Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সর্বদা আল্লাহর দিকে রুজু থাকা : যে গুণ অর্জন করতেই হবে

উসামা বিন আব্দুর রশীদ | প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল কারীমে বিভিন্ন জায়গায় বান্দাকে উদ্দেশ্য করে ইনাবাত ইলাল্লাহ-এর কথা বলেছেন। ইনাবাত শব্দের অর্থ অভিমুখী হওয়া। ইনাবাত ইলাল্লাহ মানে আল্লাহর অভিমুখী হওয়া। শিরক ও সকল গুনাহ এবং মাখলূকের মুখাপেক্ষিতা ইত্যাদি পরিহার করে আল্লাহ-অভিমুখী হওয়া। আল্লাহ তা’আলাকেই সকল ক্ষেত্রে নিজের আশ্রয়স্থল মনে করা। কোনো ইবাদতই যেমন আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে করা যায় না, তেমনি আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্য কারো দিকেও ইনাবাত হয় না।

আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জন এবং আখেরাতের মুক্তি লাভে ইনাবাত ইলাল্লাহ-এর বিকল্প নেই। তাই ইনাবাতের কথা কুরআনুল কারীমে বিভিন্নভাবে বলা হয়েছে। কোথাও সরাসরি ইনাবাত ইলাল্লাহর আদেশ করা হয়েছে। আবার কোথাও ইনাবাতের তারগীব দেয়া হয়েছে। কোনো আয়াতে ইনাবাত অর্জনকারীদের প্রশংসা করা হয়েছে, তো অন্য জায়গায় ইনাবাতের সুফল ও সুসংবাদ ঘোষণা করা হয়েছে। কোথাও নবীগণের ইনাবাত ইলাল্লাহর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। আবার কোনো আয়াতে ইনাবাত অর্জনকারীদের পথ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

আল্লাহ তা’আলার মারেফাত বান্দার মধ্যে ইনাবাতের গুণ তৈরি করে। আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালামের মাঝে যেহেতু আল্লাহ তা’আলার মারেফাত পূর্ণরূপে বিদ্যমান ছিল তাই সমস্ত নবী-রাসূলই ইনাবাতের চূড়ান্ত স্তরে উন্নীত ছিলেন। ইনাবাত অবলম্বন ও ইনাবাতের গুণে গুণান্বিত হওয়ায় কুরআন কারীমের বিভিন্ন স্থানে নবীগণের প্রশংসা করা হয়েছে। হযরত ইবরাহীম (আ.) সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয়ই ইবরাহীম (ছিলেন) সহনশীল, অতি কোমলহৃদয়, (আল্লাহ)অভিমুখী। (সূরা হূদ : ৭৫)। অর্থাৎ হযরত ইবরাহীম (আ.) সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’আলার দিকে অনেক বেশি রুজুকারী ছিলেন।

হযরত দাউদ ও হযরত সুলাইমান আলাইহিমাস সালামের ব্যাপারে কুরআনে কারীমে বলা হয়েছে, তারা উভয়ই নির্দিষ্ট ঘটনার পর আল্লাহ তা’আলার দিকে ইনাবাত অবলম্বন করেছেন। তাদের ইনাবাত অর্জনের বিষয়টিকে আল্লাহ তা’আলা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। (সূরা ছদ : ২৪-৩৪)।

আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালাম আল্লাহ তা’আলার সমীপে ইনাবাতের নিবেদনও পেশ করতেন। ইনাবাতের বিষয়ে হযরত শুআইব (আ.)-এর অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে কুরআনে কারীমে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি নিজ কওমকে আল্লাহ তা’আলার পায়গাম পৌঁছানোর পর আল্লাহ তা’আলার কাছে নিবেদন করতেন : আমার দ্বারা যা কিছু হয় তা শুধু আল্লাহরই সাহায্যে হয়। আমি তারই ওপর নির্ভর করেছি এবং আমি (সকল বিষয়ে) তাঁরই অভিমুখী হই। (সূরা হূদ : ৮৮)।

আল্লাহ তা’আলা মুমিনদেরকেও ইনাবাত অবলম্বন করার আদেশ করেছেন। কুরআন কারীমে আল্লাহ তা’আলার দিকে ইনাবাত ও তাঁর একনিষ্ঠ আনুগত্যকে আখেরাতে নাজাতের উপায় বলা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন : আর তোমরা তোমাদের রবের অভিমুখী হও এবং তাঁর অনুগত হয়ে যাও তোমাদের ওপর আজাব আসার আগেই, অতঃপর তোমাদের সাহায্য করা হবে না। (সূরা যুমার : ৫৪)। অর্থাৎ, তোমরা তাওহীদ ও ইখলাসের সাথে আল্লাহ তা’আলার ইবাদত ও তওবার মাধ্যমে ইনাবাত ইলাল্লাহ অবলম্বন করো এবং দ্বীনের পূর্ণ অনুসরণের পথে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তা’আলার আনুগত হও।

হেদায়েত মানুষের প্রতি আল্লাহ তা’আলার অন্যতম বড় নিয়ামত। এ হেদায়েত পাওয়ার জন্যও ইনাবাত অবলম্বন করা আবশ্যক। কুরআনে আল্লাহ তা’আলা এ বিষয়টি একাধিকবার উল্লেখ করেছেন যে, হেদায়েত পেতে হলে আল্লাহ তা’আলার অভিমুখী হতে হবে। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকেই হেদায়েতের নিয়ামত দান করেন, যারা তাঁর অভিমুখী হয়। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন : আপনি বলে দিন, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিপথগামী করেন আর তিনি নিজের দিকে তাদেরকেই পথ দেখান যারা (তাঁর) অভিমুখী হয়। (সূরা রাদ : ২৭)।
আরেক আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন : আল্লাহ যাকে ইচ্ছা নিজের দিকে টেনে নেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়, তাকে নিজের দিকে পথ দেখান। (সূরা শূরা : ১৩)। এটা আল্লাহ তা’আলার নেজাম ও নিয়ম যে, আল্লাহ তা’আলা বক্রহৃদয় ও অবাধ্য একগুঁয়ে স্বভাবের লোকদের হেদায়েতের নিয়ামত দান করেন না। এই নিয়ামতে তাদেরকেই ধন্য করেন, যারা হেদায়েতের অনুসন্ধানী হয় এবং তা লাভ করে তাদের হৃদয় ও মানস আরো বেশি আল্লাহ-অভিমুখী হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন