Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চারদিক উদ্ভাসিত হোক নতুন আলোয়

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

সোনালি স্বপ্নের হাতছানি নিয়ে উদিত হলো নতুন বছরের নতুন সূর্য। পৌষের কুয়াশার চাদর ভেদ করে উদ্ভাসিত হলো সোনালি আলোর সকাল। বর্ষ পরিক্রমায় নতুন খ্রিস্টাব্দ আমাদের নতুন ভাবনায়, নতুন সাধনায় অজেয়-অমিত শক্তিতে সামনে এগিয়ে যাবার পথের দিক নির্দেশনা দেয়। তাই নববর্ষের সূর্যরাঙা এ দিন একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যাবার দিন। অতীতের সমস্ত ভুল-ভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে পারি আলোকিত ভবিষ্যতের দিকে। আত্মবিশ্লেষণ, নির্মোহ সমালোচনার মাধ্যমে স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও ঐকান্তিকতায় বাস্তবতাকে স্বীকার করে অতীতের ভুল-ভ্রান্তিগুলোকে শুধরে ভবিষ্যৎ চলার পথকে প্রশস্ত করার এবং শপথ নেয়ার দিন আজ। এ দিনে মানুষ নতুন নতুন আশা আকাক্সক্ষা আর চাওয়া-পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে পথ চলা শুরু করবে নতুন উদ্যমে। জীবনের খেরোখাতায় সৃষ্টি করবে আনন্দ-বেদনার কাব্যে পাওয়া-না পাওয়ার স্মৃতি-বিস্মৃতির হিসাব-নিকেশের নতুন ধারাপাত। ধূসর ক্যানভাসে আঁকবে জীবনের প্রাপ্তি-প্রত্যাশার চিন্ময় চিত্রপট। নতুন সূর্যের হীরকদ্যুতিতে জেগে উঠবে নব নব প্রাণ।

বিশ্বজুড়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে শুরু হয় আতশবাজি, আলোকসজ্জা, নাচ-গান, খাবারের উৎসব আর আনন্দ। বহুমাত্রিক ও বর্ণিল আলোড়ন তোলা নতুনের আবাহনে জেগে ওঠে প্রাণমন। নববর্ষ উৎসবকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী আতশবাজির ঝলমলে রঙে হয়ে ওঠে রাতের আকাশ। কয়েক দশক আগেও নববর্ষকে এমন ঝাঁকঝমকভাবে উদযাপন করা হতো না। এ ধরনের উদযাপনের সংস্কৃতি শুরু হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। খ্রিস্টীয় নববর্ষকে উৎসব হিসাবে পালন শুরু করার পেছনে রয়েছে এক স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস। বৈশ্বিক পটভূমিতে খ্রিস্টীয় নববর্ষের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য অপরসীম।

সর্ব প্রথম নববর্ষ উদযাপন শুরু হয় খ্রিস্টের জন্মেরও দুই হাজার বছর আগে। সে সময় ২০ মার্চ তারিখের দিকে নববর্ষ উদযাপন করা হতো। পরবর্তীতে কালের পরিক্রমায় বিভিন্ন দিন-পঞ্জিকাকে অনুসরণ করে এসেছে আজকের খ্রিস্টীয় পঞ্জিকা। আদি রোমান দিন-পঞ্জিকা অনুযায়ী প্রতি বছর ১ মার্চ নববর্ষ উদযাপন করা হতো। ওই সময় বছর গণনা করা হতো ১০ মাসে। মার্চ মাস থেকে শুরু হতো নতুন বছর। খ্রিস্টের জন্মের ১৫৩ বছর আগে রোমে প্রথমবারের মতো ১ জানুয়ারিতে নববর্ষ উদযাপন শুরু করা হয়। খ্রিস্টের জন্মের ৪৬ বছর আগে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার প্রাচীন রোমান দিন পঞ্জিকায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনে নতুন দিন-পঞ্জিকা চালু করেন। এই দিন-পঞ্জিকায় ১ জানুয়ারিকে বছরের প্রথম দিন হিসাবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে বছরের প্রথম দিন হিসাবে ১ জানুয়ারি নববর্ষ উদযাপন শুরু হয়। এই দিন-পঞ্জিকাকে বলা হতো জুলিয়ান দিন পঞ্জিকা। ৫৬৭ খ্রিস্টাব্দের দিকে এসে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে নববর্ষ হিসাবে ১ জানুয়ারিকে বাদ দিয়ে দেয়া হয়। এরপর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন দিনে নববর্ষ উদযাপন শুরু হয়। ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান দিন-পঞ্জিকার সূচনা হয়। নতুন এই দিন পঞ্জিকা অনুযায়ী ১ জানুয়ারিকে আবার নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে উদযাপন করা হয়। গ্রেগরিয়ান দিন-পঞ্জিকার যাত্রা শুরু হলেও প্রথম দিকে উৎসবমুখর নববর্ষ উদযাপন করা হতো না। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এসে ধীরে ধীরে বিভিন্ন দেশে নববর্ষ পালন করা শুরু হয়। এরপর ১ জানুয়ারি নববর্ষ হিসেবে আস্তে আস্তে জনপ্রিয় হতে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ১৭৫২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ১ জানুয়ারি নববর্ষ পালন করা শুরু করে। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এসে ১ জানুয়ারি উৎসব মুখরভাবে বিশ্বের সকল দেশে নববর্ষ পালন শুরু করা হয়। ইউরোপের অনেক দেশে এই দিনটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালন করা হয়। বিশ্বের সকল দেশে গ্রেগরিয়ান নববর্ষ উদযাপিত হলেও সকল দেশে এটি প্রধান নববর্ষ উৎসব নয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে আরবি নববর্ষ বাংলাদেশে বাংলা নববর্ষ এবং চীনে চীনা নববর্ষের পঞ্জিকা অনুসারে নববর্ষ পালন করা হয়।

