পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রপ্তানি আয়ের শক্তিশালী এ খাতকে ধ্বংস করতে পারলেই অর্থনৈতিকভাবে দেশকে পেছনে ফেলা যাবে : বিজিএমইএ
স্টাফ রিপোর্টার : গ্রামীণ জনপদে ‘অর্থনৈতিক বিপ্লব’ ঘটে গেছে। মঙ্গা অঞ্চল হিসেবে পরিচিত উত্তরাঞ্চলের রংপুরে এখন মঙ্গা ‘শব্দ’ উঠে গেছে। কার্তিক-চৈত্র মাসে খাদ্যাভাবে যে সব মানুষকে ‘উপোষ’ থাকতে হতো; তারা এখন হাজার হাজার, লাখ লাখ টাকার মালিক। পল্লী কবির ‘আসমানী’র ঘর যাদের ছিল ঠিকানা; তারা এখন টিনের ঘর-সেমি পাকা ঘরে বাস করছেন। সারাদেশের পল্লীগ্রামের মানুষের এই পরিবর্তনের নেপথ্যে রয়েছে গার্মেন্টস শিল্প। গ্রামের মেয়ে এবং অশিক্ষিত-অল্প শিক্ষিত তরুণ-যুবকরা গার্মেন্টসে কাজ করে টানাপোড়েনের সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা ফেরানোর পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত শক্ত করছে। প্রবাসী শ্রমিকদের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদেশ থেকে যে রেমিটেন্স আসছে তার অন্যতম খাত হলো গার্মেন্টস শিল্প। প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের তৈরি পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক অর্থ আয় করছে। দুনিয়াব্যাপী অস্থিরতার মধ্যেও যে তৈরি পোশাক রফতানিতে দেশ সাফল্যের শিখরে সেই গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংসের চেষ্টা হচ্ছে। পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান শ্রমিকদের দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে ইনকিলাবকে বলেন, এই দাবি শুধু তাদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবি বলে মনে হচ্ছে না, এর পিছনে দেশি-বিদেশি যড়যন্ত্র আছে।
দেশের মোট রফতানি আয়ের শতকরা ৮০ সতাংশ আসে রফতানি পোশাক শিল্প থেকে। আমেরিকার জিএসপি স্থগিত এবং ইউরোপের বাজারে নানা টানাপোড়েনের মধ্যেও গতবার ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার আয় হয়েছে তৈরি পোশাক রফতানী করে। দেশের তৈরি পোশাক আশির দশকে আমেরিকা ও ইউরোপে রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন শুরু হওয়ার পর থেকেই গার্মেন্টস শিল্পের ওপর শকুনি দৃষ্টি পড়ে। দেশি বিদেশি চক্র গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে। ৩০/৩৫ ধরে সে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। মাঝে মাঝেই শিল্পকে অস্থির করে তোলা হয়। কখনো শ্রমিকের বেতন বৃদ্ধির দাবির অজুহাতে; কখনো কর্মপরিবেশ সৃষ্টির ইস্যুতে। চক্রটি চায় দেশের গার্মেন্টস শিল্পের বাজার বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে। আর একাজে তারা ব্যবহার করে কিছু শ্রমিক পরিচয়ধারী নেতা, এনজিও এবং অখ্যাত বাম নেতাদের। বাস্তবতা হলো শ্রমিকরা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে যথেষ্ট আন্তরিক। গার্মেন্টস শিল্পের প্রকৃত চিত্র হলো যে সব শ্রমিকদের উত্তপ্ত করে এসব আন্দোলনে নামিয়ে গার্মেন্টস ভাংচুর করা হয় সে সব শ্রমিক প্রকৃত কারণ জানেনই না। উস্কানীমূলক কথাবার্তা বলে ভুল বুঝিয়ে কিছু এনজিও এবং তথাকথিত শ্রমিক নেতা খেটে খাওয়া শ্রমিকদের ক্ষুব্ধ করে তোলেন। অতীতে গার্মেন্টস শিল্পে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া এবং ভাংচুরের ঘটনার পর সাধারণ শ্রমিকরা জানান, তারা ষড়যন্ত্রের শিকার। মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং ভুল বুঝিয়ে তাদের রাস্তায় নামানো হয়েছে। সাধারণ গার্মেন্টস শ্রমিকরা কখনোই রুটি-রুজির প্রতিষ্ঠানের ধ্বংস চান না। পরে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, দেশের গার্মেন্টস শিল্পকে ধ্বংস করতে কিছু শ্রমিক নেতা দেশি বিদেশি চক্রের ইন্ধনে শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে রাস্তায় নামায়। পর্দার আড়ালে কিছু এনজিও অর্থ ব্যয় করে শ্রমিকদের আন্দোলন বেগবান করে। পুরনো সেই ষড়যন্ত্র হঠাৎ শুরু হয়েছে। দুর্মূল্যের বাজারেও দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে ‘স্থিতিশীলতা’ আসছে, গরীব ঘরের মেয়েরা স্বাবলম্বী হচ্ছে; তখন গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। আমেরিকার জিএসপি স্থগিতের পর ইউরোপের বাজার যখন ধরে রাখা যখন চ্যালেঞ্জের মুখে তখন হঠাৎ শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নামানো হয়। