প্রতিশ্রুত ট্যাঙ্কের মাত্র এক চতুর্থাংশ ইউক্রেনকে দিচ্ছে পশ্চিমারা
ব্রিটেনের সানডে টাইমস রোববার জানিয়েছে, এপ্রিলের শুরুর মধ্যে ইউক্রেন পশ্চিম-প্রতিশ্রুত ট্যাঙ্কগুলোর এক চতুর্থাংশের কম পাবে। এতে
নববর্ষ উদযাপন মানবসভ্যতার অনুষঙ্গ। দুনিয়াজুড়ে গ্রেগরিয়ান দিনপঞ্জি অনুযায়ী আজ নববর্ষ উদযাপন হচ্ছে। প্রতিটি মানুষের জীবনে বছরের প্রথম দিনটি বিশেষ তাৎপর্যের দাবিদার। নতুন বছরে পা দিয়ে মানুষ শপথ নেয় আগত দিনগুলোকে সুন্দরভাবে সাজানোর; বিদায়ী বছরের যা কিছু ভুলত্রুটি, যা কিছু গ্লানিময় তা পরিহার করার। শুধু ব্যক্তিজীবন নয়, জাতীয়ভাবেও নতুন বছরটি ইতিবাচক হয়ে দেখা দেবে এমনটিই আশা করা হয়।
ইতিহাস বিবেচনায় বাঙালি এক প্রাচীন জাতি। গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের অধিবাসীদের রয়েছে ৫ হাজার বছরের ঐতিহ্য। আমাদের আধুনিক ইতিহাসও অহংকার করার মতো। জাতিগতভাবে বাঙালি যে সচেতন ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন তা ফুটে উঠেছে ভাষা ও স্বাধীনতার জন্য এ জাতির আত্মত্যাগে। প্রকৃতি উদারভাবে আমাদের দান করেছে উর্বর মাটি। এ মাটিতে বীজ বুনলেই সহজে ভরে যায় ফসলের মাঠ। এ দেশের নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওর যত্ন পেলে সোনার খনিতে রূপান্তরিত হয়। মানবসম্পদে সমৃদ্ধ এ দেশকে দরিদ্র বলার অবকাশ নেই।
২০২২ সালে আমাদের যেমন কিছু সাফল্য আছে, তেমন আছে কিছু ব্যর্থতা। আগের বছরের মতোই ২০২২ সালেও বিশ্ব অর্থনীতি ধুঁকে ধুঁকে এগিয়েছে। উন্নত-অনুন্নত অনেক দেশেরই প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক। অথচ, এমন দুঃসময়েও বাংলাদেশের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন চলছে। অনেক প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেও বাংলাদেশের উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। করোনাকাল কাটিয়ে শিক্ষার্থীরা আবার ক্লাসে ফিরেছে। নতুনভাবে শুরু হয়েছে তাদের জীবন গড়ার প্রস্তুতি।
একসময় পাশ্চাত্যের অনেকেই বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে বিকৃত আনন্দ পেতেন। সেই পাশ্চাত্যের পণ্ডিতরাই আজ বাংলাদেশকে ‘উন্নয়নের বিস্ময়’ বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিলের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশসহ ‘নেক্সট ইলেভেন’ভুক্ত দেশগুলোর অর্থনীতি ইউরোপের ২৭ দেশের অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ সংস্থা জেপি মর্গান বাংলাদেশকে ‘ফ্রন্টিয়ার ফাইভ’ বা অগ্রগামী পাঁচ দেশের অন্তর্ভুক্ত করেছে। দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের কথা বলে যে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে গিয়েছিল, সেই বিশ্বব্যাংকও এখন বাংলাদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এ সবই বাংলাদেশের অর্জন। একজন বাঙালি হিসেবে আমরা এ নিয়ে গর্ব অনুভব করি। একইভাবে প্রত্যাশা করি, ২০২৩ সাল হবে বাংলাদেশের উন্নয়নে তাক লাগানো একটি বছর।
মানুষ প্রতিকূল অবস্থাকে জয় করার সাহসও রাখে। প্রকৃতি আমাদের সেভাবেই সৃষ্টি করেছে। আমাদের রয়েছে পরিশ্রমী মানুষ। ঐক্যবদ্ধভাবে প্রয়াস চালালে এ জাতিকে সমৃদ্ধ বিশ্বের কাতারে নিয়ে যাওয়া কঠিন কিছু নয়। তবে এজন্য দরকার জাতীয় ঐক্য। দরকার হীনমন্যতাকে ঝেড়ে ফেলে শিরদাঁড়া সোজা করা। দরকার পারস্পরিক সহনশীল পরিবেশ।
গত কয়েক বছরে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, নবীনগর ডিইপিজেড-চন্দ্রা-যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, মিরপুর ফ্লাইওভার, হাতির ঝিল, হানিফ ফ্লাইওভার, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার, কুড়িল ফ্লাইওভার, বনানী ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে। পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল করছে। মেট্রোরেল চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে যেমন যানজট কমবে, তেমনি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমণে জ্বালানি ও সময় উভয়ই সাশ্রয় হবে। কমে আসবে পণ্য পরিবহন ব্যয়।
বিদায় ২০২২। এলো নতুন বছর ২০২৩। জীর্ণ পুরনো ধুয়ে-মুছে শুরু হোক আমাদের নতুন বছরের নতুন পথচলা। পুরনো বছরে অনেক ব্যর্থতা ছিল, আবার ছিল অনেক সাফল্যও। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন বছরে আমাদের নবযাত্রা আরো সফল হবে, এমনটিই প্রত্যাশা সবার। শুভ হোক, সুন্দর হোক নতুন বছর। নতুন বছরে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাবে, এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা। সাফল্যের পথে ২০২৩ সাল হোক আরো একটি মাইলফলক। স্বাগত ২০২৩।
আমরা জাতীয়ভাবেই তিনটি নববর্ষ উদযাপন করি। আজ খ্রিস্টাব্দ তথা সৌরবর্ষের প্রথম দিন, পয়লা জানুয়ারি। নববর্ষের প্রথম দিন উদযাপন একটি সাধারণ প্রথা। এটা পালনে আমরা বিগত দিনের গ্লানি মুছে দেশ ও জাতির নতুন সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখি। নতুন করে অতীতকে স্মরণ করে ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদী হই। বিগত বছরের ভুলগুলো সংশোধন করে আলো জ্বালি নতুন প্রত্যাশার। আত্মসমালোচনা করে সংশোধিত নতুন দিনের পরিকল্পনা গ্রহণ করি।
বিগত বছরটি রাজনীতির দৃষ্টিতে সুখকর ছিল না। সামাজিক অস্থিরতা সব সময় তাড়া করেছে। জাতীয় জীবনের সব ক্ষেত্রেই রাজনীতির প্রভাব প্রত্যক্ষ। রাজনীতি স্বচ্ছ হলে অর্থনীতি, সমাজ ও উন্নয়ন সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকে। তাই নতুন বছরের অঙ্গীকার হোক, গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ ধরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার শপথ। এ ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত পদক্ষেপ নিতে পারলে নতুন বছর হবে জাতির জন্য একটি মাইলফলক, স্বাধীনতা হবে অর্থবহ। মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার পূরণে জাতি এগিয়ে যাবে। নববর্ষের প্রকৃত আবেদন তখনই সার্থক হবে। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা,
সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।