কঠোর কোভিড বিধিনিষেধ শিথিল করার পর থেকেই চীনে লাফিয়ে বাড়ছে
করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা। রোগীর চাপে বেহাল দশা হাসপাতালগুলোর। দেশটির শিল্পাঞ্চলীয় প্রদেশে ঝেজিয়াংয়ে দিনে ১০ লাখের মতো সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে।
করোনা চীনের ভয়াবহ সেই সংকটের কথা তুলে ধরা হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসপাতালগুলোতে হুইলচেয়ারে এবং স্ট্রেচারে পড়ে আছে
করোনা রোগী। চীনের উত্তরাঞ্চলের হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রতিটি কোণে রোগীদের ভিড়। এমনকি তারা লিফটের দরজার মধ্যবর্তী সংকীর্ণ জায়গায় ঢুকে পড়ছে। তারা বেকার পড়ে থাকা একটি ওয়াক-থ্রু মেটাল ডিটেক্টর ঘিরে রয়েছেন। একটি করিডোরের দেয়ালে সারিবদ্ধ কাশির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
নিউইয়র্ক টাইমস আরও জানিয়েছে, চীনের হাসপাতালগুলো ইতিমধ্যেই রোগীতে ঠাসা। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত রোগীর ভিড় দেখা গেছে হাসপাতালে। সেই সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলায় তহবিল কম এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কর্মীও অপর্যাপ্ত ছিল। এখন চীনে প্রথমবারের মতো অবাধে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে
করোনাভাইরাস। যে পরিস্থিতি দেশটির চিকিৎসা ব্যবস্থাকে তার সীমাবদ্ধতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
তিয়ানজিন মেডিকেল ইউনিভার্সিটি জেনারেল হাসপাতালের হতাশা এবং দুর্দশার দৃশ্যের কয়েকটি ভিডিও নিউইয়র্ক টাইমস যাচাই করেছে। তার মধ্যে একটিতে ক্রমবর্ধমান সংকটের প্রতিফল দেখা গেছে।
করোনা আক্রান্তের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামনের সারিতে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীরাও তাদের নিজেদের মধ্যে ব্যাপক সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করছেন। কিছু হাসপাতালে অনেক স্বাস্থ্যকর্মী
করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন বলেছেন, যে তারা পাঁচ বা তার বেশি সহকর্মীর কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন।
হাসপাতালে রোগী সামলাতে পর্যাপ্ত কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন সেটি নিশ্চিত করতে কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো কাজে যোগ দেওয়ার আগে চিকিৎসক-নার্সদের কোনো পরীক্ষা করাতে হবে না।
উহানের কেন্দ্রীয় শহরের একজন চিকিৎসক বলেছেন যে তার হাসপাতাল প্রায় কর্মীশূন্য হয়ে গিয়েছিল, যে কারণে তার বিভাগের একজন নিউরোসার্জনকে সম্প্রতি কোভিডের লক্ষণগুলোর সঙ্গে লড়াই করার পরও এক দিনে দুটি অস্ত্রোপচার করতে হয়েছিল।
ডা. জুডি পু বলেন, তার ওয়ার্ডে সাধারণত ১০ থেকে ১৫ নার্স থাকে। সেটি দুটিতে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, ‘আমার চারপাশের প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ সংক্রমিত হয়েছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে উহান থেকে আবির্ভূত হওয়ার সময় চীন ছিল প্রথম কোভিডের আতঙ্কের অভিজ্ঞতা অর্জনকারী দেশ। তারপর গত তিন বছর ধরে দেশটি ব্যাপকভাবে ব্যাপক পরীক্ষা, কঠোর
লকডাউন এবং সীমান্ত বন্ধের মাধ্যমে ভাইরাসটিকে দমন করেছে। সরকার ওষুধ মজুত করে এবং সংকটকালের জন্য আরও কেয়ার ইউনিট তৈরি করে তার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে দীর্ঘ এই সময় ব্যবহার করতে পারত। এটি লাখ লাখ দুর্বল প্রাপ্তবয়স্কদের টার্গেট করে একটি বিশাল টিকাদান কর্মসূচি চালু করতে পারে, যারা জ্যাব বা বুস্টার নিতে অনিচ্ছুক ছিলেন। চীন এর সামান্যই করেছে, যে কারণে আবারও সংকটের মধ্যে ডুবে গেছে, যেমনটি উহানের প্রথম দিকে ঘটেছিল।