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ইতোমধ্যেই ৫৫টি গার্মেন্টস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে লক্ষাধিক শ্রমিকের কাজ হারানোর উপক্রম হয়েছে। ষড়যন্ত্র করে সাধারণ শ্রমিকদের মাঠে নামানোর কারণে ১২১জন তথাকথিত শ্রমিক নেতাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। পোশাক কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাভারে পোশাক কারখানায় সাভারের আশুলিয়ায় ১৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
১০দিন আগে আশুলিয়া এলাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ বাড়ানোর দাবি সম্বলিত লিফলেট ছড়িয়ে দেয় একটি চত্রু। বেনামে ছড়িয়ে দেয়া ওই লিফলেটের জের ধরে এরপর থেকেই একটি দুটি করে কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করে। কিছু শ্রমিককে নিয়ে ওই এলাকায় একটি সমাবেশও করা হয়। তারপর থেকেই আশুলিয়া এলাকায় ব্যাপক ভাবে শ্রমিক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ রহস্যজনক ও উদ্দেশ্যমূলক শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে সমগ্র গার্মেন্টস শিল্পে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান শ্রমিকদের দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে ইনকিলাবকে বলেন, এই আন্দোলনের পিছনে দেশি-বিদেশি যড়যন্ত্র আছে। কারণ, দেশের রপ্তানি আয়ের শক্তিশালী এ খাতকে ধ্বংস করতে পারলেই অর্থনৈতিক ভাবে দেশেকে পিছনে ফেলা যাবে। তিনি আরো বলেছেন, এমনিতেই আমরা অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে পার হচ্ছি। এই অবস্থা চলতে থাকলে আমরা রপ্তানি বাজার হারাব। আন্দোলনের পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধন আছে কি না তা খুঁজে বের করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল এলাকায়। আন্দোলনের ঘটনায় একটি কারখানার ১২১ জন শ্রমিককে দোষী সাব্যস্ত করে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। আশুলিয়া থানায় ২৪৯ জন শ্রমিককে আসামী করে পৃথক দুটি মামলাও হয়েছে। গতকাল সকালে কারখানায় এসে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিস দেখে ফিরে গেছেন বন্ধ কারখানাগুলোর অনেক কর্মী। তারা যেন সড়কে জটলা না করেন, সেজন্য মাইকিং করে পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আশুলিয়ায় ১৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
আন্দোলনের কারণে রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসা এ খাতে বড় ধরনের অশনি সংকেটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে মনে করে সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছে, এটা শুধু শ্রমিক আন্দোলন নয়, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করাই এ আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য। এদিকে রানা প্লাজা ট্রাজেডিসহ বেশ কিছু ঘটনার কারণে দেশের প্রায় ৩০০ টি কারখানার সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদ করেছে বিদেশি দুইটি ক্রেতাজোট অ্যালায়েন্স ও অ্যার্কড। তবে এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠার দ্বার প্রান্তে এসে আবার নতুন বাধা সৃষ্টি করছে শ্রমিকরাই।
এদিকে শ্রম আইন অনুযায়ী, শ্রমিকদের বেতন বাড়নোর নিয়ম অনুসারে প্রতি পাঁচ বছর পর পর বেতন বাড়ানো হয়। এখন মাত্র তিন বছর পার হয়েছে। এই হিসাবে আর দুই বছর পর বেতন বাড়ানোর সময় হবে। তবে সময় না হলেও বেতন বাড়নোর আন্দোলন শ্রমিকদের একটি পক্ষ উদ্দেশ্য মূলক ইন্ধনের কারণে করছে বলে গার্মেন্ট সংশ্লিষ্টের পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে। এদিকে আশুলিয়া শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ থেকে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের এ আন্দোলন শ্রম আইনসম্মত নয়, বরং শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে কেউ কেউ হঠকারিতার আশ্রয় নিয়েছে।