খ্রিস্টীয় নববর্ষের আলো-ঝলমল সূচনা মুহূর্তে নিয়ে উচ্ছ্বাস-উল্লাস বাঙালি সংস্কৃতির নিজস্ব কোনো সম্পৃক্ততা না থাকলেও পাশ্চাত্য-প্রভাব শহরাঞ্চলে এর ব্যপ্তি ঘটেই চলেছে। বিশেষ করে তরুণ সমাজ নববর্ষ উদযাপনে উদ্দীপিত। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর যারা জীবিকার কঠোর সংগ্রামে, সমস্যার ভারে বিধ্বস্ত, এসব নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামানোর কোনো অবকাশ নেই তাদের জীবনে। তবুও জীবন চলে জীবনের টানে, কখনো এক ফালি জোছনার চাঁদ, আবার আলো ফেলে না বর্ণিল স্বপ্ন বিভায়। বাঙালি সংস্কৃতি বলয়ের বাইরে হলেও অনেক স্বপ্ন ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রতি বছর ১ জানুয়ারি আমাদের মাঝে আসে স্বপ্ন-সাহসে, উল্লাসে। আমরা দিনটিকে বরণ করে নিই বিশ্বায়নের গতিময় ও ছন্দময় জীবন সাজানোর তাগিদে। তারপরও আবহমান বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে ধারণ করে বাঙালি হৃদয়ে আবর্তিত হয় বাঙালির পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ। রাঙায় জীবন এবং অঙ্গীকার করি, নতুন বছরে নতুনভাবে জীবনের স্বপ্নগুলোকে শাণিত চেতনায় বাস্তবে রূপ দিতে।

নতুন বছরের সূচনায় আমরা প্রত্যাশা করছি, উন্নয়নের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো তাঁদের ভিন্ন মতের ব্যবধান কমিয়ে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিপ্রবাহকে বেগবান করবেন। কেননা, স্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্ম পরিবেশ এবং চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারলেই দেশ এগিয়ে যাবে। মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশগ্রহণ জরুরি। উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে হবে উন্নত দেশের কাতারে। বিজয়ের পাঁচ দশকে ঐকান্তিক চেষ্টায় উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনসহ অনেক চ্যালেঞ্জ জয় করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে। বিশ্বমন্দার দুর্যোগের বিরূপ প্রভাব এখনো সেইভাবে ছুঁতে পারেনি দেশের অর্থনীতিকে। অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক বেশিরভাগ সূচকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেছে দক্ষিণ এশিয়াকে এবং বিশ্বের তাবৎ দেশকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হয়েছে বাংলাদেশ। অবকাঠামো, বিদ্যুৎ উৎপাদন, যোগাযোগ ও বন্দরের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য বিপুল অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। সমৃদ্ধি অর্জনের অভিযাত্রায় আমাদের যেতে হবে আরও অনেক দূর।

দারিদ্র্যকে নির্মূল করে মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন ও যোগাযোগ, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করে সমাজের সব ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সমৃদ্ধ বিশ্বব্যবস্থার জন্য জনগণের জীবনকে রূপান্তর করতে হবে। সমৃদ্ধ বিশ্ব ব্যবস্থার জন্য জনগণের জীবনকে রূপান্তর করতে উন্নয়নকে ধ্রুব নক্ষত্র করে এগিয়ে যেতে হবে। হিসাবের খাতায় ব্যর্থতার গ্লানি মুছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে নতুন বছরে নতুন শপথে বলীয়ান হবে দেশের মানুষ। শান্তিকামী মানুষ সহিংসতা, হত্যা-খুন কিংবা হানাহানির রাজনীতি পরিহার করে ২০২৩ সালে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করছে। নব চেনার নববর্ষে নতুন দিনের নতুন শপথে উদ্দীপিত হবে জাতি। বিগত বছরের সব কালিমা ধুয়ে-মুছে এগিয়ে যাবে সময়, সভ্যতা, রাজনীতি, অর্থনীতি আর সংস্কৃতি, এটাই কাম্য।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->