মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
উত্তর আমেরিকা জুড়ে যে ভয়ংকর তুষার ঝড় বয়ে যাচ্ছে তাতে এ পর্যন্ত অন্তত ৬২ জন মারা গেছে এবং এর মধ্যে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রাজ্যেই ২৮ জন মারা গেছে। বেশিরভাগ মৃত্যু ঘটেছে বাফেলোতে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
উত্তর আমেরিকা জুড়ে এ তুষার ঝড় শুরুর পর থেকে কয়েক হাজার মানুষ এখনো বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছে। বাফেলো শহরের কর্মকর্তারা বলছেন শহরটিতে গাড়ী চালনা বন্ধ রাখা হয়েছে এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে মিলিটারি পুলিশ আনা হয়েছে। তুষার ঝড়ের কারনে দেয়া জরুরি অবস্থার মধ্যেই বেশ কিছু জায়গা থেকে লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে। এর আগে নিউইয়র্ক রাজ্যের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অনেক মানুষ দুদিনের বেশি সময় ধরে তাদের গাড়িতেই আটকে পড়েছিলেন তাদের জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর ঝড়ের মুখে পড়ার পর।
আবহাওয়াবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছেন যে, নিউ ইয়র্কে আরও প্রায় নয় ইঞ্চি তুষারপাত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিউ ইয়র্ক রাজ্যকে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সহায়তা দেয়ার জন্য একটি জরুরি ঘোষণা অনুমোদন করেছেন। এই টুইট বার্তায় তিনি বলেন, “যারা এই ছুটির মধ্যে প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমার সমবেদনা।”
নিউ ইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর ক্যাথি হচুল এই ঝড়কে এই শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ংকর তুষার ঝড় বলে বর্ণনা করেছেন। বাফেলো হচ্ছে ক্যাথি হচুলের নিজের শহর।“এখানকার অবস্থা এখন যুদ্ধক্ষেত্রের মতো, রাস্তার ধারে যত গাড়ি আটকে পড়েছে, তা দেখলে আঁতকে উঠতে হয়।” তিনি বলেন, অনেক জরুরি সেবা সংস্থার গাড়ি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে পৌঁছাতে পারেনি, অথবা নিজেরাই তুষারের মধ্যে আটকে পড়েছে।
একটি স্থানীয় পরিবার, যাদের দুই হতে ছয় বছর বয়সী শিশু সন্তান আছে, তারা তুষারের মধ্যে আটকে পড়ার ১১ ঘণ্টা পর ক্রিসমাসের দিন গভীর রাতে তাদের উদ্ধার করা হয়। জিলা সানটিয়াগো পরে সিবিএস নিউজকে বলেন, “আমি আশা একদম ছেড়ে দিয়েছিলাম।” তিনি গাড়ির ইঞ্জিন চালু রেখে নিজেকে উষ্ণ রেখেছিলেন। যে ভয়ংকর দুর্যোগের মধ্যে তারা ছিলেন, সেটি থেকে বাচ্চাদের মন অন্যদিকে সরাতে তিনি গাড়িতে তাদের সঙ্গে গেম খেলে সময় কাটান।
মেরিল্যান্ডের গেইথার্সবার্গের বাসিন্দা ডিটজাক ইলুঙ্গা সিবিএস নিউজকে জানান, তিনি মেয়েদের নিয়ে অনটারিওর হ্যামিলটনে তার আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। পথে তার গাড়িটি বাফেলোর কাছে তুষারে আটকে পড়ে। গাড়ির ইঞ্জিন চালু রেখে সেখানেই বহু ঘণ্টা তারা অপেক্ষা করেন। কিন্তু তারপর ভয়ংকর তুষার ঝড়ের মধ্যেই হেঁটে তারা কাছাকাছি এক আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার মরিয়া সিদ্ধান্ত নেন।
ডিটজাক ইলুঙ্গা তার ছয় বছর বয়সী কন্যা ডেসটিনিকে পিঠে নেন, আর তার ১৬ বছর বয়সী কন্যা সিন্ডি তাদের পোষা কুকুরকে কোলে নেয়। এরপর তারা পায়ে হেঁটে আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে রওনা দেন। “আমরা যদি গাড়ির মধ্যে থেকে যেতাম, বাচ্চাদের নিয়ে সেখানেই হয়তো আমাদের মরতে হতো”, বলছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত পরিবারকে নিয়ে তিনি যখন আশ্রয় কেন্দ্রে ঢুকতে পারেন, তখন তিনি কাঁদছিলেন। “এই ঘটনার কথা আমি জীবনে ভুলবো না।”
বাফেলো শহরটি যে এরি কাউন্টির মধ্যে পড়েছে, সেখানকার একজন কর্মকর্তা মার্ক পোলোনকার্জ বলেন, “এই দুর্যোগ শেষ হতে যাচ্ছে এমন আশা তারা দেখছেন, তবে এখনো দুর্যোগ কাটেনি। এরকম ঝড় একটা প্রজন্ম একবারই দেখেছে।” স্থানীয় মেডিকেল এক্সামিনার অফিসের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, বেশিরভাগ মানুষ মারা গেছে তুষার সরাতে গিয়ে হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে। অনেককে তাদের গাড়ির ভেতর মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
তুষার গলে যখন আটকে পড়া গাড়িগুলো বেরিয়ে আসবে, বা দূর্গম এলাকার বাড়িঘরে ঢোকা সম্ভব হবে, তখন তার মধ্যে আরও অনেক মানুষকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। উত্তর আমেরিকার এবারের এই তুষার ঝড়কে ‘বম্ব সাইক্লোন’ বা সাইক্লোন বোমা বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। যখন বায়ুমণ্ডলের চাপ হঠাৎ কমে যায়, তখন ভারী তুষারপাতের সঙ্গে তীব্র ঝড়ো বাতাস শুরু হয়। এটিকেই সাইক্লোন বোমা বলে বর্ণনা করছেন আবহাওয়াবিদরা।
এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে যাতায়ত মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। কেবল গতকাল সোমবারই প্রায় চার হাজার ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামী কয়েকদিনে অবস্থা একটু ভালো হবে, তবে তারপরও লোকজনকে এই পরিস্থিতিতে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। গত সপ্তাহান্তে প্রায় আড়াই লাখ বাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। ঝড়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে যুক্তরাষ্ট্রের ভারমন্ট, ওহাইও, মিসৌরি, উইসকনসিন, কানসাস এবং কলোরাডো থেকেও।
যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মন্টানায় সবচেয়ে তীব্র শীত পড়েছিল, সেখানে তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল হিমাংকের ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে। কানাডার অনটারিও এবং কিবেক প্রদেশে সবচেয়ে ভয়ংকর তুষার ঝড় হয়েছে। অনটারিওর প্রিন্স এডওয়ার্ড কাউন্টিতে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।