কয়েকদিন আগে সংবাদ সম্মেলনে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুও আশুলিয়ার পোশাক শ্রমিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেন। গত রোববার ও সোমবার শ্রমমন্ত্রীর আশ্বাস পাওয়ার পর একটা পক্ষ আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করলেও মঙ্গলবার সকালে ফের আন্দোলনে নামে শ্রমিকদের বড় একটা অংশ।
পরিস্থিতি সামলাতে পরে নৌ পরিবহন মন্ত্রীর মিন্টো রোডের বাসায় চার মন্ত্রী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা, গার্মেন্টস মালিক ও শ্রমিক নেতাদের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সব কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবে বলে শ্রমিকনেতারা আশ্বস্ত করেন। কিন্তু তারপরও কাজে যোগ দেয় না তারা। বরং আরো বেশকিছু কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি দেয়া শ্রমিকদের সঙ্গে যোগ দেয়। বিজিএমইএ পক্ষ থেকে বলা হয়, মালিকপক্ষ ও সরকারের কাছে বার বার সমঝোতার প্রতিশ্রুতি দিয়েও শ্রমিকরা অযৌক্তিক কারণে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা কার্ড পাঞ্চ করে চলে গেছে। তাই কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শিল্পাঞ্চল পুলিশের মহাপরিচালক আব্দুস সালাম বলেছেন, আন্দোলনের প্রথম দিকে প্রায় সাড়ে চার হাজার লিফলেট তারা জব্দ করেছে। ধারণা ছিল, শ্রমিকরা ভুল বুঝতে পেরে কাজে ফিরবে। গত সপ্তাহ জুড়ে বিভিন্ন ভাবে শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু পরিস্থিতি উন্নতির পরিবর্তে ক্রমেই অবনতির দিকে যেতে থাকে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্পশ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, কিছু লোক ন্যূনতম মজুরি ১৫ হাজার টাকা করাসহ ১৬ ও ২০ দফার দাবিতে শ্রমিকদের মধ্যে প্রচারপত্র বিলি করেন। প্রচারপত্রে তিন বছর পর মজুরি বাড়ানোর ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এরপরই শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয়।
এ অবস্থায় বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে, পোশাক শিল্প নিয়ে যারা চক্রান্ত করছেন, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিন। যদি প্রয়োজন মনে করেন, সংসদে নতুন আইন প্রণয়ন করে অর্থনীতি ধ্বংসকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন, যাতে কেউ শিল্প নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। সে সঙ্গে কারখানা চালাতে নিরাপত্তা দিন। নিরাপত্তা না পেলে কারখানা খোলা রাখা সম্ভব হবে না।
যেভাবে আন্দোলনে শুরু:
বেতন বাড়ানো দাবিতে ১২ ডিসেম্বর আন্দোলন শুরু করে আশুলিয়া এলাকার পোশাক শ্রমিকরা। ১৪ ডিসেম্বর তা আরো কয়েকটি কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। আশুলিয়ার ডিজাইনার জিন্স, শেড গ্রুপ, সেতারা গ্রুপ, স্টার্লিং ক্রিয়েশন, উইন্ডি গ্রুপ, হলিউড গার্মেন্টস ও এএম ডিজাইনের শ্রমিকরা ১৬ হাজার টাকা ন্যুনতম মজুরির দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন। ওইদিনই হলিউড গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ কারখানা ছুটি ঘোষণা করলে প্রতিষ্ঠানটির সব শ্রমিক রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। পরদিন ওই সাত কারখানার সঙ্গে আরো দুই কারখানা দ্য রোজ ড্রেসেস লিমিটেড ও নেক্সট কালেকশনের শ্রমিকরা একই দাবিতে কাজ বন্ধ রাখেন। ওইদিনই শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হকের সঙ্গে বৈঠক করে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের সিদ্ধাস্ত নেন আশুলিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন কারখানার আন্দোলনরত শ্রমিক নেতারা। কিন্তু তার পরও অচলাবস্থার নিরসন হয়নি।
