Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এখনো বিনোদনেই সীমাবদ্ধ মেট্রোরেল

কর্মজীবীর মানুষের চেয়ে পরিবার পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব মিলে মেট্রোরেলে চলাফেরার দৃশ্য বেশি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম

দেশ মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করেছে। এটা খুশির খবর। কিন্তু রাজধানীর আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত চালু হওয়া মেট্রোরেল এখনো যাত্রীদের কাছে বিনোদনেই সীমাবদ্ধ। মূলত বিনোদনের জন্যই যাতায়াত করছেন সাধারণ মানুষ। গত দুই দিন সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় কর্মজীবীর মানুষের চেয়ে পরিবার-পরিজন, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব মিলে মেট্রোরেলে চলাফেরার দৃশ্য বেশি। অনেকেই কোন প্রয়োজন না থাকলেও শুধুমাত্র এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে যাওয়া আসা করছেন। আবার অনেকে শুধু ছবি তোলার জন্যই মেট্রোরেলে যাতায়াত করছে।
মেট্রোরেল চালুর দ্বিতীয় দিনে গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে ছুটে এসেছেন নানা পেশা ও বয়সের মানুষ। ভোর থেকে দীর্ঘ এ লাইন গিয়ে ঠেকেছে পাসপোর্ট অফিসের কাছাকাছি। বেশিরভাগ মানুষ এসেছেন শখের বশে মেট্রোরেলে উঠতে। তবে প্রয়োজনের তাগিদে মেট্রোরেলে উঠতে এসেছেন এমন লোকের সংখ্যা হাতে গুণা মাত্র কয়েকজন।
গতকাল সকাল থেকে যারা মেট্রোরেলে উঠতে এসেছেন তারা সবাই মূলত বিনোদনের জন্য এসেছেন। আবার যারা প্রথম দিনে চড়তে পারেননি মেট্রোরেলে তারা এসেছেন গতকাল। ফলে ছুটির দিনকে কোনোভাবে মিস করতে চান না। মেট্রোরেল চালু হওয়ার দ্বিতীয় দিনে আগারগাঁও স্টেশনে মানুষের ভিড় বেড়েছে। দলে দলে লোক এসেছে করেছে আগারগাঁও স্টেশনে। মানুষের ভিড় থাকায় টিকিট কাউন্টার থেকে শুরু করে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা যারা ব্যক্তি আছেন তারা তা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। দ্বিতীয় দিনে আগারগাঁও স্টেশন থেকে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী এবং ইউটিউবারদের ঘটনাস্থল থেকে লাইভ করতে দেখা যাচ্ছে। সেলফিবাজি শুধু বগিগুলোতেই নয়। যাত্রীরা লাইনে দাঁড়ানো থেকে শুরু করে টিকিট কাটা, প্রবেশ থেকে শুরু করে সবকিছুই ধারণ করে রাখছেন ক্যামেরায়।
আগারগাঁও স্টেশনে আগতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ যাত্রী এসেছেন মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও ফার্মগেট এলাকা থেকে। স্টেশনে যাত্রীদের টিকিট কাটতে সহযোগিতা করছেন স্কাউটের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা। তবে যাত্রার আগে মুহূর্ত থেকে স্মরণীয় করে রাখতে বেশিরভাগ যাত্রী সেলফি ও ছবি তুলছেন।
মিরপুর থেকে এসেছেন কামাল। সাথে স্ত্রী দুই মেয়ে এবং সন্তানকে নিয়ে এসেছেন। নাতনিও রয়েছে সাথে। তিনি চাকরি করেন। প্রথম দিন পরিবার নিয়ে আসতে পারেননি তাই এসেছেন।
