‘সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন’ এবং ‘দেশের মেরামত’ দুই দফা দাবির সমর্থনে এবি পার্টি বৃহস্পতিবার সাড়ে ১১ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশের শুরুতে শাহবাগ থানা পুলিশ অনুমতি ছাড়া সমাবেশ করতে দেয়া হবেনা মর্মে বাঁধা প্রদান করে। তারা সমাবেশ স্থল থেকে মাইক ও ব্যানার সরিয়ে নেয়।
পরবর্তীতে এবি পার্টির নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপের পর মাত্র আধা ঘন্টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেয় পুলিশ। সমাবেশ শেষ করে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এবি পার্টির কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে ফেরার পথে তোপখানা রোডে পুলিশ মিছিল আটকে দেয়। নেতা-কর্মীদের সাথে পুলিশের বাকবিতন্ডার পর প্রতিবাদী মৌন মিছিল নিয়ে বিক্ষুব্ধ কর্মীরা পুরানা পল্টন ও বিজয় নগর ঘুরে বিজয় ৭১ চত্বরে এসে বিক্ষোভ শেষ করে।
এরা আগে দলের আহবায়ক ও সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন যুগ্ম আহবায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মন্জু, যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক বিএম নাজমুল হক, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলতাফ হোসেইন সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
বিক্ষোভ সমাবেশে জনাব সোলায়মান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের ৫১ বছরের ইতিহাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন ছাড়া কোন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় নাই। বর্তমান সরকারের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে পড়েছে। তাই আমরা সর্বপ্রথম রাষ্ট্র বিনির্মাণ ও মেরামতের কথা বলেছি। সরকারের নেতা মন্ত্রীরা মনে করছেন ক্ষমতা হারালে তাদের লক্ষ লক্ষ লোকের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। এই আতংক ও ভয় থেকে তারা আরো বেশী স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ করছে। তিনি আশ্বস্ত করে বলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অতীতে কখনো সন্ত্রাস নৈরাজ্য হয়নি এবারও হবেনা ইন’শাআল্লাহ।
প্রফেসর ডা. আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচন থেকে দেখতে পেয়েছি যে, কোন দলীয় সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের তাগাদা অনুভব করেন না। যদিও বিরোধীদলে থাকা অবস্থায় তারা নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোন বিকল্প খুঁজে পান না- এই দ্বিচারিতা জাতীয় রাজনীতিকে এক গভীর খাদের কিনারায় এনে ঠেকিয়েছে।
অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, এটা খুবই দুখঃজনক যে স্বাধীনতা ও বিজয়ের ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা এখনো সত্যিকারের গনতন্ত্রের স্বাদ পাইনি। একটা গ্রহনযোগ্য নির্বাচন কাঠামো গড়ে তুলতে পারিনি। রাজনৈতিক কোন অচলায়তন শান্তিপূর্নভাবে সমাধান করা যাচ্ছে না। অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি রাজনৈতিক সংকটও ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে কিন্তু সরকার সমাধানের ব্যাপারে মোটেই আগ্রহী নয়।
সদস্য সচিব জনাব মজিবুর মন্জু বলেন, এবি পার্টির দুই দফা “নিরপেক্ষ নির্বাচন ও দেশ গড়ার রূপরেখা”- আজ দেশের মানুষের গণদাবী তে পরিণত হয়েছে।
এবি পার্টি যুগপৎ নয় বরং স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে ঘোষিত দুই দফার ভিত্তিতে জাতীয় আন্দোলন চালিয়ে যাবে। সমাবেশের শুরুতে পুলিশী বাঁধায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সরকারী দলের সমাবেশ করতে কোন অনুমতি লাগেনা বরং তাদের সমাবেশের জন্য পুলিশ সব রাস্তা ঘাট বন্ধ করে দেয়, অথচ বিরোধী দলের সভায় পুলিশ বার বার বাঁধা দিচ্ছে ও হামলা করছে। তিনি বলেন সরকার প্রতি পদে পদে সংবিধান লংঘন করছে। তাই আমরা বলেছি রাষ্ট্র বিনির্মাণ ও মেরামত করতে হবে। আমরা নির্বাচন চাই কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার সংকট এতই প্রকট যে, নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার অথবা জাতিসংঘ সহ আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের তত্ত্বাবধানে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়া কোন গ্রহনযোগ্য নির্বাচন হতে পারবে না। এতে সংবিধান কোন বাঁধা হয়ে দাড়াবে না যেমনটা ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ তে হয়নি।