Inqilab Logo

বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পথের কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া জান্নাত লাভের একটি সহজ আমল

মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

লোকটি ইতোপূর্বে কখনো কোনো নেক আমল করেনি। (না সালাত আদায় করেছে, না রোযা রেখেছে। না আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, না দান-সদকা করেছে। না রাত জেগে কুরআন তিলাওয়াত করেছে। কিছুই না) কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিলেন। কেন? কারণ পথ থেকে একটি কাঁটাদার গাছের ডাল সে সরিয়ে দিয়েছিল। আল্লাহ তার কাজটির মূল্যায়ন করেছেন। তাকে জান্নাত দান করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ : ৫২৪৫)।

এমন এক ব্যক্তির গল্প শুনিয়ে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবীদের পথের কষ্ট দূর করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। কারণ নিরাপদ পথের প্রয়োজনীয়তা আমাদের সমাজবদ্ধ জীবনে সকলের জন্যই অনস্বীকার্য। এ জন্য নবীজী যেমন উৎসাহিত করেছেন, অবহেলার জন্য ভীতিও প্রদর্শন করেছেন।
কুরআন-সুন্নাহ্য় ঈমানের অনেক শাখা-প্রশাখার কথা এসেছে। ঈমানের পূর্ণতার জন্য সেগুলো নিজের মাঝে ধারণ করতে হবে। পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়াও ঈমানের একটি শাখা। রাসূলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেন : ঈমানের সত্তরোর্ধ্ব কিংবা ষাটোর্ধ্ব শাখা রয়েছে। তন্মধ্যে শ্রেষ্ঠতম শাখা হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা আর সবচেয়ে সাধারণ শাখা রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া। (সহীহ মুসলিম : ৩৫)। অর্থাৎ ঈমানের ন্যূনতম দাবি, চলার পথে সাধ্যানুযায়ী কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া। এটি আমার নাজাতেরও কারণ হয়ে যেতে পারে!

পথের কষ্ট বিভিন্নভাবে হতে পারে। চলার পথে কোনো গর্তে পড়ে পা মচকে যেতে পারে। পড়ে থাকা কোনো কাঁটা বা ভাঙা কাঁচের টুকরো কারো পায়ে বিঁধে যেতে পারে। ইটের টুকরা বা শক্ত কোনো কিছুতে কেউ হোঁচটও খেতে পারে। পড়ে থাকা কোনো ফলের খোসা কিংবা পলিথিনে কারো পা পিছলে যেতে পারে। ময়লা-আবর্জনা বা দুর্গন্ধযুক্ত কোনো কিছু পথিকের কষ্টের কারণ হতে পারে। এমনকি দৃষ্টিকটু কোনো বিষয়ও অন্যদের কষ্ট ও বিরক্তির কারণ হতে পারে। তাই ইমাম নববী রাহ. বলেন : কষ্ট দ্বারা উদ্দেশ্য, পাথর, মাটির টুকরো, কাঁটাসহ কষ্টদায়ক সবকিছু। (শরহু মুসলিম, নববী ২/৬)।

তাছাড়া এটি আপেক্ষিক বিষয়ও বটে। কারো জন্য কষ্টের, আবার কারো জন্য কষ্টের নাও হতে পারে। কষ্টের ধরন এক সময় হতে পারে স্বাভাবিক সহনীয়, আরেক সময় অস্বাভাবিক ও অসহনীয়। কোনোটা দেখতে দৃষ্টিকটু হওয়ার কারণে কষ্টদায়ক, কোনোটা চলতে গেলে কষ্টের কারণ হয়। আবার কোনোটা বড়দের কষ্ট না হলেও ছোটদের জন্য কষ্টকর।

আমাদের উসতাযের মুখে শুনেছি, ‘রাস্তায় এক টুকরা টিস্যু পেপার পড়ে থাকতে দেখে কারো জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে, আবার কারো গোবর দেখেও কোনো সমস্যা না হতে পারে। কাজেই আমাদের সরিয়ে ফেলতে হবে সবকিছু, যাতে কোনো ধরনের দৃষ্টিকটু জিনিস চোখে না পড়ে।’ আসলে ইসলামের শিক্ষা মেনে চললে সবরকম কষ্টদায়ক বস্তু থেকেই পথঘাট মুক্ত থাকবে।