পল্লবী এলাকা থেকে এসেছেন সাবিহা। সঙ্গে তার আরও পাঁচ বন্ধু এসেছেন। তারা সবাই উত্তরার একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন। সকালে দিয়াবাড়ি থেকে প্রথম ট্রিপে আগারগাঁও এসে নেমেছেন। এরপর ঘণ্টা খানেক সেখানে অবস্থান করেন। ফারিয়া বলছিলেন, প্রথম ট্রিপে এসেছি ভালো লাগল। আগারগাঁও স্টেশনে অবস্থান করছি দেখছি। আবারো দিয়াবাড়ির দিকে রওনা হব।
সঙ্গে থাকা তার বন্ধু বলেন, আমরা একসাথে ভোরবেলা পাঁচজন রওনা হয়েছে উত্তরা থেকে। দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও এসেছি। আগে মেট্রো রেলের কথা শুনতাম। সেই বাস্তব অভিজ্ঞতার স্বাদ নিলাম। ঢাকাবাসীর জন্য কল্যাণকর হবে। তবে এই সিস্টেম চালু হয়েছে তা রক্ষণাবেক্ষণ ও সুষ্ঠু ব্যবহার আমাদের সবার দায়িত্ব।
মেট্রোরেলের স্বাদ নিতে গতকাল শুক্রবার দর্শনার্থীদের প্রচুর ভিড় প্লাটফর্মে ও বগিগুলোতে। অধিকাংশই প্রথমবার উঠছেন এই ট্রেনে। আগারগাঁও থেকে উত্তরা ট্রেনে উঠে রোমাঞ্চিত সবাই। প্রথম এই ট্রেনে উঠার মুহূর্তটা সেলফি তুলে অনেকেই স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখছেন মোবাইলে। ট্রেনের বগিগুলোতে দেখা যায় পরিবার পরিজন নিয়ে ট্রেনে উঠছেন যাত্রীরা। মোবাইলে সেলফিবাজিতে মত্ত সবাই। আকবর আলী পরিবারের ছয়জন নিয়ে উঠেছেন ট্রেনে। কোলে ছোট বাচ্চা নিয়ে নিচ্ছিলেন ছবি। তিনি বলেন, ছুটির দিন তাই পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসলাম। ভালোই লাগছে। এখন ঘুরতে এসেছি ভবিষ্যতে যখন কাজের উদ্দেশে যাতায়াত করব তখন যানজটমুক্তভাবে যাতায়াত করতে পারব।
এদিকে, বিশ মিনিট ধরে কোনোভাবে চালু করা যাচ্ছিল না দিয়াবাড়ি স্টেশনের দক্ষিণ অংশের প্লাটফর্মে থাকা একটি ভেন্ডার মেশিন। ফলে সেই মেশিনের লাইনে দাঁড়ানো যাত্রীদের অন্য লাইনে দাঁড় করিয়ে দিতে বাধ্য হন স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা। দিয়াবাড়ি স্টেশনের কাউন্টারে সকাল ১১টায় এমন চিত্র দেখা গেছে। পরে এই স্টেশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আরও একটি মেশিন অকেজো হয়ে পড়ে আছে। সেটি সকাল থেকে কাজ করলেও মাঝে নষ্ট হয়ে যায়। বাড়ি স্টেশনে একই সাথে দুটি মেশিন এখন বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে খোঁজ নিয়ে গিয়ে জানা গেছে, একই অবস্থা আগারগাঁও স্টেশনেও। সকাল ৯টা ২০ মিনিটে আগারগাঁও স্টেশনে এক যাত্রী একটি ১০০ টাকার নোট এবং সাথে ২০ টাকার নোট দিলে তিনি দুটি কার্ড পেয়েছেন সাথে ৬০ টাকা করে তার ফেরত আসে। ফলে বিষয়টিকে সমস্যা মনে করে সেই মেশিনে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় স্বেচ্ছাসেবকরা। পরে সেটি বন্ধ রাখা হয়।
এ বিষয়ে সেখানে দায়িত্ব থাকা এক কর্মী জানান, সেই ব্যক্তি টাকার উপরে লেখা এবং ঘষামাজা নোট দেওয়ার ফলে এমনটি ঘটেছে। দুই স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, বিশেষ করে যারা পুরান নোট নিয়ে এসেছেন তারা ভেন্ডর মেশিনের টাকা প্রবেশ করানোর পর এমন সমস্যায় পড়ছেন। এদিকে দিয়াবাড়ি স্টেশনে যাত্রীদের চাপ বাড়ছে।
###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মেট্রোরেল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