গত মঙ্গলবার সকালেও শিল্পাঞ্চলের প্রায় ১৫টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করে কিছুক্ষণ পরই বের হয়ে আসেন। টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভও করতে থাকেন তারা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রায় ১৫টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরে বিকালে মঙ্গলবার এসব কারখানাসহ আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের মোট ৫৫টি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেয় বিজিএমইএ। শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী, বন্ধের সময় কোন শ্রমিক বেতন পাবেন না।
২৪৯ শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা ঃ
আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় উইন্ডি এ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার মুল ফটকে ১২১ জন শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত করা হইলো লেখা রঙ্গিন ছবি সম্বলিত নোটিশ সাটানো রয়েছে। তবে পুলিশ শ্রমিক বরখাস্তের কোন খবর জানেন না বলে জানিয়েছেন। নোটিশে লেখা রয়েছে-নি¤œলিখিত তালিকাভুক্ত শ্রমিক গণকে বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ২৩ (৪) ধারা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের চাকুরী হইতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হইলো। তবে নোটিশের নীচে কারও কোন স্বাক্ষর কিংবা কোন নাম লেখা নেই।
কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা একে এম ফজলুল হকের সাথে মুঠফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, কারখানার ভিতরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির করেছে এমন ১২১ জন শ্রমিককে মঙ্গলবার রাতে ‘ব্লাক লিষ্ট’ করেছে কর্তৃপক্ষ। তাদেরই ছবি সম্বলিত নোটিশ দেয়া হয়েছে। তবে নোটিশে কারও স্বাক্ষর কেন নেই জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা কর্তৃপক্ষের বিষয়। তবে যাদের ছবি নোটিশে রয়েছে তাদের সকলের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানায় ডাকযোগে সাময়িক বরখাস্তের চিঠি আজ (বুধবার) পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে ২৪৯ শ্রমিকের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। একটি মামলায় দুই শ্রমিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।বুধবার সকালে উইন্ডি এ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বাদী হয়ে একটি মামলা বুধবার সকালে উইন্ডি এ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বাদী হয়ে একটি মামলা ও ফাউনটেন গামের্ন্টস কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) নাজমুল হক বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন। উইন্ডি এ্যাপারেলস কারখানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ রানা জানান, মামলায় ২১ জনের নাম উল্লেখ ও দেড়শ’ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে। এদের মধ্যে মাসুদ ও বাকের নামের দুই শ্রমিককে জামগড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) একেএম শামীম হাসান জানান, দুই কারখানা কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার মধ্যরাতে থানায় অভিযোগ দেন। পরে বুধবার সকালে মামলা দুটি নথিভুক্ত করা হয়। কারখানার ভিতরে ভাংচুর, অসন্তোষ সৃষ্টির পায়তারা, শ্রমিকদের উস্কিয়ে দেয়ার অভিযোগে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের সনাক্ত করে কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত: সর্বনিম্ন বেতন ১৬ হাজার টাকা করার পাশাপাশি বিভিন্ন দাবিতে দশ দিন আগে আন্দোলন শুরু করে শ্রমিকরা। তাদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে- কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, দুপুরে খাবার ও যাতায়াত ভাতা বৃদ্ধি, ছুটির দিনের কাজের ওভার টাইম বিল দ্বিগুণ করা, যখন-তখন শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করা, কর্মক্ষেত্রে মৃত্যু হলে চাকরির বয়স পর্যন্ত আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ, তাজরিনসহ সব কারখানায় দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করা, শিল্পাঞ্চলে সরকারি স্কুল-কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ এবং নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।