ব ক্রিকেটে চলমান অন্যান্য খেলার কারণ দেখিয়েছেন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব, ‘এই সময় সারা বিশ্বে সব জায়গায় খেলা হচ্ছে। এখন মূলত হক আই পাওয়া যাচ্ছে না। সাধারণত দুইটা কোম্পানি থাকে- হক আই ও ভার্চুয়াল আই। ভার্চুয়াল আই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের ওখানে করে। হক আই যেহেতু দ্বিপক্ষীয় সিরিজে চুক্তিবদ্ধ থাকে, তাই শুধু এলিমিনেটরে (প্লে-অফ) আমরা আনতে পারব।’
তবে প্রথম পর্ব শেষে প্লে-অফ থেকে পূর্ণাঙ্গ ডিআরএস পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী গভর্নিং কাউন্সিল, ‘প্রস্তুতি বলতে আমরা সবসময় এটা নিয়ে কাজ করছি। মাত্র ভারত সিরিজ শেষ হলো। ৬ তারিখে আমাদের টুর্নামেন্ট শুরু। ডিআরএসের ব্যাপারটা হলো, এটা এলিমিনেটরে (প্লে-অফ) থাকবে। তিনটা ম্যাচ হয়, আরেকটা ফাইনাল। এখানে পূর্ণাঙ্গ ডিআরএস থাকবে। বাকি ম্যাচগুলোতে আমরা একটা অল্টারনেট ডিআরএস দেওয়ার চেষ্টা করছি। যেটি গতবার ছিল, তার থেকে আপগ্রেড ভার্সনের ডিআরএস থাকবে। যেটাকে আমরা বলি অল্টারনেট ডিআরএস।’
এডিআরএসে মূলত তাৎক্ষণিক রিপ্লে দেখে সেøা মোশন প্রযুক্তির ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন থার্ড আম্পায়ার। এছাড়া প্রয়োজনে স্পিøট স্ক্রিনও ব্যবহার করা হয়। তবে এলবিডব্লিউর ক্ষেত্রে বলের গতিপথ অনেকটা ধারণার উপর থেকে দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাদের। কট বিহাইন্ডে থাকে না এজ দেখার ব্যবস্থা, নির্ভর করতে হয় কেবল শব্দের উপর। এবারও সীমিত প্রযুক্তিতে অনেকটা ধারণার উপর সিদ্ধান্ত দেবেন টিভি আম্পায়ার। এবারের বিপিএলেও প্লে-অফের আগ পর্যন্ত ব্যবহৃত হবে এই পদ্ধতি। তাতে কতটা বিতর্কের ঊর্দ্ধে রাখা যাবে আসন্ন আসরকে সেটা সময়ই বলে দেবে। কেননা ডিআরএসহীন গত আসরই যে আছে বেশ কিছু কলঙ্কিত অধ্যায়। ডিআরএস না থাকায় শুরুতে ঢাকা পর্বের ম্যাচগুলোতে আম্পায়ারিং বিতর্ক প্রকট হয়ে দেখা দিলে চট্টগ্রাম পর্ব থেকে বাকি সময়ে এডিআরএস ব্যবহার করা হয়।
গত আসরের দিন তারিখ শেষ মুহূর্তে চূড়ান্ত হওয়ায় ডিআরএস ব্যবস্থা করতে পারেনি বিসিবি। কিন্তু এবার অনেক সময় পেয়েও ফলাফল একই। আগের তিক্ত অভিজ্ঞতা মনে করিয়ে এই সিদ্ধান্তে হতাশা জানিয়েছেন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। গতকাল হোম অব ক্রিকেটে প্রথম দিনের অনুশীলন শেষে কুমিল্লা কোচ জানান তার হতাশার কথা, ‘দেখেন এত বড় একটা টুর্নামেন্ট ডিআরএস না থাকলে আমাদের তো মন খারাপ হবেই, স্বাভাবিক। যেকোনো একটা সিদ্ধান্তের জন্য পুরো টুর্নামেন্টটা আপনি হেরে যেতে পারেন।’
এবার বিপিএলের দিন তারিখ চূড়ান্ত হয়ে কয়েকমাস আগে। সূচি বেশ আগে থেকে নির্দিষ্ট থাকায় সময় না পাওয়ার অজুহাত দেওয়ার উপায় নেই। এই কারণেই হতাশা জানাতে গিয়ে সমালোচনার ঝাঁজও কণ্ঠে নিয়ে এলেন সালাউদ্দিন, ‘আমার মনে হয় যেহেতু আপনারা (বিসিবি) অনেক সময় পেয়েছিলেন, আপনাদের বোর্ডের তো অনেক টাকা এই ধরণের টুর্নামেন্টে ডিআরএস থাকা উচিত। কারণ আপনাদের তো টাকার অভাব নেই। এত বড় টুর্নামেন্টে অবশ্যই ডিআরএস রাখা উচিত ছিল।’
আসছে ৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও সিলেট স্ট্রাইকার্সের ম্যাচ দিয়ে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে শুরু হবে বিপিএল। সে লক্ষ্যে নতুন বছরের প্রথম দিন গতকাল থেকেই অনুশীলনে নেমে পড়েছে অংশগ্রহণকারী দলগুলো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