Inqilab Logo

রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভারতে বসে ডাকাতি চক্র নিয়ন্ত্রণ করত ল্যাংড়া হাছান

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ৬:২৪ পিএম

অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে প্রথমে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশের বিভিন্ন জেলায় ও ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন জায়গায় সোনার দোকানে ডাকাতি করত একটি চক্র। চক্রের মূলহোতাসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

পুলিশ জানায়, হাছান জমাদ্দার ওরফে ল্যাংড়া হাছান ভারতে বসেই নিয়ন্ত্রণ করতেন ডাকাতি চক্র। তিনি সেখানে বসেই ঠিক করেন কোন দোকানে ডাকাতি করা হবে। ল্যাংড়া হাছান ডাকাতির আগের দিন ভারত থেকে এসে ডাকাতি করে আবার ভারতে চলে যেতেন। তারা বোমা ফাটিয়ে দোকানে ঢুকে ৬-৭ মিনিটের মধ্যে পুরো দোকান লুট করে চলে যেতো। ২০০৮ সাল থেকে এই পর্যন্ত ২৫-৩০টি সোনার দোকানে ডাকাতি করেছে।

বুধবার রাজধানীর রামপুরা হাজীপাড়া বৌ-বাজার এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলো- হাছান জমাদ্দার অরফে ল্যাংড়া হাছান (৩৪), আরিফ (২৬), আইনুল হক, ভোলা (৪২), সাইফুল ইসলাম মন্টু (৪৫), আনসার আলী (৫০) ও শাহিন (৩৫)। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, ৫টি চাপাতি ও একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, ল্যাংড়া হাছানকে অনেক দিন ধরে খুঁজছিল পুলিশ। সে ২০০৮ সাল থেকে এই পর্যন্ত ২৫-৩০টি সোনার দোকানে ডাকাতি করেছে। সারা দেশ থেকে সোনার দোকানে ডাকাতি করে এই চক্র হাজার হাজার ভরি সোনা হাতিয়ে নিয়েছে। সেগুলো কোথায় বিক্রি করেছে, সেটাও স্বীকার করেছে হাছান।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, তাঁতি বাজারে একটি সংঘবদ্ধ চক্র রয়েছে, যারা এই চোরাই সোনা গলিয়ে বিক্রি করে দেয়। দোকান মালিক সমিতিকে বলবো, যারা এসব চোরাই সোনা কেনাবেচা করে তাদের যেন প্রশ্রয় না দেয়। তারাই সোনা কেনার কারণে ডাকাত চক্রটি এসব কাজ করে যাচ্ছে। তাঁতি বাজারে যেসব দোকানে চোরাই সোনা বিক্রি করতো সেসব দোকানের নাম পেয়েছি। রিমান্ডে এনে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করে ডাকাত চক্রের সদস্যদের নিয়ে ওই সব দোকানে অভিযান চালানো হবে।

ডিবি প্রধান বলেন, তারা বোমা ফাটিয়ে দোকানে ঢুকে যায়। পরে ৬-৭ মিনিটের মধ্যে পুরো দোকান লুট করে চলে যেতো। এসব কাজে তারা দুটি মোটরসাইকেল বা একটি প্রাইভেটকার নিয়ে আসতো। পরে ডাকাতি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা দিয়ে নিরাপদে ভারতে চলে যেত। ২০১২ সালে চট্টগ্রাম একটি ডাকাতি করতে গিয়ে হাসানের একটি পা বোমের আঘাতে উড়ে যায়। সর্বশেষে ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও ফেনীতে এ ধরনের দুর্ধর্ষ ডাকাতি করেছে তারা।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, এই ডাকাতির টাকা দিয়েই ল্যাংড়া হাছান বিভিন্ন জায়গায় বাড়িঘর করেছে। বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছে। গাজীপুর ও বরিশালের বাকেরগঞ্জ বাড়ি করেছেন। এছাড়া তার প্রাইভেটকারের ব্যবসা রয়েছে। তারা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে প্রথমে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশের মানিকগঞ্জ জেলা, ফেনী জেলা, চট্টগ্রাম জেলা, ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানা, ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ, বগুড়া জেলা এবং ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন জায়গায় সোনার দোকানে ডাকাতি করে আসছে।

হারুন অর রশিদ বলেন, তারা প্রথমে দেশের বিভিন্ন স্থানে জুয়েলারি দোকান এলাকাকে টার্গেট করে বাসা ভাড়া নেয় ও ডাকাতির প্রস্তুতি গ্রহণ করে। ডাকাতির পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে তারা প্রথমে বোমা ফাটিয়ে ও গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে অতি অল্প সময়ের মধ্যে স্বর্ণালঙ্কারের দোকান থেকে ডাকাতি করে। ওই ডাকাতির ঘটনায় গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের খিলগাঁও জোনাল টিম ছায়া তদন্ত করে ডাকাত চক্রকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

তাদের বিরুদ্ধে ডিএমপির রামপুরা থানায় ডাকাতি ও অস্ত্র আইনে ২টি মামলা করা হয়েছে। এছাড়া মূলহোতা হাছান জমাদ্দার ওরফে ল্যাংড়া হাছান নামে দেশের বিভিন্ন থানায় ১৭টি মামলা রয়েছে বলেও জানায় ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