অনেকে দান করে কমবেশি আমরা সদাকার সওয়াব লাভ করি। যদিও সেটি সদাকার প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ উপায়, কিন্তু এর বাইরেও সদাকার সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কিছু পথ রাসূল (সা.) আমাদের বাতলে দিয়েছেন। একটি হলো পথের কষ্ট দূর করা। সদাকার মাধ্যমে যেভাবে সদাকা-গ্রহীতার প্রতি উপকার ও কল্যাণ পৌঁছে দেয়া হয়, পথের কষ্ট দূর করা ও পথচারীর নিরাপদ পথ চলা সহজ করার মাধ্যমেও আমার পক্ষ থেকে পথচারীর প্রতি এক ধরনের কল্যাণ পৌঁছানো হয়। তাই রাসূল (সা.) বলেন : পথের কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেয়া সদাকা। (সহীহ মুসলিম : ১০০৯)।

এক হাদিসে নবীজী স. পথের কষ্টদায়ক কিছু বস্তুর নাম ধরে ধরেও বলেছেন- পথ থেকে এগুলো সরিয়ে দেয়া সদাকা। ইরশাদ হয়েছে : রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা, হাড্ডি সরানোও সদাকা। (জামে তিরমিযী : ১৯৫৬)।
আমাদের গন্তব্য জান্নাত। জান্নাত আমাদের স্বপ্ন ও ঠিকানা। মুমিনের সকল কাজই হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভের আশায়। পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে শান্তিতে মানুষের চলাফেরার ব্যবস্থা করলে জান্নাতেও থাকা যায় সুখে-শান্তিতে। আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : আমি জান্নাতে এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম, খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে ও সুখে-শান্তিতে ঘোরাফেরা করছে। কারণ সে রাস্তা থেকে একটি গাছ কেটে ফেলে দিয়েছে, যা মানুষকে কষ্ট দিত। (সহীহ মুসলিম : ১৯১৪)।
আসুন, আমরা সচেতন হই! নবীজীর শিক্ষা অনুযায়ী আমল করি। তাহলে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন, জান্নাতে দাখিল করবেন।



 

Show all comments
  • Ismail Sagar ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:১৮ এএম says : 0
    পৃথিবীতে মানুষের জন্য আবশ্যকীয় বিষয়গুলোর অন্যতম একটি পথ বা রাস্তা। পার্থিব প্রয়োজনে মানুষকে বাড়িতে প্রবেশ ও বের হওয়া, বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত ইত্যাদি কারণে রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। মানুষের চলাচলের এই রাস্তাকে নিরাপদ, নির্বিঘœ ও নিষ্কণ্টক করাই ইসলামের নির্দেশ।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Parves Hossain ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:১৯ এএম says : 0
    কোনো কোনাে মানুষ পথ বা রাস্তায় কৃত্রিম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে অন্যকে বিপদে ফেলে, যা ইসলামে বৈধ নয়। রাস্তায় চলাচল বা অবস্থান করার ক্ষেত্রে বিশেষ শিষ্টাচার রয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Rabbul Islam Khan ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:১৯ এএম says : 0
    যেসব শর্তে রাস্তায় বসা, সভা করা বা সমবেত হওয়ার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে তার মধ্যে এটি অন্যতম যে, পথচারীকে চলাচলের সময় কোনোরূপ কষ্ট দেওয়া যাবে না। পথচারী স্বাচ্ছন্দ্যে, বাধাহীনভাবে পথ চলবে। রাস্তা কোনোভাবেই বন্ধ করে দেওয়া কিংবা সংকুচিত করার সুযোগ নেই বরং পথচারীর কষ্ট হয়, এমন জিনিস রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলাই ঈমানের অংশ।
    Total Reply(0) Reply
  • Golam Kibria ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:১৯ এএম says : 0
    রাস্তায় ময়লা-আবর্জনা ফেলে কষ্ট দেওয়া, রাস্তায় গাছের গুড়ি ফেলা, টায়ার জ্বালানো, অহেতুক রাস্তা বন্ধ করা, রাস্তা কেটে রাখা, ফলের খোসা-ময়লা-আবর্জনা ও উচ্ছিষ্ট খাবার ফেলা, পানের পিক ফেলা, দুর্গন্ধ ছড়ায় এমন কোনো জিনিস ফেলে রাখা, দোকান বা হোটেল পরিষ্কার করে ময়লা রাস্তায় ফেলা, গ্যারেজ পরিষ্কারের ময়লা পানি রাস্তায় ঢেলে দেওয়া, রিজার্ভ পানির ট্যাঙ্কি পরিস্কার করে ময়লা পানি রাস্তায় ফেলা, ছাদ থেকে পানি নিষ্কাষণের পাইপ রাস্তায় দেওয়া, ইট-বালু, সুরকি-পাথর, রড ইত্যাদি বাড়ি নির্মাণসামগ্রী রাস্তায় স্তূপ করে রাখা; এসব কষ্ট দেওয়ার নানা উপায়।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Parves Hossain ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:২০ এএম says : 0
    আল্লাহপাক আমাদের আমল করার তৌফিক দিন। আমিন!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন